মামলা খারিজ, চট্টগ্রামে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজে ‘বাধা নেই’

চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজে অধিগ্রহণ করা জমি ফেরত চেয়ে করা মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে আদালত।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2022, 03:03 PM
Updated : 28 June 2022, 03:03 PM

চট্টগ্রামের তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ নুশরাত জাহান মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

এই আদেশের ফলে প্রকল্পের কাজে আর কোনো বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন ওয়াসার আইনজীবী।

অন্যদিকে বাদীপক্ষ বলেছে, তারা এ আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করবেন।

‘অধিগ্রহণ না হওয়া হালিশহরের কৃষি জমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির’ সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ এনামুল হক মুনিরী গত ৬ এপ্রিল এ মামলা করার পর এই প্রকল্পে অর্ন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল একই আদালত। পরে ওয়াসার আবেদনে তা তুলে নেওয়া হয়।

ওয়াসার আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওয়াসার পক্ষে মামলাটি খারিজের আবেদন করেছিলাম। এরপর বাদীপক্ষ গত ১৬ জুন তাদের লিখিত আপত্তি দাখিল করে। গতকাল দোতরফা শুনানি হয়। আজ আদালত তাদের মামলা খারিজের আদেশ দিয়েছেন।

“আজকের আদেশের পর প্রকল্পের কাজে এখন আর কোনো বাধা নেই।”

চট্টগ্রাম নগরীর মধ্য হালিশহরের চৌচালা এলাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য ১৯৬২-৬৩ সালে ১৬৩ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল ওয়াসা।

দীর্ঘদিনেও প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় অধিগ্রহণ করা জমি ফেরত চেয়ে ২০০১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করে স্থানীয়রা। ২০১৪ সালে হাই কোর্ট চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে নির্দেশ দেয়।

‘অধিগ্রহণ না হওয়া হালিশহরের কৃষি জমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির’ সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ এনামুল হক মুনিরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই আদেশের বিরুদ্ধে ওয়াসা লিভ টু আপিল করেছিল। তাতেও হাই কোর্টের আদেশ বহাল রাখা হয়।

“কিন্তু অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না করেই স্যুয়ারেজ প্রকল্প শুরু করায় আমরা জমি ফেরত চেয়ে এই মামলাটি করেছিলাম। এখন আদালত সে বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত না দিয়ে উল্টো আমাদের মামলার আবেদনই খারিজ করে দিয়েছেন।”

সৈয়দ মুহাম্মদ এনামুল হক মুনিরী বলেন, “আদেশের সার্টিফায়েড কপি পেলে আইনজীবীদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। আমরা এই আদেশের বিষয়ে জেলা জজ আদালতে আপিল করব। তারপর প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে যাব।”

গত এপ্রিলে বাদীর আইনজীবী আফরোজা আকতার জানিয়েছিলেন, এ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল ১৯৬২-৬৩ সালে। এরপর একবার ‘ডিরিকুইজিশন’ হয়েছিল।

কিন্তু তখন জমি ফেরত না দেওয়ায় ভূমি মালিকরা হাই কোর্টে রিট করেন। ওই রিটের আদেশে হাই কোর্টে বলেছিল, এই অধিগ্রহণ ‘যথাযথ হয়নি’। এরপরও জমি বুঝিয়ে না দেওয়ায় বাদী ভূমি মন্ত্রণালয়ে যান।

২০১৮ সালে মন্ত্রণালয় ‘ডিরিকুইজিশন অর্ডার’ এবং হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগের নির্দেশনার আলোকে ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু তারপরও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে স্যুয়ারেজ প্রকল্প শুরু হওয়ায় ২০২০ সালে এ মামলা করেন সৈয়দ মুহাম্মদ এনামুল হক মুনিরী।

২০১৩ সালে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে চট্টগ্রাম নগরীর ড্রেনেজ ও স্যানিটেশন মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। মহাপরিকল্পনায় পুরো নগরীকে ছয়টি জোনে ভাগ করে ছয়টি পয়ঃশোধনাগার এবং দুটি ফিকাল স্লাজ শোধনাগার স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার তায়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ পায়। এ বছর জানুয়ারি মাসে তাদের সঙ্গে চুক্তি করে ওয়াসা। এপ্রিলে প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়।

চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প (১ম পর্যায়) এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকার দিচ্ছে ৩৭৫৮ কোটি টাকা এবং ওয়াসা ৫০ কোটি টাকা দিচ্ছে।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিদিন ১০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য এবং ৩০০ ঘনমিটার ফিকাল স্লাজ পরিশোধন সম্ভব হবে; যা নগরীর মোট পয়ঃবর্জ্যের ২০ শতাংশ এবং ফিকাল স্লাজের ৪১ শতাংশ। পরে আরও পাঁচটি ধাপে পুরো নগরী পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আসবে।

পুরনো খবর