চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পের কাজ আটকে গেল

ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত এক মামলায় চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পের কাজে অর্ন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2022, 03:43 PM
Updated : 6 April 2022, 03:44 PM

‘অধিগ্রহণ না হওয়া হালিশহরের কৃষি জমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির’ সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ এনামুল হক মুনিরীর করা আবেদনে চট্টগ্রামের তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ নুসরাত জাহান বুধবার এ আদেশ দেন।

বাদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আফরোজা আকতার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ হাজির হয়ে এ বিষয়ে তাদের জবাব না দেওয়া পর্যন্ত প্রকল্পের কাজে অর্ন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। সেই পর্যন্ত কোনো কাজ করতে পারবে না ওয়াসা।”

প্রায় দুই মাস আগে নিষেধাজ্ঞার এ আবেদন করা হয়েছিল বলে জানান আইনজীবী আফরোজা।

চট্টগ্রাম নগরীর মধ্য হালিশহরের চৌচালা এলাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য ১৯৬২-৬৩ সালে ১৬৩ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল ওয়াসা।

দীর্ঘদিনেও প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় অধিগ্রহণ করা জমি ফেরত চেয়ে ২০০১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করে স্থানীয়রা। ২০১৪ সালে হাই কোর্ট চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে নির্দেশ দেয়।

‘অধিগ্রহণ না হওয়া হালিশহরের কৃষি জমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির’ সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ এনামুল হক মুনিরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই আদেশের বিরুদ্ধে ওয়াসা লিভ টু আপিল করেছিল। তাতেও হাই কোর্টের আদেশ বহাল রাখা হয়।

“কিন্তু অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না করেই স্যুয়ারেজ প্রকল্প শুরু করায় আমরা মামলা করি।”

আইনজীবী আফরোজা আকতার বলেন, অধিগ্রহণ হয়েছিল ১৯৬২-৬৩ সালে। এরপর একবার ‘ডিরিকুইজিশন’ হয়েছিল। কিন্তু জমি ফেরত দেওয়া হয়নি। পরে ভূমি মালিকরা হাই কোর্টে রিট করেন ২০১৪ সালে। ওই রিটের আদেশে হাই কোর্টে বলেছিল, এই অধিগ্রহণ যথাযথ হয়নি। তখন হাই কোর্টে বাদীর পক্ষে রায় হয়।

“এরপরও জমিগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এরপর বাদী ভূমি মন্ত্রণালয়ে যান। ২০১৮ সালে মন্ত্রণালয় ডিরিকুইজিশন অর্ডার এবং হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগের নির্দেশনার আলোকে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনকে বলেছিল। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর যেহেতু স্যুয়ারেজ প্রকল্প শুরু হয়ে যায়, তাই আমরা ২০২০ সালে মামলা করি।”

এনামুল হক মুনিরী বলেন, “আমরা জমি ফেরত চাই। আর যদি সরকারি প্রকল্পের প্রয়োজনে জমি প্রয়োজন হয়, ভূমি মালিকরা তা দেবে। সেজন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”

২০১৩ সালে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে চট্টগ্রাম নগরীর ড্রেনেজ ও স্যানিটেশন মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। মহাপরিকল্পনায় পুরো নগরীকে ছয়টি জোনে ভাগ করে ছয়টি পয়ঃশোধনাগার এবং দুটি ফিকাল স্লাজ শোধনাগার স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার তায়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ পায়। জানুয়ারি মাসে তাদের সঙ্গে চুক্তি করে ওয়াসা। এপ্রিলে প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়।

চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকার দিচ্ছে ৩৭৫৮ কোটি টাকা এবং ওয়াসা ৫০ কোটি টাকা দিচ্ছে।

এটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিদিন ১০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য এবং ৩০০ ঘনমিটার ফিকাল স্লাজ পরিশোধন সম্ভব হবে; যা নগরীর মোট পয়ঃবর্জ্যের ২০ শতাংশ এবং ফিকাল স্লাজের ৪১ শতাংশ।

পরে আরও পাঁচটি ধাপে পুরো নগরী পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আসবে।

পুরনো খবর