‘হেফাজতের কথায়’ ডনের অ্যাকাউন্টে কোটি টাকা দেন শাকিলা

হেফাজতে ইসলামের দুই কর্মীর কথায় ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা শহীদ হামজা বিগ্রেডের সংগঠক মনিরুজ্জামান ডনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক কোটি আট লাখ টাকা দিয়েছিলেন বলে তার আইনজীবী দাবি করেছেন।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2015, 04:11 PM
Updated : 28 Nov 2018, 11:04 AM

হেফাজত নেতাদের সাড়ে তিনশ মামলা পরিচালনার জন্য তাদের কাছ থেকে শাকিলা ওই টাকা পেয়েছিলেন এবং চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে না পারায় তা ফেরত দেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

তবে শাকিলা ফারজানা এবং তার সঙ্গে গ্রেপ্তার অপর দুই আইনজীবীর সঙ্গে মামলা পরিচালনা নিয়ে কোনো যোগাযোগ এবং টাকা লেনদেনের কথা অস্বীকার করেছেন হেফাজত নেতারা।      

শকিলার আইনজীবী আবদুস সাত্তার বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সানজিদা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করেছিলেন শাকিলা। তবে সে সময় অ্যাকাউন্টটি যে মনিরুজ্জামান ডনের তা তার জানা ছিল না।

বুধবার বিকালে চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোছাদ্দেক মিনহাজের আদালতে তিন আইনজীবীর জামিন শুনানির শুনানির সময় শাকিলা ফারজানার সঙ্গে তার কথা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী আবদুস সাত্তার।

“তিনি জানিয়েছেন, ওসমান আমিন নামের এক ব্যক্তি নিজেকে হেফাজতের লোক পরিচয় দিয়ে তার সাথে দেখা করেন। হেফাজতের সাড়ে তিনশ মামলা পরিচালনার এবং এসব মামলায় আসামিদের জামিন করানোর প্রস্তাব দেন।”

এদিকে বুধবার চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শহীদুল ইসলামের আদালতে হাটহাজারী থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় শাকিলা যে জবানবন্দি দেন সেখানেও এ  বিষয়টির উল্লেখ আছে।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে শাকিলা বলেন,  ২০১৪ সালের মে মাসে ওসমান আমিন ও মাসুম নামের দুজন হেফাজতের মামলা পরিচালনার প্রস্তাব নিয়ে আসেন। ওসমান আমিন নিজেকে শিপিং ব্যবসায়ী ও চট্টগ্রামের খুলশীর বাসিন্দা পরিচয় দেন।

“মুফতি হারুণ ইজাহারের মামলাসহ সাড়ে তিনশ মামলা পরিচালনার জন্য ২০১৪ সালের জুন থেকে জুলাইয়ের মধ্যে চার কিস্তিতে ওসমান আমিন ও মাসুম মোট এক কোটি ২০ লাখ টাকা দেন।

“তবে মামলায় গ্রেপ্তার হেফাজতের নেতাকর্মীদের জামিন করাতে না পারায় ওসমান আমিন ও মাসুম  টাকা ফেরত দিতে চাপ দিতে থাকেন। ওসমান আমিন সানজিদা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে টাকা ফেরত দিতে বলেন। ওসমান জানান এটি তার ব্যাংক হিসাব।”

এরপরই ২০১৪ সালের অগাস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ধানমন্ডি সাত মসজিদ শাখার মাধ্যমে সানজিদা এন্টারপ্রাইজের ওই ব্যাংক হিসাবে শাকিলা নিজে এবং আইনজীবী হাসানুজ্জামান লিটন ও মাহফুজ চৌধুরী বাপন মোট এক কোটি আট লাখ টাকা জমা করেন।

ওই ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দেওয়ার স্লিপে নিজেদের নাম লেখার কথা জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন তিন আইনজীবী।

শাকিলার আইনজীবী আবদুস সাত্তার বলেন, “মামলা আর পরিচালনা করতে রাজি না থাকায় তিনি টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছেন। কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে তিনি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা ফেরত দিতেন না।”

শাকিলা ফারজানা ২৫ ও ২৭ লাখ টাকা করে দুই দফায় ৫২ লাখ টাকা, হাসানুজ্জামান লিটন ৩১ লাখ এবং বাপন ২৫ লাখ টাকা ওই ব্যাংক হিসাবে জমা করেছেন বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

ব্যাংক হিসাবটি শহীদ হামজা বিগ্রেডের ‘ব্লু গ্রুপের’ নেতা মনিরুজ্জামান ডনের বলে জানিয়েছেন তারা।

গত ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর কাজীরদেউড়ি থেকে ডনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ২২ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালী উপজেলার দুর্গম লটমণি পাহাড় থেকে যেসব অস্ত্র ও জঙ্গি প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম পাওয়া যায় তা হামজা ব্রিগেডের বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন।

তবে ব্যাংকে টাকা জমা করার সময় অ্যাকাউন্টটি মনিরুজ্জামন ডনের তা তার জানা ছিল না বলে জবানবন্দিতে বলেছেন শাকিলা ফারজানা।

মামলা পরিচালনার জন্য টাকা দেওয়া ওসমান আমিনকে গ্রেপ্তার করা গেলে পুরো এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে দাবি করেছেন তার আইনজীবী আবদুস সাত্তার।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবুল হাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “মনিরুজ্জামান ডন জবানবন্দিতে বলেছেন, সানজিদা এন্টারপ্রাইজের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এবং এ টাকা দিয়ে বাঁশখালীতে জঙ্গি প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র কেনা হয়েছে।

“ওই অ্যাকাউন্টে টাকা লেনেদেনর বিষয়টি শাকিলাও আদালতে স্বীকার করেছেন। মামলা না চালানোই টাকা ফেরত দেওয়ার যে দাবি এখন করা হচ্ছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।”

হেফাজতের অস্বীকার

ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা জবানবন্দিতে হেফাজতের সাড়ে তিনশ মামলা পরিচালনার জন্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা পাওয়ার যে দাবি করেছেন তা অস্বীকার করেছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা।

মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যারিস্টার শাকিলা ফারাজানা বা অপর দুই আইনজীবীকে দিয়ে হেফাজতের কোনো মামলা পরিচালনা করা হয়নি। সুতরাং কোন প্রকার অর্থ দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।” 

এছাড়া ওসমান আমিন ও মাসুম নামে তাদের কোনো নেতা বা কর্মী নেই বলেও দাবি করেন তিনি।