মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশে তার দেশের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডেভিড মিলকে বেছে নিয়েছেন।
Published : 10 May 2024, 10:51 PM
যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা মিশনে নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া ডেভিড স্লেটন মিল বাংলাদেশের সঙ্গে তার দেশের সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন আশার কথা বলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ফরেন অফিস স্পাউসেস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘বৈশাখী উৎসব ১৪৩১’ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন হাছান মাহমুদ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশে তার দেশের নতুন দূত হিসেবে ডেভিড মিলকে বেছে নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বিষয় প্রকাশ করে।
সাংবাদিকরা সেই প্রসঙ্গ তুললে হাছান মাহমুদ বলেন, “আমি এ মনোনয়নকে স্বাগত জানাই। নতুন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে আশা করছি।”
এমন এক সময়ে ডেভিড মিলকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করার খবর এল, যখন ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করছে দুই পক্ষ।
বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে ৭ জানুয়ারির ওই নির্বাচনে জিতে টানা চতুর্থবারের মত সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
ভারত, চীন ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ নির্বাচনকে স্বাগত জানালেও পৃথক বিবৃতিতে ভোটের পরিবেশ নিয়ে সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তাদের ভাষ্য ছিল, নির্বাচন ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ’ হয়নি।
নির্বাচনের আগে গতবছর যুক্তরাষ্ট্র কিছু বাংলাদেশির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে কূটনৈতিক টানাপড়েন নতুন মাত্রা পায়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ‘বাধাগ্রস্ত’ করে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িতদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ করতে তারা ওই ভিসানীতি কার্যকর করেছে।
সে সময় কয়েকটি ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র তাকে ‘ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়’ বলেও এক সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ তোলেন।
শেখ হাসিনা আবারও বাংলাদেশের ক্ষমতায় ফেরার পর যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন প্রশাসন এখন দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাচনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নোত্তর বিষয়েও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, “আমাদের দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি অনেক দেশের চেয়ে ভালো। বিশ্বের কোনো দেশেই মানবাধিকার আদর্শ অবস্থানে নেই।
"যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নামা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যেভাবে দমন করছে পুলিশ, সেটি আমরা টিভির পর্দায় দেখছি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নাগরিক আন্দোলনকে কীভাবে পুলিশ দমন করছে, সেটিও আমরা দেখছি।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সব দেশেরই উচিত মানবাধিকার উন্নয়নে একযোগে কাজ করা, আমরাও আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে মানবাধিকার উন্নয়নে কাজ করতে চাই।”
বৈশাখী উৎসবকে ‘অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক’ বর্ণনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে তৎকালীন পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হওয়া পহেলা বৈশাখের উৎসব আজ আমাদের অসাম্প্রদায়িকতার মূর্ত প্রতীক।
“স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে, আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা বাঙালি, আর দ্বিতীয় পরিচয় আমরা কে কোন ধর্মের। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্র, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’ সে কারণেই আজ বাংলাদেশে ঈদ, পূজা, প্রবারণা পূর্ণিমা- সব উৎসবে সব ধর্মের মানুষ একাত্ম হয়ে যায়।”