চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির দুর্নীতি: পদক্ষেপ জানতে চায় হাই কোর্ট

চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে অর্থপাচার, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন কী পদক্ষেপ নিয়েছে বা আদৌ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2020, 02:34 PM
Updated : 23 Sept 2020, 02:53 PM

এর জন্য এক মাসের সময় দিয়ে দুদকের আইনজীবীকে আদালত বলেছে, মঙ্গলবারই যেন এ আদেশ ফ্যাক্স করে চট্টগ্রামে দুদকের আঞ্চলিক কার‌্যালয়কে জানিয়ে দেওয়া হয়।

ফজলুল্লাহর পুনঃনিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ মৌখিক আদেশ দেয়।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. ইকরাম উদ্দিন খান চৌধুরী। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. নওশের আলী মোল্লা।

রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মো. ইকরাম উদ্দিন খান চৌধুরী বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চট্ট্রগ্রাম ওয়াসার এমডি এ কে এম ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেসব অভিযোগের বিষয়ে দুদক কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে একমাস সময় দিয়েছেন। সে পর‌্যন্ত রিট আবেদনটির শুনানিও স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রেখেছেন।”

আইনজীবী মো. নওশের আলী মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি আদালতের আদেশ সংক্রান্ত চিঠি ফ্যাক্স করে চট্টগ্রাম দুদকের বিভাগীয় কারর‌্যালয়কে জানিয়ে দিয়েছি।”

১৯৪২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া ফজলুল্লাহ লাহোর থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন এবং ১৯৬৮ সালে ওয়াসার সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পান।

পরে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৯৮ সালে অবসর নেন।

এরপর সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ২০০৯ সালের ৮ জুলাই তাকে এক বছরের জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড গঠন হলে তিনি প্রথম দফায় তিন মাসের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পেলেও পরে পাঁচ দফায় পুনর্নিয়োগ পেয়ে গত ৯ বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

আগামী ৩১ অক্টোবর ৮০ বছর বয়সী ফজলুল্লাহর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের তিন বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।

তবে তার আগেই গত ৭ সেপ্টেম্বর বোর্ড সভায় আরো তিন বছরের জন্য তার নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ চট্টগ্রাম ওয়াসায় কয়েক হাজার কোটি টাকার চলমান প্রকল্পে নিজের ক্ষমতা দীর্ঘ মেয়াদে পাকাপোক্ত করতে অনুগত বোর্ড দিয়ে এই নিয়োগের সুপারিশ করিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে বোর্ড  দাবি করেছে, চলমান কাজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে অভিজ্ঞ ব্যক্তিকেই নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম সদরের বাসিন্দা ওয়াসার গ্রাহক মো. হাসান আলী গত ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ’র বিরুদ্ধে অর্থপাচার, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, অব্যবস্থাপনাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর-প্রতিবেদন উদ্বৃত করে চট্টগ্রামে দুদকের বিভাগীয় পরিচালকের কাছে অভিযোগ করেন।

কিন্তু সেসব অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় দুদকের নিষ্ক্রিয়তা এবং এ কে এম ফজলুল্লাহ’র পুনঃনিয়োগের সুপারিশ চ্যালেঞ্জ করে গত রোববার হাই কোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন।

আদালতে সে রিটটি শুনানির জন্য উঠলে দুদক আইনজীবী মো. নওশের আলী মোল্লা আপত্তি জানিয়ে বলেন, রিট আবেদনকারী গত ১১ সেপ্টেম্বর অভিযোগ দিয়েছেন। চট্টগ্রাম দুদক এ অভেোগের ভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা তা আমার জানা নেই। তাছাড়া অভিযোগ দেওয়ার ৮ দিনের মাথায় তিনি রিট আবেদন করেছেন। অভিযোগ যাচাই-বাছাই বা অনুসন্ধান শুরু করার প্রস্তুতির জন্য এ সময় খুব বেশি না।

পরে আদালত রিট আবেদনটির শুনানি একমাস মুলতবি রেখে এই সময়ের মধ্যে দুদককে পদক্ষেপ জানাতে বলে।