সরবরাহ বন্ধ থাকায় ওয়াসার ওই প্রকল্পটিতে তিনদিন ধরে পানি পরিশোধনও বন্ধ।
Published : 20 Feb 2025, 09:28 PM
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করার সময় ওয়াসার ভেঙে যাওয়া পাইপ তিনদিনেও মেরামত হয়নি। এতে নগরীর বড় একটি অংশে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।
ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরীর সেসব এলাকার বাসিন্দারা।
পাশাপাশি সরবরাহ বন্ধ থাকায় ওয়াসার ওই প্রকল্পটিতে তিনদিন ধরে পানি পরিশোধনও বন্ধ। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে সংস্থাটি।
নগরীর অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কের অনন্যা আবাসিক সংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলাকালে সোমবার বিকেলে ওয়াসার সরবরাহ পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। প্রকল্পের আওতায় কালভার্ট নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ চলছিল সেখানে।
ওই পাইপ লাইন দিয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় অবস্থিত কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ করা হয়। ওই কেন্দ্রটির দৈনিক পরিশোধন ক্ষমতা ১৪ কোটি লিটার।
ক্ষতিগ্রস্ত এই পাইপ লাইনে নগরীর যেসব এলাকায় পানি সরবরাহ হত তা সোমবার বিকেল থেকে বন্ধ আছে।
এ কারণে তিনদিন ধরে ওয়াসার পানি সরবরাহ নেই নগরীর উত্তর ও দক্ষিণ হালিশহর, আগ্রাবাদ, নয়া বাজার, মাদারবাড়ি, দেওয়ানহাট, ধনিয়ালাপাড়া, লালখান বাজার, ওয়াসার মোড়, জিইসি মোড়, দুই নম্বর গেইট, বায়েজিদ বোস্তামি, নাসিরাবাদ, অক্সিজেন, মুরাদপুর, কদমতলী, আনন্দবাজার, রৌফাবাদ, রুবি গেট, হিলভিউ আবাসিক, মোমেনবাগ, বহদ্দারহাট, কুয়াইশ, নন্দনকানন, জামালখান, সিরাজউদ্দৌলা রোড, চকবাজার, রহমতগঞ্জ, আন্দরকিল্লা ও সংলগ্ন এলাকায়।
আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা শওকত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিন দিন ধরে পানি নেই। একদিন আগ্রাবাদ ডেবায় (পুকুর) গিয়ে গোসল করেছি। পরিবারের অন্যরা তো আর সেখানে গিয়ে গোসল করতে পারছে না। ঘরে রান্না চলছে কিনে আনা বোতলের পানিতে।
“এভাবে কয়দিন চলবে জানি না। খুব খারাপ অবস্থায় আছি আমরা।”
নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি ভবনের কেয়ারটেকার মনিরুল আলম বলেন, “পাশের বিল্ডিংয়ে ডিপ টিউবওয়েল আছে। তাদের বলে কয়ে আমাদের বিল্ডিংয়ের ভাড়াটিয়াদের জন্য অল্প পানির ব্যবস্থা করেছি। সেটুকু আজ সকালে দিয়েছি। বুধবার কোনো বাসায় খাবার পানিও ছিল না।”
সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাইপটি যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন এর ভিতরে প্রায় ২৫-৩০ লাখ লিটার পানি ছিল। সেই পানি সরাতে সময় লেগেছে। তারপর মেরামত কাজ শুরু হয়।
“এখন ক্ষতিগ্রস্ত অংশ কাটা শুরু হয়েছে। সেখানে দুই পাশে জয়েন্ট দিয়ে আটকানো হবে। আপাতত এভাবে আজ রাতের মধ্যে লাইন চালু করার চেষ্টা করছি। সেটা সম্ভব হলে কাল থেকে পুরোদমে পানি সরবরাহ করা সম্ভব।”
পাইপ ভাঙার পর থেকে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ প্রকল্পে পরিশোধন কাজ বন্ধ থাকার কথা বলেছেন শোধনাগারের প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উৎপাদন না হওয়ায় দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। এছাড়া পাইপ ভেঙে আরও আনুমানিক ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।”
৪৮ ইঞ্চি ব্যাসের ওই পাইপ লাইনটি ছিল মাটির প্রায় ৫ ফুট নিচে ঢালাইয়ের ভিতর। এর প্রায় ৮-১০ ইঞ্চি পরিমাণ অংশ ভেঙে যায় জলাবদ্ধতা প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন একটি কালভার্টের পাইলিং করার সময়।
চট্টগ্রাম ওয়াসার মোট পানি পরিশোধন ক্ষমতা দৈনিক ৫০ কোটি লিটারের কিছু কম বেশি। এর মধ্যে বন্ধ থাকা শোধনাগারটি থেকেই ১৪ কোটি লিটার পানি প্রতিদিন পাওয়া যায়। সে হিসেবে গত তিন দিন নগরীর প্রায় এক তৃতীয়াংশ গ্রাহকই পানি সরবরাহ পাচ্ছে না।
পুরনো খবর: