চিড়িয়াখানায় ঘটা করে বিয়ে: রংপুরের বরে একাকিত্ব ঘুচল চট্টগ্রামের কনের

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়ার পর ১১ বছর কাটলেও সিংহী ‘নোভা’র দেখা হয়নি সঙ্গী, সেই নিঃসঙ্গতা কাটাতে রংপুর থেকে আনা সিংহ ‘বাদশা’র সঙ্গে তাই ঘটা করে হল বিয়ে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2016, 01:14 PM
Updated : 21 Sept 2016, 01:16 PM

রঙবেরঙের বেলুন, পোস্টার-ফেস্টুন দিয়ে বুধবার সাজানো হয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। সিংহের খাঁচাটি সাজানো হয় নানা রঙের বেলুন ও ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে।

বিয়ে উপলক্ষে খাবারেও আনা হয় নতুনত্ব: গরু, মুরগির মাংস, কলিজা, ডিম দিয়ে তৈরি করা হয় কেক।

নানা বয়সী মানুষ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জড়ো হন এই বিয়ের আয়োজনে। বেলুন হাতে প্রায় সবাইকে দেখা যায় মুখোশে।

বিয়ের আগে তাদের নামেও আনা হয় মিল: কনের নামের সঙ্গে মিলিয়ে সিংহ বাদশার নাম পাল্টে রাখা হয় ‘নভ’। একদিন বাদেই এক খাঁচায় শুরু হবে তাদের যৌথ জীবন।

বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, মানুষের মধ্যে চিড়িয়াখানা নিয়ে ইতিবাচক ধারণা তৈরির জন্য ‘ব্যতিক্রমী’ এ উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।

এছাড়া পশুটির বংশবিস্তারের চিন্তাও রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

২০০৫ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া দুটি সিংহীর নাম রাখা হয় ‘বর্ষা’ আর ‘নোভা’। তাদের জন্মের কিছুদিন পর মা ‘লক্ষী’ এবং ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাবা ‘রাজ’ মারা যায়।

এরপর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আর নতুন কোনো সিংহের পা পড়েনি। প্রায় ১১ বছর সঙ্গীহীন জীবন কাটানোর পর সঙ্গী আনার উদ্যোগ নেয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম ও রংপুর চিড়িয়াখানার মধ্যে ‘অদল-বদল’ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা থেকে সিংহী ‘বর্ষা’কে দিয়ে ‘নোভা’র সঙ্গী হিসেবে রংপুর থেকে আনা হয় ‘বাদশা’কে।

নতুন সিংহ আনতে গত ২৮ অগাস্ট চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা থেকে বর্ষাকে নিয়ে যাওয়া হয় রংপুর চিড়িয়াখানায়। আর ৫ সেপ্টেম্বর সকালে রংপুর চিড়িয়াখানা থেকে নোভার সঙ্গী বাদশা এসে পৌঁছায় চট্টগ্রামে।

তবে এতোদিন আলাদা খাঁচায় রাখা হয় তাদের।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর মঞ্জুর মোর্শেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরির জন্যই সিংহ ও সিংহীকে আলাদা খাঁচায় রাখা হয়েছিল।”

তাদের মধ্যে এখন সম্পর্ক তৈরি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন সিংহ আর সিংহী দুটি এক খাঁচায় থাকার উপযোগী হয়েছে।”

বুধবার বিয়ে হলেও তাদের এক খাঁচায় দেওয়া হবে বৃহস্পতিবার।

এর কারণ ব্যাখ্যায় মোর্শেদ বলেন, “বেশি মানুষের সমাগম হওয়ায় তাদের কাছে পরিবেশটি অনেকটা অপরিচিত লাগছে। তারা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলে এক খাঁচায় রাখা হবে।”

বৃহস্পতিবার বিকালের মধ্যেই তাদের এক খাঁচায় দেওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।     

মোর্শেদ জানান, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার সিংহ-সিংহীগুলো ‘ইন্ডিয়ান লায়ন’ প্রজাতির। এগুলোর গড় আয়ু ১৫ থেকে ১৬ বছর। কোনো পুরুষ সঙ্গী না থাকায় পুর্ণবয়স্ক সিংহীগুলোর বংশবৃদ্ধির সুযোগ হয়নি।

‘নভ’ জন্মও রংপুর চিড়িয়াখানায় জানিয়ে তিনি বলেন, তারা দুজন কাছাকাছি বয়সের।

সিংহ-সিংহী দুটির মিলন হলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রজনন হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।