চার বছর আগে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা থেকে একটি সিংহীকে রংপুর পাঠিয়ে সেখান থেকে আনা হয়েছিল ‘বাদশাহকে’। ধুমধাম করে ‘বিয়ে’ দেওয়া হয়েছিল ‘নোভার’ সাথে। কিন্তু চার বছরেও বাদশা-নোভার পরিবারে আসেনি নতুন কোনো সদস্য।
Published : 11 Dec 2020, 02:10 PM
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, সিংহ ‘বাদশাহর’ বয়স এখন ১৭ বছর, আর সিংহী ‘নোভার’ বয়স ১৫। নিজেদের গড় আয়ুর শেষপ্রান্তে রয়েছে এই সিংহ জুটি।
বয়স হওয়ায় তাদের প্রজননের সম্ভাবনাও আর নেই। তাই যে কোনো সময় সিংহশূন্য হতে পারে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। তার আগেই এক জোড়া সিংহ-সিংহী আনার পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ।
২০০৫ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া দুটি সিংহীর নাম রাখা হয় ‘বর্ষা’ আর ‘নোভা’। তাদের জন্মের কিছুদিন পর তাদের মা ‘লক্ষ্মী’ এবং ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাবা ‘রাজ’ মারা যায়।
প্রায় ১১ বছর নিঃসঙ্গ কাটানো নোভার জন্য সঙ্গী আনার উদ্যোগ নেয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালে অদল-বদল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার সিংহী ‘বর্ষাকে’ রংপুরে পাঠিয়ে সেখান থেকে আনা হয় সিংহ ‘বাদশাহকে’।
৫ সেপ্টেম্বর বাদশাহকে চট্টগ্রামে এনে কিছুদিন আলাদা খাঁচায় রাখা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর সিংহ এবং সিংহীকে এক খাঁচায় দেওয়ার সময় বেশ ধুমধামের আয়োজন করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। সিংহ-সিংহীর ‘বিয়ে’ বলে প্রচার করা হয় ওই আয়োজনকে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়।
এই কয়েক বছরে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘসহ বিভিন্ন প্রাণী একাধিকবার বাচ্চা প্রসব করলেও সিংহ-সিংহীর বেলায় তা হয়নি।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ও চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, বাঘ-সিংহের গড় আয়ু ১৭ বছর। তারা আড়াই বছর বয়সেই প্রজননক্ষম হয় এবং তিন বছরের মধ্যে প্রথম বাচ্চা প্রসব করে। ১২ বছর পর এ প্রাণীগুলো প্রজনন ক্ষমতা আর থাকে না। এর মধ্যে সেগুলো সর্বোচ্চ পাঁচবার শাবকের জন্ম দেয়।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ১১ বছর ধরে একাকী জীবন পার করেছে সিংহী ‘বর্ষা’ ও ‘নোভা’। রংপুর চিড়িয়াখানাতেও দুটি সিংহ একা ছিল। তাদের একাকীত্ব ঘোচাতে মূলত অদল-বদল প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম থেকে একটি সিংহী রংপুরে পাঠিয়ে সেখান থেকে সিংহ আনা হয়েছিল।
তাছাড়া চট্টগ্রামের সিংহীর শারীরিক গঠন ভালো থাকলেও সিংহর অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। প্রায় এক বছর লেগেছে সিংহটিকে শারীরিকভাবে সুস্থ করতে।
শুভ বলেন, “প্রজননের জন্য একই খাঁচায় রাখা হলে সিংহী ‘নোভা’ সিংহ ‘বাদশাহর’ ওপর হামলা করে। সিংহীটি শারীরিকভাবে সবল হওয়ায় সে প্রায় সময়ই সিংহের ওপর হামলা করত। ফলে সবসময় এক খাঁচায় রাখা সম্ভব হয়নি।”
অবশ্য ডেপুটি কিউরেটরের দাবি, প্রজননের চেয়ে ‘বর্ষা’ আর ‘নোভার’ একাকীত্ব ঘোচানোই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। একাকীত্ব দূর করা গেলে প্রাণীর গড় আয়ুও বাড়ে।
চিড়িয়াখানাটি দীর্ঘদিন ধরে ছিল বাঘ ও সিংহবিহীন। পাশাপাশি অনেক প্রাণী ছিল সঙ্গীহীন। এ নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বেশকিছু সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিল।
২০১৬ সালে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ একাকী প্রাণীগুলো সঙ্গী ও বাঘ আনার প্রক্রিয়া শুরু করে। ওই বছরের সেপ্টেম্বর রংপুর চিড়িয়াখানার সঙ্গে সিংহ-সিংহী অদল-বদল হয়। আর ডিসেম্বরে ৩৩ লাখ টাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চট্টগ্রামে আনা হয় একটি বাঘ ও একটি বাঘিনী। যাদের নাম দেয়া হয় ‘রাজ’ ও ‘পরী’।
চিড়িয়াখানার পরিচালনা পর্ষদের আহ্বায়ক রুহুল আমিন বলেন, ফেব্রুয়ারিতে জেলা প্রশাসকের কাছে এক জোড়া সিংহ-সিংহী কেনার একটি প্রস্তাব দেওয়া হবে। অনুমোদন পেলে সিংহ কেনার কার্যক্রম শুরু হবে।