‘জনসমুদ্র’ দেখাতে চট্টগ্রামে ফখরুলকে ‘দাওয়াত’ কাদেরের

“উনার মনটা বড় খারাপ, রংপুরে থেকে ঢাকার খবর শুনে।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2022, 03:53 PM
Updated : 31 Oct 2022, 03:53 PM

চট্টগ্রামে নিজেদের সমাবেশে বিএনপির চেয়ে কয়েক বেশি জনসমাগমের ঘোষণা দিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আর সেই সমাবেশ দেখতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ‘দাওয়াত’ও দিলেন তিনি।

জাতীয় নির্বাচনের এক বছর আগে দুই প্রধান দলের নেতারাই এখন সমাবেশে জনসমাগম নিয়ে বাকযুদ্ধে রয়েছেন। নিজেদের সাম্প্রতিক সমাবেশে জনসমাগম দেখিয়ে বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, জনগণ এই সরকারের পতন চাইছে।

ওবায়দুল কাদের সোমবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জোট শরিক দল জাসদের সমাবেশে বলেন, “নিজেরা কয়েকটা সমাবেশ করে লাফালাফি শুরু করেছেন, এখন মুখ কালা কেন? মির্জা ফখরুলের দিকে তাকানো যায় না, বিভাগীয় সমাবেশকে পেছনে ফেলেছে শুধু ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাম্মেলন।

“১০ লাখ টার্গেট, কত ছিল চট্টগ্রামে আপনাদের? যে কোনো নিরপেক্ষ লোক বলবে ৭০-৮০ হাজার। ডিসেম্বরের ৪ তারিখে চট্টগ্রামের পলো গ্রাউন্ডে হয়ে যাবে জনতার জনসমুদ্র। সেদিন ১০ লাখ লোক আপনারা মুখে বলবেন, আমরা বাস্তবে দেখাব। দাওয়াত দিচ্ছি, ফখরুল সাহেবদের, ৪ তারিখে চট্টগ্রাম আসুন। লোক কাকে বলে জনগণের সমুদ্র কাকে বলে, দেখেন নাই তো।”

ব্যক্তি আক্রমণ না করতে ফখরুলের আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় কাদের বলেন, “আক্রমণ করেছি, সেটা আসলে উনার ক্ষোভের কারণ নয়, উনার মনটা বড় খারাপ, রংপুরে থেকে ঢাকার খবর শুনে। মনটা খারাপ, বড় বিষণ্ন। তার অন্তরে অনেক জ্বালা, অনেক ক্ষোভ।

“নিজের দলের নেত্রীর জন্য দেখার মতো একটা মিছিলও করতে পারেননি। লজ্জা করে না? সেই নেত্রীর মুক্তি চান? যতটুকু সেটি শেখ হাসিনার দেওয়া। আপনারা কী করেছেন? জাতীয়তাবাদী চামচা দলের নেতৃবৃন্দদের বলতে চাই, আজকে কোন মুখে আপনারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চান?”

তারেক রহমানকে দেশে ফেরানোর স্বপ্ন বিএনপির কখনও পূরণও হবে না বলে হুঁশিয়ার করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, “ফখরুল সাহেব, এখন নেতা বানাবেন কাকে? হাওয়া ভবনের যুবরাজ বীরের বেশে কীভাবে আসবে? আর রাজনীতি করবে না বলে প্রকাশ্যে মুচলেকা দিয়ে বিদেশে গিয়ে যে পালিয়েছে, বাংলার মানুষ কি তাকে মেনে নেবে? এই নাম শুনলেই লোকে ভয় ভয় পায়। এই নাম শুনলেই মানুষ আতঙ্কে শিউরে যায়, কাজেই এই নামের বীরত্ব দেখিয়ে এই দেশের মানুষকে আর বিভ্রান্ত করবেন না।

“ইমাম খোমেনির মতো, ইমাম খোমেনি স্টাইলে হাওয়া ভবনের যুবরাজকে নিয়ে আসবেন? বাংলাদেশে ১০ ডিসেম্বর বিজয় মিছিল করে ক্ষমতার বন্দরে যাবেন? হায়রে কত দুঃস্বপ্ন, হায়রে স্বপ্ন, স্বপ্নরে স্বপ্ন, স্বপ্ন নয় খোয়াব... রঙিন খোয়াব, এই খোয়াব অচিরেই কর্পূরের মতো উবে যাবে।”

জাসদ প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে দলটিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আগামী দিনেও থাকার আহ্বান জানান কাদের। 

তিনি বলেন, “১৪ দল, ইনু ভাই আপনারা ঠিক থাকুন, ভুল-ত্রুটি রাজনীতিতে আপনাদেরও আছে। আমরা অভ্রান্ত, সেটাও আমি বলব না।

“কিন্তু আজ বাঙালি জাতির অস্তিত্বের প্রশ্ন। যারা বাংলার মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায় তারা আবারও ক্ষমতায় আসবে?”

বিএনপিকে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির ‘প্রধান ঠিকানা’ আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “মির্জা ফখরুল, কার প্রতিনিধিত্ব করছেন?

“আপনাকে বলতে চাই, আমরা ১৪ দল ঐক্যবদ্ধ। খেলা হবে... চৌদ্দ দলের, জাসদের মঞ্চ থেকে আমি আহ্বান জানাবো, বাংলাদেশকে বাঁচাতে এই দেশের মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হলে এই দেশের ক্ষমতার মঞ্চে বঙ্গবন্ধুকন্যা আদর্শের প্রতীক শেখ হাসিনাকে আবারও বসাতে হবে।”

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে এই সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপের ইসমাইল হোসেন, গণতন্ত্রী পার্টির শাহাদাত হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের অসিত বরণ রায়, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের রেজাউর রশিদ খান, জাসদের কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম, আনোয়ার হোসেন বক্তব্য রাখেন।