চট্টগ্রামে ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ

এ ঘটনায় মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2023, 10:54 AM
Updated : 1 June 2023, 10:54 AM

চট্টগ্রামে অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও ভেজালবিরোধী সাম্প্রতিক একাধিক অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তকে ফোন করে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে দুটি ফোনকলে একই ভাষায় হুমকি দেওয়া হয় বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন।

ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তের ধারণা, মঙ্গলবার নগরীর চকবাজারে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন হিসেবে পরিচিত ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ কার্যালয় বন্ধ করার কারণে এ হুমকি দেওয়া হতে পারে।

খাজনা হালনাগাদ না করায় ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ কার্যালয়ে সেদিন তালা দেয় জেলা প্রশাসন। পরে সেখানকার মালামাল বুঝে নিতে নোটিস ঝোলানো হয়।

এছাড়া সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন স্থানে কয়েক দখলে থাকা একাধিক জমি মুক্ত করা ও ভেজালবিরোধী অভিযানেও নেতৃত্ব দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত।

প্রতীক দত্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি সরকারি দায়িত্ব পালন করেছি এবং করছি। অভিযানে অবৈধ দখলদার, জামায়াত-শিবির, ব্যবসায়ী- কারও হয়ত আঁতে ঘা লেগেছে।

“সকালে দুই দফায় ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে। গালিগালাজ করে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমার ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে চট্টগ্রামের প্রচলিত ভাষায় গালিও দেয়। দায়িত্ব পালন করতে গেলে হুমকি আসতে পারে, এতে আমি ভীত নই। আমার ধারণা, গত পরশুর অভিযানের কারণে এই হুমকি।”  

জানতে চাইলে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "অভিযানের সময় যে ম্যাজিস্ট্রেট এসেছিলেন তিনি এবং তার ঊর্ধ্বতনের সাথে আমরা কথা বলেছি। আমরা একটি নিবন্ধিত সমাজসেবা মূলক সংগঠন পরিচালনা করি। কার্যালয়ের জমির লিজ বহুবছর ধরে নবায়ন করেছি এবং খাজনা দিয়েছি।

"এর পরও আমরা আবেদন করেছি। উনারা আইনের লোক হয়ে আমাদের কোনো সময় না দিয়ে বা একদিন আগেও না জানিয়ে সেদিন এসেই অফিসে তালা দিয়ে দেয়। আমাদের মালামার বের করে দেয়। তারপরও আমাদের সাথে উনাদের কোনো সমস্যা হয়নি সেদিন।"

ফোনে হুমকির বিষয়ে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলে, "ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে কেউ ফোনে হুমকি দিয়ে থাকলে সেই টেলিফোন নম্বর তো উনার কাছে আছে। সে অনুসারে উনারা আইনগত ব্যবস্থা নিক। এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই।"

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক জানান, দুটি ফোন কলের প্রথমটি করা হয় সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে। একটি কল আসে অনলাইন নম্বর (+572582478) থেকে।

“কল রিসিভ করার পরই শুরুতে একাধিকবার গালি দেওয়া হয়। তারপর বলা হয়, তোরে জবাই করে দিব... বেশি কথা বলবি একদম জবাই করে দিব...। তুই কই থাকস, তোরে যেখানে পাব সেখানে গুলি করে দিব....। এরপর সকাল ৮টা ৪৮ মিনিটে আরেকটি মোবাইল নম্বর (+8801942206031) থেকে ফোন করে একই ভাষায় গালি ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় “

ঢাকায় অবস্থানরত প্রতীক দত্ত হুমকির বিষয়ে অনলাইনে জিডি করবেন জানিয়ে বলেন, “চট্টগ্রামে ফেরার পর মামলা করব।”

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, “আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তিনি অফিসের কাজে ঢাকায় আছেন।

“ঢাকা থেকে ফিরলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি তদন্ত করবে। এই ঘটনায় মামলা করা হবে। এখনই বলতে পারছি না কেন হুমকি দেওয়া হয়েছে। মোবাইল কোর্টের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা কেউ হুমকি দিয়ে থাকতে পারে। তদন্তের পরই বলা যাবে, কে বা কারা এটা করেছে। আমরা অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেব।”

চট্টগ্রামের চকবাজার থানার কাসিমপুর মৌজার ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ ভিপি সম্পত্তি (অর্পিত সম্পতি) ইজারা নিয়ে ১৯৭৭ সালে কার্যালয় স্থাপন করে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ। বছর ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে এসব জায়গা ইজারা নেওয়া হয়।

২০১৮ সাল থেকে পরিষদ লিজ নবায়ন করেনি এবং তাদের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ পরিস্থিতিতে তাদের লিজ বাতিল করা হয়। মঙ্গলবারের অভিযানে ওই সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

অভিযানে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন বই, ব্যানার, চাঁদার রশিদ ও বিপুল পরিমাণ সরকারবিরোধী বই জব্দ করা হয়েছিল।

আশির দশকে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করত ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী টানা তিন দশক এই তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে অংশ নিয়েছেন। পরিষদ কার্যালয়ের অদূরে চট্টগ্রাম কলেজের প্যারেড মাঠে এই মাহফিল আয়োজন করা হত।

Also Read: খাজনা না দেওয়ায় জামায়াতের ‘সহযোগী’ সমাজ কল্যাণ পরিষদ কার্যালয়ে তালা