‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ চট্টগ্রাম থেকে বিএনপির আন্দোলন শুরু: ফখরুল

“আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। এর লক্ষ্য হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।”

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2022, 01:55 PM
Updated : 12 Oct 2022, 01:55 PM

চট্টগ্রামে জনসভার মধ্য দিয়ে বিভাগীয় সমাবেশ শুরু করল বিএনপি; একে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের’ আন্দোলনের সূচনা বললেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এই সমাবেশে তিনি বলেছেন, “চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকেই শহীদ জিয়া স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণা দিয়েছিলেন। এখানেই জিয়াউর রহমানের প্রথম সমাধি। এ চট্টগ্রাম থেকেই আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করছি।

“আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। এর লক্ষ্য হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। সে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠিত হবে।”

জাতীয় নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতে নির্দলীয় সরকারের দাবি পুনরায় তুলে বর্তমান সরকারকে হটানোর আন্দোলনে এখন বিএনপি।

সাম্প্রতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে হামলা, নিহতের ঘটনা এবং নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দেশের আট বিভাগে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে দলটি।

বুধবার বিকালে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে হয় প্রথম বিভাগীয় গণ-সমাবেশ, যাতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের মহাসচিব ফখরুল।

এই সমাবেশে চট্টগ্রাম ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের আশেপাশের মোট ১০ জেলা থেকে থেকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা যোগ দেন।

দুপুরে সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হন। একারণে নগরীর বিআরটিসি ও টাইগার পাস মোড় থেকে পলোগ্রাউন্ডমুখী সড়কে যান চলাচল অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে।

‘দেশকে শশ্মাণে পরিণত করেছে’

আওয়ামী লীগ দেশকে শশ্মাণে পরিণত করেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল তাদের হটাতে সবাইকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “এ সরকার অনির্বাচিত সরকার। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা ১৫৪ জনকে বিনা ভোটে জিতিয়েছে। ২০১৮ সালে বিনা ভোটে নির্বাচন করেছে। গত ১৪-১৫ বছরে তারা বাংলাদেশকে শ্মশানে পরিণত করেছে। এ শ্মশান কেন? আওয়ামী লীগের কারণে।’’

ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “তারা অর্থ লুটপাট করে বিদেশ পাচার করেছে, কানাডার বেগম পাড়ায় বাড়ি বানাচ্ছে। আর দেশের মানুষকে গরিব করে রেখেছে।

“তারা দেশের মানুষকে ১০ টাকায় চাল দেবে বলেছে, কিন্তু এখন চালের দাম ৭০ টাকা। চাল-ডাল-তেল সবকিছুর দাম চার-পাঁচগুণ করে বেড়েছে। আবার শুনছি বিদ্যুতের দামও বাড়াবে।

র‌্যাবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ তুলে ফখরুল বলেন, “শুধু র‌্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিলে হবে না, দিতে হবে শেখ হাসিনা সরকারকে। এ শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে এখানে মানবাধিকার নাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন বের হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে এখানে গুম হয়, বিচার বহির্ভূত হত্যা হয়। বিচার বিভাগও স্বাধীন নয়। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে যে সাজা দিয়েছে সেটা রাজনৈতিক সাজা। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে।”

তিনি বলেন, “তারা যে নির্বাচন কমিশন করেছেন তাদের ডিসি-এসপিরা মানেন না। তারা মানেন শেখ হাসিনাকে। তাদের দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।”

 ‘গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার লড়াই’য়ে জিততে সবাইকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “হয় জিতব, না হয় মরে যাব। তাছাড়া কোনো বিকল্প নাই।

“এ লড়াইয়ে জয় লাভ করতে না পারলে তাহলে এ দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের স্বাধীনতা থাকবে না। আমাদের ঔপনিবেশিকের মতো করে বাঁচতে হবে।”

‘বিএনপিকর্মীরা জেল ঘুরে খাঁটি সোনা হয়েছে’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমাবেশে বলেন, “চট্টগ্রামের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে, শেখ হাসিনার এখনই পদত্যাগ করা দরকার। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের একদিনও ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।”

বিএনপির আন্দোলনে জয়ের আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমাদের নেতা-কর্মীরা জেলঘুরে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। জীবন দেব, গণতন্ত্র আনব, শেখ হাসিনার পতন ঘটাব। দেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমে তাদের সরকার তৈরি করবে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, “গত ১৪-১৫ বছর ধরে বিএনপির উপর যারা নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছেন, তারা হুঁশিয়ার হয়ে যান।”

সরকারকে শ্রীলঙ্কার দিকে তাকানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “সেখানে জনগণ যখন জেগেছে, তখন তাদের পালাতে হয়েছে। শেখ হাসিনা হয়ত তার আত্মীয়-স্বজন দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পালাবেন। কিন্তু আপনাদের এই দেশে থাকতে হবে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “দেশে এখন গণতন্ত্র নাই, আছে শুধু শেখ হাসিনার ইচ্ছাতন্ত্র। এ ইচ্ছাতন্ত্র থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রয়োজন আরেকটি যুদ্ধ।”

বিএনপির নেতা-কমীরা আত্মরক্ষার জন্য হাতে লাঠি নিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “এ লাঠি কারও মাথায় বাড়ি দেবার জন্য নয়। আমরা আইনের পথে আছি। কীভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারকে প্রতিরোধ করতে হবে, তার সিদ্ধান্ত জনগণকেই নিতে হবে।

সমাবেশের সভাপতি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন বলেন, পুলিশ আর প্রশাসন দিয়ে এই সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে।

“৬৪ জেলায় তাদের (আওয়ামী লীগ) কোনো সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নেই। ওইসব জেলার ডিসি-এসপিরা সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছে।”

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।