জঙ্গি অর্থায়ন: বিএনপি নেতার মেয়েসহ ৩ আইনজীবী গ্রেপ্তার

বিএনপি নেতা সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাসহ তিন আইনজীবীকে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

নিজস্ব প্রতিবেদকও চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2015, 06:01 AM
Updated : 24 August 2015, 08:09 AM

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াহিদুলের মেয়ে শাকিলা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী।

গ্রেপ্তার অন্য দুজনের মধ্যে মো. হাসানুজ্জামান লিটন সুপ্রিম কোর্টের এবং মাহফুজ চৌধুরী বাপন ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী।

ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর তাদের নিয়ে বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় র‌্যাব-৭ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

গ্রেপ্তার তিন আইনজীবীকে আদালতের মাধ্যমে চার দিনের রিমান্ডে পেয়েছে র‌্যাব।

জঙ্গি অর্থায়নে তিন আইনজীবীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, “এটি আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়।”

জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগ্রেড’ এর অন্যতম সংগঠক মনিরুজ্জামান ডনের ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা এবং আদালতে তার দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে এই আইনজীবীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা উদ্দিন।

গত ফেব্রুয়ারিতে হাটহাজারীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হামজা ব্রিগেডের ২৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার করে র‌্যাব। তার আগে ডনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

এই সংগঠনটি এনজিওর আদলে কাজ গোছানোর পরিকল্পনা করছিল বলে র‌্যাব কর্মকর্তাদের দাবি।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা বলেন, আদালতের নির্দেশনা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে হামজা ব্রিগেডের জন্য সংগৃহীত ১ কোটি ৮ লাখ টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে।

“এর মধ্যে গ্রেপ্তার আইনজীবীরা জমা করেছেন ১ কোটি আট লাখ টাকা। শাকিলা ফারজানা ২৫ ও ২৭ লাখ টাকা করে দুই দফায় ৫২ লাখ টাকা, হাসানুজ্জামান লিটন ৩১ লাখ এবং বাপন ২৫ লাখ টাকা করে জমা করেন।”

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা বলেন, হামজা ব্রিগেডের ‘ব্লু গ্রুপের’ নেতা মনিরুজ্জামান ডনের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে গ্রেপ্তারকৃতরা অর্থ সহায়তা করতেন।

“ডন আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছে, তার একাউন্টের টাকা দিয়ে সংগঠনের জন্য অস্ত্র কেনাসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হত।”

শাকিলা ফারজানা ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা করতেন বলেও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ডন স্বীকার করেন বলে দাবি র‌্যাবের।

“বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট অ্যামাউন্টের বেশি টাকা দিলে ফরম পূরণ করার বাধ্যবাধকতা আছে। গ্রেপ্তারকৃতরা সেসব ফরম পূরণ করেই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতেন।”

ওয়াহিদুল আলমের মেয়েকে গ্রেপ্তারের পেছনে রাজনৈতিক কোনো কারণ নেই দাবি করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা বলেন, “আমরা আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি, ব্যাংক এভিডেন্স পেয়ে তাকে ধরেছি। উনি (শাকিলা) আদালতে গিয়ে প্রমাণ করুক, টাকা জমা দেননি।”

সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা উদ্দিন

শহীদ হামজা ব্রিগেডের আরও কিছু ব্যাংক হিসেবের খবর পেয়েছেন জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, “এসব অ্যাকাউন্টও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অর্থ জোগানদাতা আরও কয়েকজন আছে।”

গত ফেব্রুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত এই সংগঠনটির ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে ২৮ জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার আইনজীবীরা ছাড়াও আল্লামা লিবদি নামে দুবাইয়ের এক নাগরিকও হামজা ব্রিগেডকে অর্থ সহায়তা করে থাকেন বলে র‌্যাব জানতে পেরেছে।

“জবানবন্দিতে ডন বলেছে, আল্লামা লিবদি বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে এসেছিল এবং তিনি নগদে ও ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ সহায়তা করত,” বলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা।  

গ্রেপ্তার আইনজীবীদের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানা ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাদের আদালতে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে চাওয়া হবে। তখন এইসব টাকা কীভাবে তাদের কাছে এসেছে সেগুলো জানা যাবে।

এরপর তিন আইনজীবীকে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের হেফাজতে চেয়ে আবেদন করে র‌্যাব।

শুনানি শেষে হাকিম মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন তিন দিন হেফাজতের আদেশ দেন বলে শাকিলা ফারজানার আইনজীবী কপিল উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

এনজিওর আদলে কাজের পরিকল্পনা

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীর ‘আল মাদরাসাতুল আবু বকর’, ২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়, ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হামজা ব্রিগেডের মোট ২৯ জনকে গ্রেপ্তার ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক উদ্ধার ও এগুলোর জোগানদাতাদের গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

জঙ্গি দল ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ এর চার সদস্যকে গত এপ্রিলে এসব অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতারা আগে ইসলামী ছাত্রশিবির ও হেফাজতে ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন দাবি করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা বলেন, “লাভ ফর রোহিঙ্গা (এলএফআর) নাম দিয়ে একটি এনজিওর আদলে শহীদ হামজা ব্রিগেড তাদের কাজ শুরুর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু সফল হয়নি।”

এই সংগঠনটি চট্টগ্রামভিত্তিক হলেও তাদের কর্মীরা চট্টগ্রামের বাইরের বিভিন্ন জেলার বলে জানান তিনি।

র‌্যাব কর্মকর্তা মিফতা বলেন, সদস্য সংগ্রহ ও মানুষের সহানুভূতি আদায়ের জন্য হামজা ব্রিগেডের সংগঠকরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণার পাশাপশি বিভিন্ন দেশে কোরান অবমাননার বিষয়টি মানুষকে দেখাত।

এই সংগঠনের আরও সদস্যদের ধরতে এবং অর্থের উৎস ও জোগানদাতাদের শনাক্তে র‌্যাব কাজ করছে বলে জানান তিনি।