“আমরা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট পরিদর্শন করে ফাটলগুলো দেখতে পেয়েছি; অনেকগুলো ফাটল সেখানে আমরা দেখেছি,” বলেন দুদক কর্মকর্তা ইমরান।
Published : 20 Feb 2025, 10:03 PM
স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে ফাটল ও আগের এমডির সময়ে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসায় অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর চার সদস্যের একটি দল ওয়াসা ভবনে অভিযান চালিয়েছে বলে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক সাঈদ মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানিয়েছেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “হালিশহরে যে স্যুয়ারেজ প্রকল্প চলমান আছে ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে। এই প্রজেক্টটা এখনও শেষ হয়নি। তার আগেই ওখানে যে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তার মধ্যে ফাটল দেখা গেছে।
“নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অনিয়ম, বিশেষ করে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার হয়েছে এ ধরনের অভিযোগ ছিল। আমরা সকালে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট পরিদর্শন করে ফাটলগুলো দেখতে পেয়েছি। অনেকগুলো ফাটল সেখানে আমরা দেখেছি।”
ওয়াসা ভবনে প্রকল্পের পরিচালকের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন দুদকের কর্মকর্তারা। ইমরান হোসেন বলেন, “উনি (প্রকল্প পরিচালক) জানালেন, ফাটলের বিষয়টি তিনি অবগত আছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, তা জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, প্রকল্পের কনসালটেশন ফার্মের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ফাটল সিল করার জন্য যে কেমিকেল ব্যবহার করা হবে, সেগুলো পরীক্ষার জন্য বুয়েটে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এখনও রিপোর্ট পাননি। রিপোর্টে রাসায়নিক যথাযথ পাওয়া গেলে ফাটলগুলো সিল করা হবে।”
নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে কিনা- এ প্রশ্নে দুদক কর্মকর্তা ইমরান বলেন, “এটি দেখে বোঝার উপায় নেই। এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন। তবে ফাটল দেখা গেছে। যে নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো ল্যাব টেস্টেড কিনা তা জানতে চেয়েছি। সেই কাগজপত্র উনারা আমাদের দিয়েছেন।”
চট্টগ্রাম ওয়াসারে সাবেক এমডি একেএম ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পাওয়ার কথা তুলে ধরেন ইমরান হোসেন।
তিনি বলেন, “এখানে যে এমডি (ফজলুল্লাহর) ছিলেন, তিনি গত প্রায় ১৫ বছর এই দায়িত্বে ছিলেন। তিনি দায়িত্বে থাকাকালে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ আছে। বিশেষ করে ২০২০ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার তৃতীয় তলায় একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
“অভিযোগ ছিল, ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটা আসলে সাজানো ছিল। অভিযোগ পেয়েছি এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব করা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে জানতে চেয়েছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমাদের দিয়েছেন। এটি আমরা বিস্তারিত স্টাডি করে বলতে পারব।”
সাবেক এমডি একেএম ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগের কথা বলেন দুদকের সহকারী পরিচালক ইমরান।
“অভিযোগ ছিল সাবেক এমডি স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে এখানে লোকবল নিয়োগ দিয়েছেন। উনার সময়ের বিশেষ করে শেষ ছয় মাসের যে নিয়োগ প্রক্রিয়া ও বদলির রেকর্ডগুলো আমরা চেয়েছি। এখনও পাইনি হাতে। পেলে যাচাই করে দেখতে পারব আসলে এখানে বদলি বা নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা।
“তবে আমরা একটা তথ্য পেয়েছি, এখানকার স্যুয়ারেজ প্রকল্পে এমডি সাহেবের ভাগিনা সরোয়ার জাহানের স্ত্রী এই প্রজেক্টে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। এই প্রজেক্টের যিনি প্রকল্প পরিচালক এবং নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন, অভিযোগ ছিল জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে যারা জুনিয়র ছিল তাদেরকে পদোন্নতি দিয়ে প্রজেক্টের পিডি করা হয়েছে। আমরা সচিব মহোদয়ের কাছে জেষ্ঠ্যতার তালিকা চেয়েছি। এটা বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে আমরা বলতে পারব জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হয়েছে কিনা।”
সাবেক এমডির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে কিনা, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “কিছুটা তো অনিয়ম অবশ্যই আছে। নিয়োগ সংক্রান্ত একটি তথ্য পেলাম ওনাদের একজন কর্মকর্তার কাছে।
“আরও কয়েকজন স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। এটা আসলে রেকর্ডপত্র যাচাই করে বলতে পারব। অনিয়ম হলে আমরা যথাযথ নিয়ম ও আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেব।”
স্যুয়ারেজ প্রকল্পের অভিযোগের বিষয়ে প্রকল্পটির পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, “কিছু অভিযোগ পেয়ে উনারা (দুদকের দল) এসেছেন। স্যুয়ারেজে উনারা কিছু এয়ারলাইন ক্র্যাকের বিষয়ে দেখতে গেছেন। আমাদের বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এগুলো দেখেছে।
“যেকোনো কংক্রিট স্ট্রাকচারে এয়ারলাইন ক্র্যাক হয়। এটা হতেই পারে। এটার মেরামতের স্ট্যান্ডার্ড মেথলডজি আছে। আমরা যথাযথ মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছি। সেটাই উনারা জানতে চেয়েছেন। এ সংক্রান্ত ডকুমেন্ট উনাদের দিয়েছি।”
ফাটলের কারণ হিসেবে উচ্চ তাপমাত্রার কথা তুলে ধরে আরিফুল ইসলাম বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি তখনই। তারপরও হয়েছে। এটা এয়ারলাইন ক্র্যাক। এটা স্বীকৃত। এখানে অনিয়মের কোনো বিষয় ছিল না।”
ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদুল আলম বলেন, “আমার কাছে আগের প্রকল্পগুলোর কনসালটেন্ট, ঠিকাদার ও ডোনার কারা ছিল সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে। এর তালিকা করে উনাদের দিয়েছি।
“প্রতিটি প্রকল্প ডোনর ফান্ডেড প্রজেক্ট। এসব প্রকল্পে আন্তর্জাতিক কনসালটেন্ট ও ঠিকাদার থাকে। এখানে কোনো ধরনের দুর্নীতির কোনো সুযোগই নেই। চট্টগ্রাম ওয়াসা শুধু নির্ধারিত প্যারামিটার অনুসরণ হচ্ছে কিনা তা দেখে। মন্ত্রণালয় এবং দাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করি আমরা। শতভাগ নিশ্চিত ওয়াসা দুর্নীতির সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়।”
পুরনো খবর
তিন দিনেও মেরামত হয়নি পাইপ, চট্টগ্রামের বড় অংশে পানির কষ্ট
চট্টগ্রাম ওয়াসা এমডি ফজলুল্লাহর নিয়োগ বাতিল
মামলা খারিজ, চট্টগ্রামে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজে 'বাধা নেই'
চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পের কাজ আটকে গেল
চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির দুর্নীতি: পদক্ষেপ জানতে চায় হাই কোর্ট
চট্টগ্রাম ওয়াসার ৯ বছরের এমডি ফজলুল্লাহকে ফের নিয়োগ
চট্টগ্রাম ওয়াসা এমডির দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে, আদালতকে দুদক