চট্টগ্রামে সন্ত্রাস বিরোধী আইনের দুটি মামলায় শহীদ হামজা ব্রিগেড নামের জঙ্গি সংগঠনের নেতা মনিরুজ্জামান ডন ও ‘অর্থ সহায়তাকারী’ আইনজীবী শাকিলা ফারজানাসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত।
Published : 20 Aug 2019, 08:04 PM
হাটহাজারীর মামলায় শাকিলাসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
‘হেফাজতের কথায়’ ডনের অ্যাকাউন্টে কোটি টাকা দেন শাকিলা
জঙ্গি অর্থায়ন: বিএনপি নেতার মেয়েসহ ৩ আইনজীবী গ্রেপ্তার
দুটি মামলাতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার সাড়ে তিনবছর পর মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল হালীম অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন।
এর মধ্যে দিয়ে আসামিদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হল।
অভিযোগ গঠনের সময় আদালতে উপস্থিত না থাকায় শাকিলা ফারজানার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
ব্যরিস্টার শাকিলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক এবং প্রয়াত বিএনপি নেতা ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে।
ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনোরঞ্জন দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাটহাজারী থানার মামলায় ৩৩ জন এবং বাঁশখালী থানার মামলায় ২৮ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বাঁশখালীর মামলাটির ২৮ আসামি হাটহাজারীর মামলাটিরও আসামি।”
তবে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন কবে রাখা হয়েছে তা জানাতে পারেননি তিনি।
মঙ্গলবার আদালতে শাকিলা ফারজানার অনুপস্থিতির কারণে সম্পর্কে তার আইনজীবী আবদুস সাত্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে আছেন। আমরা সময়ের আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
“শুনানিতে বলেছি- একজন আইনজীবী হিসেবে সরল বিশ্বাসে তিনি মক্কেলের কাছ থেকে মামলা পরিচালনার টাকা নিয়েছিলেন। তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ব্যাংক হিসেবের মাধ্যমেই তিনি টাকা ফেরত দিয়েছেন।”
২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীতে মাদ্রাসাতুল আবু বকর এ ‘জঙ্গিদের তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে’ অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সন্দেহে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
পরদিন র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন।
হাটহাজারীতে গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুইদিন পর বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় র্যাব। সেখানে গ্রেপ্তার হন আরও পাঁচজন।
গরু-ভেড়া ও মুরগির খামারের আড়ালে গড়ে তোলা ওই আস্তানায় ফায়ারিং জোনও ছিল।
ওই ঘটনায় একই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালী থানায় র্যাবের উপ-সহকারী পরিচালক গোলাম রব্বানি বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী ও অস্ত্র আইনে মামলা করেন।
এরপর ২০১৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হালিশহরের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কে ব্লকের ১ নম্বর লেইনের ১/১৯ নম্বর বাড়ির দোতলা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
হালিশহরের ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করা সরঞ্জামের মধ্যে ছিল ৭৬টি বোমা, ২৪ রাউন্ড গুলি, পাইপ বোমা তৈরির জন্য খালি পাইপ ও খালি পানির ফ্লাক্স।
বিস্ফোরক দ্রব্যের মধ্যে ছিল ৫০ কেজি অ্যালুমিনিয়াম ডাস্ট, ৩৫ কেজি পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ১০ কেজি সালফার, আট কেজি সোডিয়াম অ্যামাইড, পাঁচ লিটার নাইট্রোবেনজিন, চার কেজি আর্সেনিক ডি সালফাইড, ২৮০০ গ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও দুই কেজি চারকোল।
এছাড়া ৮৬ জোড়া জাঙ্গল বুট, ৯৭ জোড়া পিটি শু, ৯৬ জোড়া নাইলন বেল্ট ও ১৮৫ জোড়া মোজা পাওয়া যায় ওই বাড়িতে।
ওই বছরের ১৩ এপ্রিল বিপুল অস্ত্রসহ আরো চারজনকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানায় হাটহাজারী, বাঁশখালী ও হালিশহরে গ্রেপ্তার হওয়ারা নতুন জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের সদস্য।
এরপর ২০১৫ সালের ১৮ অগাস্ট ঢাকার ধানমণ্ডি থেকে সহকর্মী দুই আইনজীবীসহ গ্রেপ্তার হন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাকিলা ফারজানা।
২০১৬ সালের ২০ মার্চ বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় র্যাব।
এরপর ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল হাটহাজারী থানায় করা সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় শাকিলাসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় র্যাব।
গ্রেপ্তারের পর মনিরুজ্জামান ডান র্যাবকে জানিয়েছিলেন, আল্লামা লিবদি নামে মধ্যপ্রাচ্যের এক নাগরিকও হামজা ব্রিগেডকে অর্থ সহায়তা করে। আল্লামা লিবদি বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে এসেছে এবং নগদে ও ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ সহায়তা করত।
২০১৪ সালের অগাস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ধানমন্ডি সাত মসজিদ শাখার মাধ্যমে সানজিদা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে শাকিলা ফারজানা ২৫ ও ২৭ লাখ টাকা করে দুই দফায় ৫২ লাখ টাকা, তার দুই সহকারী হাসানুজ্জামান লিটন ৩১ লাখ এবং মাহফুজ চৌধুরী বাপন ২৫ লাখ টাকা জমা করেন বলে র্যাব জানায়।
হেফাজতের নেতাদের জামিন করাতে নেওয়া ওই অর্থ শাকিলা ব্যাংক হিসাবে ফেরত দিয়েছিলেন বলে দাবি তার আইনজীবীর।
তখন র্যাব জানিয়েছিল, ব্যাংক হিসাবটি শহীদ হামজা বিগ্রেডের ‘ব্লু গ্রুপের’ নেতা মনিরুজ্জামান ডনের, যিনি আগে ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।