বয়স হয়ে গেছে সিংহ জুটি বাদশাহ আর নোভার, প্রজননের সম্ভাবনাও আর নেই; ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা যেন সিংহশূন্য না হয়ে যায়, সেজন্য এখনই উদ্যোগী হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
Published : 17 Nov 2021, 09:25 AM
এর অংশ হিসেবে গাজীপুর কিংবা ডুলহাজারা সাফারি পার্ক থেকে এক জোড়া সিংহ-সিংহী চেয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে সাফারি পার্ক থেকে একটি সিংহ ও একটি সিংহী চেয়েছি। কথাও বলেছি… আশা করি ইতিবাচক ফল পাব।
“আমাদের দেশের সাফারি পার্কগুলোতেই সিংহ ও সিংহী আছে। পাওয়া গেলে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার জন্য খুব ভালো হবে। সিংহের বংশবৃদ্ধিতেও নজর দেওয়া যাবে।”
২০০৫ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া দুটি সিংহীর নাম রাখা হয় ‘বর্ষা’ আর ‘নোভা’। তাদের জন্মের কিছুদিন পর তাদের মা ‘লক্ষ্মী’ এবং ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাবা ‘রাজ’ মারা যায়।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ প্রায় ১১ বছর নিঃসঙ্গ কাটানো ‘নোভার’ জন্য সঙ্গী আনার উদ্যোগ নিলে ২০১৬ সালে অদল-বদল প্রক্রিয়ায় ‘বর্ষাকে’ রংপুরে পাঠিয়ে সেখান থেকে আনা হয় সিংহ ‘বাদশাহকে’।
বাদশাহকে চট্টগ্রামে এনে কিছুদিন আলাদা খাঁচায় রাখা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর সিংহ এবং সিংহীকে এক খাঁচায় দেওয়ার সময় বেশ ধুমধামের আয়োজন করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। সিংহ-সিংহীর ‘বিয়ে’ বলে প্রচার করা হয় ওই আয়োজনকে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কিউরেটর ও চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, “সিংহ-সিংহী আড়াই বছর বয়সেই প্রজননক্ষম হয় এবং তিন বছরের মধ্যে প্রথম বাচ্চা প্রসব করে। ১২ বছর পর এ প্রাণীগুলোর প্রজনন ক্ষমতা আর থাকে না। এর মধ্যে সেগুলো সর্বোচ্চ পাঁচবার শাবকের জন্ম দেয়।”
তিনি জানান, যে সময়ে বাদশাহকে চট্টগ্রামে আনা হয়েছিল, তখন বয়স ছিল প্রায় ১৩ বছর। আর সিংহী নোভার বয়স ছিল ১১ বছর।
“মানে সিংহ-সিংহী প্রজনন সময়ের শেষ দিকে এসে এক হয়েছিল। তাছাড়া চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার সিংহীর শারীরিক গঠন ভালো থাকলেও রংপুর থেকে আনা সিংহের অবস্থা ছিল নাজুক। প্রায় এক বছর লেগেছে বাদশাহকে শারীরিকভাবে সুস্থ করতে।”
১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পরিচালনার দায়িত্বে আছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এটি দেশের একমাত্র ‘লাভজনক’ চিড়িয়াখানা বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। চিড়িয়াখানার টিকিট বিক্রির আয় থেকেই এখানে প্রাণী সংগ্রহসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়।
এ চিড়িয়াখানা দীর্ঘদিন ধরে ছিল বাঘ ও সিংহবিহীন। পাশাপাশি অনেক প্রাণী ছিল সঙ্গীহীন। ২০১৬ সালে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ একাকী প্রাণীগুলোর জন্য সঙ্গী আনার প্রক্রিয়া শুরু করে।
ওই বছর ডিসেম্বরে ৩৩ লাখ টাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চট্টগ্রামে আনা হয় একটি বাঘ ও একটি বাঘিনী। যাদের নাম দেয়া হয় ‘রাজ’ ও ‘পরী’।
এই রাজ-পরীর ঘরে জন্ম নেয় একটি সাদা বাঘ, যেটি দেশের প্রথম সাদা বাঘ বলে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দাবি। পাঁচ বছরের মধ্যে চট্টগ্রামে বাঘের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে এক ডজন। আরও কয়েকটি বাঘের ছানা বিভিন্ন সময়ে জন্মের পরপরই মারা যায়। তবে গত ১৬ বছরে কোনো সিংহের প্রজনন হয়নি এ চিড়িয়াখানায়।
আরও পড়ুন: