চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বর্ষা, শোভাদের নিয়ে দর্শনার্থীদের আগ্রহের কমতি নেই; কর্তৃপক্ষের লাভের অংকও প্রতি বছর বাড়ছে। কিন্তু অরণ্য থেকে দূরে মনুষ্য সমাজে এসে সিংহ, ভালুকসহ চার প্রজাতির প্রাণীর খাঁচার জীবন কাটছে সঙ্গীহীন।
Published : 18 May 2016, 09:36 AM
অনেক প্রাণীর মৃত্যু হওয়ায় এবং সেই জায়গায় নতুন প্রাণী আনার উদ্যোগ না থাকায় ২৭ বছর আগে বন্দরনগরীর ফয়’স লেকে ছয় একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত এই বিনোদন কেন্দ্র দিন দিন জৌলুস হারাচ্ছে।
ডেপুটি কিউরেটর মঞ্জুর মোর্শেদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ৬৭ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ রকমের পাখি এবং ৩০ প্রজাতির বিভিন্ন সরীসৃপ ও অন্যান্য প্রাণী।
পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে এ চিড়িয়াখানা বাঘহীন। দুটি করে সিংহী, ভালুক, সাম্বার হরিণ ও একটি গয়াল দিন কাটাচ্ছে সঙ্গীহীন অবস্থায়। এতে করে ওই চার জাতের প্রাণীর বংশবৃদ্ধিও হচ্ছে না।
চিড়িয়াখানায় আসা দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে ভালুক ও সিংহীগুলো। এ প্রাণীগুলোর বেশিরভাগ তাদের গড় আয়ুর অর্ধেক সময় পেরিয়ে এসেছে।
দুটি সিংহীর একটির নাম বর্ষা, অন্যটি শোভা। ২০০৫ সালের ১৬ জুন এ চিড়িয়াখানতেই তাদের জন্ম। তাদের জন্মের কিছুদিন পর মা ‘লক্ষী’ ও ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাবা ‘রাজ’ মারা যায়।
এরপর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আর নতুন কোনো সিংহের পা পড়েনি।
চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা মোর্শেদ জানান, ‘ইন্ডিয়ান লায়ন’ প্রজাতির সিংহীগুলোর গড় আয়ু ১৫ থেকে ১৬ বছর। সে হিসেবে দুই সিংহী এখন পূর্ণবয়স্ক। কোনো পুরুষ সঙ্গী না থাকায় তাদের বংশবৃদ্ধির সুযোগ হয়নি।
তিনি বলেন, যে কোনো প্রাণী সঙ্গীহীন থাকলে স্বাভাবিক চাঞ্চল্য কমে আসে, অনেক ক্ষেত্রে খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেয়।
চিড়িয়াখানার চিকিৎসক শাহাদাৎ হোসেন শুভ জানান, এ প্রজাতির ভালুকগুলোর গড় আয়ু ২৫ থেকে ২০ বছর।
গাজীপুর থেকে আনা ভালুকটির বয়স ১৩, আর খাগড়াছড়ি থেকে আসা ভালুকটির বয়স ছয় বছর বলে জানান তিনি।
এই অঞ্চলে এক সময় সাম্বার হরিণের দেখা পাওয়া কঠিন ছিল না। তবে তাদের সংখ্যা এখন কমে এসেছে আশঙ্কাজনক হারে।
ডেপুটি কিউরেটর মোর্শেদ জানান, এ চিড়িয়াখানার দুটি সাম্বার হরিণই মেয়ে। তাদের একটির জন্ম এই চিড়িয়াখানাতেই।
আগে চিড়িয়াখানায় সাম্বার পরিবারের সদস্য ছিল চারজন। কয়েক বছর আগে ছোট অবস্থায় একটি এবং গত বছর ডিসেম্বরে অন্য হরিণের শিংয়ের গুঁতোয় আরেকটি পুরুষ হরিণ মারা যায়।
সাম্বার হরিণেরও গড় আয়ু ২০ বছর। তবে চিড়িয়াখানায় খাওয়া-চিকিৎসার সমস্যা না থাকায় এসব প্রাণী বনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি দিন বেঁচে থাকবে বলে আশা করছেন মোর্শেদ।
মাস-ছয়েক আগে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আনা গয়ালটিও রয়েছে সঙ্গীহীন অবস্থায়।
মোর্শেদ বলেন, “বাঘ, সিংহ, মেয়ে ভালুক চেয়ে আমরা অনেকবার ঢাকা চিড়িয়াখানা ও ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।”
তিনি জানান, বর্তমানে রংপুর চিড়িয়াখানায় সিংহ থাকলেও কোনো সিংহী নেই।
“সেখান থেকে একটি সিংহ এনে আমাদের কাছ থেকে একটি সিংহী দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছি তাদের।”
ছেলেমেয়েদের নিয়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বেড়াতে এসে তাদের বাঘ দেখাতে পারেননি নগরীর বাসিন্দা মোহাম্মদ মাসুদ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাচ্চারা যেসব প্রাণীর নাম জানে, বইয়ে যেগুলো পড়েছে, টিভিতে দেখেছে- চিড়িয়াখানায় এলে সেসব প্রাণী নিয়েই তাদের আগ্রহ বেশি থাকে। কিন্তু এখানে তো বাঘ নেই, হাতি নেই; কেশরওয়ালা সিংহ নেই।”
দুই যুগের বেশি সময়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় খুব বেশি বৈচিত্র্য না এলেও এটাই দেশের একমাত্র লাভজনক চিড়িয়াখানা বলে ডেপুটি কিউরেটর মোর্শেদের দাবি।
তিনি জানান, গত বছর চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থী টিকিট বিক্রি থেকে আয় হয়েছে এক কোটি ৩০ লাখ টাকার বেশি। তার আগের বছর আয় ছিল এক কোটি ২৮ লাখ।
১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধানে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। চিড়িয়াখানার নিজস্ব আয় থেকেই ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন দেওয়া হয় বলে জানান মোর্শেদ।