চট্টগ্রাম শহরে ট্রাফিক পুলিশের বক্সে বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়েছে বলে মনে করলেও কে বা কারা এর পেছনে রয়েছে, সেই রহস্য দুই দিনেও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
Published : 01 Mar 2020, 09:43 PM
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের বোমা নিস্ক্রীয়করণ ইউনিটের সদস্যরা বলছেন, বোমাটি ট্রাফিক বক্সে রেখে যাওয়া হয়েছিল বলে তারা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে সেটিতে সময় নিয়ন্ত্রণ করা ছিল না কি সুইচের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে তা এখনও বের করতে পারেননি।
গত শুক্রবার রাতে নগরীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা ষোলশহর ২ নম্বর গেইট ট্রাফিক বক্সে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে দুই ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ও তিনজন পথচারীসহ পাঁচজন আহত হন। ট্রাফিক বক্সটিতে থাকা সিগন্যাল বাতি নিয়ন্ত্রণের সুইচ বোর্ডটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।
এ ঘটনায় পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেটি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তদন্ত করবে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
হামলাকারীদের শনাক্তে অগ্রগতি জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার হাসান মো. শওকত আলী রোববার বলেন, “আমাদের তদন্ত শুরু হয়ে গেছে ঘটনার পর থেকেই। কারা এ ধরনের ঘটনার সাথে জড়িত এবং কীভাবে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে সেটি আমরা দেখছি।”
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, ওই ট্রাফিক বক্সের আশপাশে কোনো সিসি ক্যামেরা পাওয়া যায়নি। বক্সের অদূরে বিপ্লব উদ্যানের কাছে যে ক্যামেরাটি আছে, সেটিও ঘটনার দুই দিন আগে থেকে অচল ছিল।
এরপরেও আশপাশের কোনো ভবনের ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া যায় কি না তা খোঁজা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ঘটনার পরপর নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) আমেনা বেগম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “শর্ট সার্কিট থেকে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রথমে তারা মনে করলেও এটা একটা বিস্ফোরণ। কেউ ট্রাফিক বক্সে কিছু রেখে গিয়েছিল, যেটা বিস্ফোরিত হয়েছে।”
ঘটনার পরদিন শনিবার সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের এক টুইটে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের এই হামলার দায় স্বীকারের খবর দেওয়া হয়।
গত বছর ঢাকার কয়েকটি জায়গায়ও একই ধরনের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় আইএসের দায় স্বীকারের খবর দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী গ্রুপটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-কমিশনার শওকত আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকায়ও যে রকম ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর সাথে চট্টগ্রামের ঘটনাটির মিল ছিল। তবে একই গ্রুপ এবং একই ধরনের বিস্ফোরক কি না সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
তবে আইএসের দায় স্বীকারের খবরকে ‘গুরুত্ব দিচ্ছেন না’ জানিয়ে তিনি বলেন, “কে দায় স্বীকার করল, কে করেনি সেটা উদ্বেগের বিষয় না। ট্রাফিক বক্সে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে সেটাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।”
‘শক্তিশালী বোমা’
বোমাটিতে ক্ষয়ক্ষতি খুব বেশি না হলেও সেটিতে প্রাণহানি ঘটানোর মতো উপাদান ছিল বলে জানিয়েছেন সিএমপির বোমা বিষেজ্ঞরা।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার পলাশ কান্তি নাথ বলেন, “বিস্ফোরণে পাইপ বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল বলে আমরা আলামত পেয়েছি। দেশীয় প্রযুক্তি দিয়ে হাতে তৈরি বোমাগুলোতে ব্যবহৃত লোহার পাইপগুলো প্রায় পৌনে এক সেন্টিমিটারের মতো চওড়া ছিল। সেগুলোতে লোহার বল, পাঁচটি গ্যাস ক্যান ও বিস্ফোরক ছিল।”
তিনি বলেন, “যে কোনো বিস্ফোরক বাধা পেলেই তাতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। তবে ট্রাফিক বক্সটি লোহার পাতের উপর বসানো থাকায় নিচে ফাঁকা ছিল। এছাড়া দরজা, জানালা খোলা ছিল এবং জানালার কাঁচে স্টিকার লাগানো থাকায় কাঁচগুলো ভেঙে বেশি দূরে যেতে পারেনি। তাই ক্ষয়-ক্ষতিও খুব বেশি হয়নি।”