বাঘহীন, শ্রীহীন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

প্রায় এক বছর ধরে জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারই নেই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। পর্যাপ্ত উদ্যোগের অভাবে চট্টগ্রামের এই বিনোদনকেন্দ্রের দশা অনেকটাই শ্রীহীন।

উত্তম সেন গুপ্তবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2013, 06:56 AM
Updated : 9 August 2013, 10:51 AM

ঈদসহ বিভিন্ন সামাজিক উৎসব ও ছুটির দিনে বন্দরনগরীর শিশু-কিশোরদের বিনোদনের অন্যতম স্থান এই চিড়িয়াখানা। কিন্তু আকর্ষণের অভাবে দর্শনার্থীর সংখ্যাও দিন দিন কমছে।  

দর্শনার্থীদের অভিযোগ, শিশুদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় আসার পর বাঘ দেখতে না পেলে মন খারাপ করে তারা। 

১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধানে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। বাঘ সিংহ আনার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি চালাচালি করেও তারা হতাশ।

চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ৬৭ প্রজাতির ৩৭০টি প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ প্রজাতির পাখি ও ৩৩ প্রজাতির প্রাণী।

চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা যায়, দুটি সিংহী, একটি ভালুক, ১৮টি বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, ছোট বড় ৩৪টি কুমির, ১১টি অজগর, তিনটি চিতা বিড়াল, মেছো বিড়াল, কাছিম, বানর ও বাঘডাস রয়েছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়।

এছাড়া ধনেশ, টিয়া, ময়না, বক, হাঁস, চিলসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি রয়েছে।

১৮টি হরিণের মধ্যে রয়েছে একটি প্যারা, চারটি মায়া, চারটি সম্বর ও নয়টি চিত্রা হরিণ। বানর প্রজাতির মধ্যে রয়েছে হনুমান, রেসাস ও ঊল্টা লেজি।

অনেকদিন ধরে চিড়িয়াখানায় বাঘ নেই। বাঘের খাঁচায় এখন রাখা হয়েছে হাঁস।

ফেনী থেকে চট্টগ্রাম বেড়াতে আসা রেজাউল করিম তার তিন ও সাত বছর বয়সী দুই ছেলেকে নিয়ে চিড়িয়াখানা দেখতে এসেছিলেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানালেন, চট্টগ্রামে বেড়াতে এসেছেন এক আত্মীয়র বাসায়। সেই সুযোগে দুই ছেলেকে নিযে চিড়িয়াখানায় এসেছেন বাঘ-সিংহ দেখাবেন বলে।

“কিন্তু ছেলেদের জাতীয় পশুও দেখাতে পারলাম না। এখানে বনের রাজাও নেই।”

ডা. মোর্শেদ জানান, ক্যান্সারে ভুগে গত বছরের ৩০ অক্টোবর মারা যায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার শেষ বাঘ ‘পূর্ণিমা’। তার সঙ্গী ‘চন্দ্র’ মারা যায় ২০০৬ সালে।

২০০৯ সালে পূর্ণিমার ক্যান্সার ধরা পড়ার পর একটি বাঘ ও একটি বাঘিনী চেয়ে ঢাকা চিড়িয়াখানা ও ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিলেও সাড়া পাননি বলে জানালেন তিনি।

চিড়িয়াখানায় থাকা সিংহী দুটির একটির নাম বর্ষা, অন্যটির নাম নোভা। ২০০৫ সালের ১৬ জুন এ চিড়িয়াখানাতেই তাদের জন্ম। তাদের জন্মের কিছু দিন পর তাদের মা ‘লক্ষী’ এবং ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তাদের বাবা ‘রাজ’ মারা যায়।

ডা. মোর্শেদ জানান, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার প্যারা হরিণ ও ভালুক দুটি পুরুষ প্রজাতির।

“গত বছরের ডিসেম্বরে দুটি মেয়ে প্যারা হরিণ, তিনটি মেয়ে ভালুক, একটি সিংহ, একটি পুরুষ বাঘ ও একটি মেয়ে বাঘ চেয়ে চিঠি দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।”

চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা যায় ৩৭টি খাঁচার মধ্যে অনেকগুলোই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। হনুমানগুলোও অনেক সময় খাঁচা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে।

চট্টগ্রাম শহরের আসকার দীঘির বাসিন্দা সুকান্ত চৌধুরী বলেন, “সবাইকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় গেলে শিশুদের আগ্রহ থাকে বাঘ দেখার। কিন্তু চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘ দেখানো যায় না।”

জায়গা ছোট বলে সেখানে বাচ্চাদের নিয়ে ভালোভাবে বেড়ানোও যায় না বলে অভিযোগ করলেন তিনি।

চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এমএএইচ হুমায়ন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা বাংলাদেশের একমাত্র লাভজনক চিড়িয়াখানা। টিকেট বিক্রির টাকা দিয়ে এটি পরিচালিত হয়।

তিনি জানান, প্রতি মাসে টিকেট বিক্রি থেকে প্রায় আট লাখ টাকা আয় হয়, যার পুরোটাই পশুপাখির খাবার সরবরাহ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে ব্যয় হযে যায়।

তিনিও জানালেন, বাঘ, সিংহসহ নতুন প্রাণী আনার ব্যাপারে বিভিন্ন দপ্তরে অনেকবার চিঠি দিলেও কাজ হয়নি।

“চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় সরকারি কোনো অনুদান পাওয়া যায় না। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুদান নিয়েও আমরা চিড়িয়াখানার উন্নয়ন করি।”

চিড়িয়াখানার পেছনে কিছু সরকারি জমি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা চলছে। তা পাওয়া গেলে দর্শনার্থীদের বেড়ানোর জায়গা বাড়বে।

এছাড়া চিড়িয়াখানার উন্নয়নে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।