ক্ষতিগ্রস্ত পাইপ লাইন মেরামতে কাজ শুরু করেছে ওয়াসা। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক হতে দুয়েকদিন লাগতে পারে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
Published : 19 Feb 2025, 03:54 PM
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করার সময় ওয়াসার পাইপ ভেঙে চট্টগ্রামের একটি বড় অংশে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
নগরীর অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কের অনন্যা আবাসিক সংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলাকালে সোমবার বিকেলে ওয়াসার সরবরাহ পাইপটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এরপর থেকেই পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হতে শুরু করে; তাতে বিপাকে পড়েন নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ। যেসব ভবনে বিকল্প হিসেবে গভীর নলকূপ নেই, তারা বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। প্রকল্পের আওতায় কালভার্ট নির্মাণের জন্য পাইলিং এর কাজ চলছিল সেখানে।
ওই পাইপ লাইন দিয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ করা হয়।
৪৮ ইঞ্চি ব্যাসের ওই পাইপ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নগরীর উত্তর ও দক্ষিণ হালিশহর, আগ্রাবাদ, নয়া বাজার, মাদারবাড়ি, দেওয়ানহাট, ধনিয়ালাপাড়া, লালখান বাজার, ওয়াসার মোড়, জিইসি মোড়, ২ নম্বর গেট, বায়েজিদ বোস্তামি, নাসিরাবাদ, অক্সিজেন, মুরাদপুর, কদমতলী, আনন্দবাজার, রৌফাবাদ, রুবি গেট, হিলভিউ আবাসিক, মোমেনবাগ, বহদ্দারহাট, কুয়াইশ, নন্দনকানন, জামালখান, সিরাজউদ্দৌলা রোড, চকবাজার, আন্দরকিল্লা ও সংলগ্ন এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
মাদারবাড়ি এলাকার বাসিন্দা খুরশিদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবার অল্প একটু পানি এসেছিল। গতকাল থেকে আমাদের এলাকায় আর পানি আসছে না। রান্নার পানি কিনে খাবার রান্না করা হচ্ছে। কিন্তু গোসল আর ঘরের অন্য কাজের জন্য কোনো পানি নেই। খুব খারাপ পরিস্থিতি।”
চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. আদনান বলেন, “এখানে ওয়াসার পানিই একমাত্র ভরসা। আশেপাশে পুকুরও নেই যে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা খুব বিপদে পড়ে গেছি।”
পাইপ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে মেরামতে কাজ শুরু করেছে ওয়াসা। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক হতে দুয়েকদিন লাগতে পারে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পাইপ লাইনের প্রায় ৮-১০ ইঞ্চি ফেটে গেছে। পাইপে থাকা সব পানি বের করে মেরামতের চেষ্টা চলছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ করার সময় দুর্ঘটনাবশত পাইপ ভেঙেছে। আজ সকালে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। ওই পাইপলাইন থেকে সব পানি রিলিজ করে তারপর মেরামতের কাজ শুরু করতে হয়েছে।
“একটা উপায়ে আজ রাতের মধ্যে পাইপ সংস্কার শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা সফল না হলে আরো দুয়েকদিন সময় লাগতে পারে।”
আনোয়ার পাশা জানান, কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ থেকে ৪৮ ইঞ্চি ব্যাসের ওই পাইপ দিয়ে যেসব এলাকায় পানি সরবরাহ করা হত, তা এখন বন্ধ রাখা হয়েছে।
“আমরা গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছি কোন কোন এলাকায় পানি সরবারহ বিঘ্নিত হচ্ছে। সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।”
ওয়াসার গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে ওই কালভার্ট নির্মাণের কাজ করছিল জলাবদ্ধতা প্রকল্পে নিয়োজিত ঠিকাদার।
ওই প্রকল্পের পূর্ত কাজ পরিচালনাকারী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফেরদৌস আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা ছিল সেখানে লাস্ট পাইলিং এর কাজ। এর আগেও দুটি পাইলিং করা হয়েছে। ভূগর্ভে পাইপের অ্যালাইনমেন্ট সঠিক ছিল না। তাই কাজ করার সময় পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
“পাইপ মেরামতে ওয়াসা কাজ করছে। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। যত দ্রুত সম্ভব মেরামত করা হবে।”