চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং-সিআরবির এলাকায় ‘প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে’ হাসপাতাল নির্মাণ না করার আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
Published : 16 Jul 2021, 11:39 PM
তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে সিটি করপোরেশন ওই প্রকল্পের জন্য জমির ব্যবস্থা করে দেবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (সিডিএ) ইতিমধ্যে জানিয়েছে, সিআরবি নগর মহাপরিকল্পনায় ‘হেরিটেজ জোন’ হিসেবে সংরক্ষিত বলে সেখানে কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনার অনুমোদন তারা দেবে না।
চট্টগ্রামের ইতিহাসের সাথে জড়িত প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বলয় সিআরবি এলাকায় কোনো হাসপাতাল নির্মাণ না করার দাবিতে আন্দোলন করছে বিভিন্ন সংগঠন।
এ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যেই নগর উন্নয়নের সাথে জড়িত দুই সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) ও সিডিএ সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিপক্ষে তাদের অবস্থান জানাল।
বৃহস্পতিবার সিটি করপোরেশনের পরিবেশ উন্নয়ন ও সুরক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভায় রেলওয়ের জমিতে বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগকে ‘লুণ্ঠনবৃত্তির অপপ্রয়াস’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
জানতে চাইলে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী শুক্রবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার কথা হল, চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে কোনো কিছু করার তো দরকার নেই। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমরা আর ফিরে পাব না। রেলওয়ের প্রচুর জায়গা আছে পাহাড়তলিসহ বিভিন্ন স্থানে। রেলওয়ের জমির তো অভাব নেই।
“আর তারা (রেলওয়ে) যদি দিতে না পারে, তাহলে সিটি করপোরেশনের মোহরাসহ কয়েকটি এলাকায় কিছু জমি আছে। সেখান থেকে দিতে পারব। দুই আড়াই একরের মত, তারা যা চায়।”
সরকারের কোনো পর্যায় থেকে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মেয়র রেজাউল বলেন, কেউ এখনো যোগাযোগ করেনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার সিটি করপোরেশনের পরিবেশ উন্নয়ন ও সুরক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভা শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিটি মনে করে, রেলওয়ের ওই জমিতে বেসরকারি উদ্যোগে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণ হলে তাতে নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যহানী ঘটবে।
“চট্টগ্রাম রেলওয়ের ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বক্ষব্যাধি ও ৫০ সাধারণ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে। এ হাসপাতালটিকে বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে গড়ে না তুলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণের পাঁয়তারা মেনে নেয়া যায় না।”
সিডিএ’র মহাপরিকল্পনায় বলা আছে, সিআরবির ভূ-প্রাকৃতিক উন্মুক্ত স্থানকে কোনোভাবে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা যাবে না।
সিসিসি’র স্থায়ী কমিটি বলে, “সিআরবির ঐতিহাসিক স্থানের আশেপাশে যেসকল নতুন স্থাপনা করা হয়েছে সেগুলোকে অপসারণ করে পর্যটন বান্ধব করতে হবে। আশেপাশের বস্তি ও কাঁচা ঘরকে স্থানান্তর করতে হবে। বর্তমান যে হাসপাতালটি আছে সেটির ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে, কিন্তু কোনো ধরণের সম্প্রসারণ করা যাবে না। বাণিজ্যিক ও আবাসিক কোনো স্থাপনা করা যাবে না।”
এই আলোচনার আলোকে বৃহস্পতিবারের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, নগর মহাপরিকল্পনার অনুলিপি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, মেয়র, সিডিএ ও পরিবেশ অধিদপ্তর বরাবরে পাঠানো হবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
নগরীর টাইগার পাসে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় পরিবেশ উন্নয়ন ও সুরক্ষা স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, সচিব খালেদ মাহমুদ, কাউন্সিলর মো. মোবারেক আলী, মো. শফিকুল ইসলাম, সংরক্ষিত কাউন্সিলর রুমকী সেনগুপ্ত, ফেরদৌসি আকবর ও নগর পরিকল্পনাবিদ আব্দুল্লাহ আল ওমর উপস্থিত ছিলেন।
পূর্ব রেলের সদর দপ্তর (সিআরবি) এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) একটি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ ও ৫০ আসনের নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
এই প্রকল্পের জন্য বেসরকারি ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেডের সাথে চুক্তি হয়েছে গত বছরের মার্চে। সম্প্রতি প্রকল্পের জন্য রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনির কোয়ার্টার উচ্ছেদ শুরু হলে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়।
প্রকল্পের জন্য ৬ একর জমি লাগবে। সিআরবি এলাকায় বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতাল, সংলগ্ন খালি জমি ও লাগোয়া রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনির এলাকায় এই প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।
সোমবার ১৭ জন জ্যেষ্ঠ নাগরিক হাসপাতাল স্থাপনের বিরোধিতা করে বিবৃতি দেন। নানা আলোচনার মধ্যে বুধবার নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সিআরবি এলাকা ঘুরে আসেন।