এ বাহিনীর সহকারী পুলিশ সুপার মো. জালাল উদ্দিন আহাম্মদ বুধবার রাতে চট্টগ্রাম আদালতের জিআর (সাধারণ নিবন্ধন) শাখায় অভিযোগপত্রটি জমা দেন।
মামলার ১১ আসামির মধ্যে একজন পলাতক, বাকিরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন বলে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মিফতা উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি হালিশহরের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কে ব্লকের ১ নম্বর লেইনের ১/১৯ নম্বর বাড়ির দোতলা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধারের পর এই মামলা করে র্যাব।
ঘটনার দিন ওই বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন কক্সবাজারের পেকুয়া থানার বাসিন্দা ফয়জুল হক, তার বোন রহিমা আক্তার, বোনের ছেলে জায়েদুল্লাহ ও বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জের বাসিন্দা আবদুল হাই।
অভিযোগপত্রে নাম আসা বাকি সাতজন হলেন- হামজা ব্রিগেডের সামরিক কমান্ডার মনিরুজ্জামান ওরফে ডন, আনোয়ার হোসেন, মো. শামসুদ্দিন, রাকিব হাসান, নাসির উদ্দিন খান, পারভেজ এবং ফয়জুলের ছোট ভাই আজিজুল হক।
আসামিদের মধ্যে পারভেজ এখনো পলাতক বলে লেফট্যানেন্ট কর্নেল মিফতা উদ্দিন জানান।
২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীতে জঙ্গি সন্দেহে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুই দিন পর বাঁশখালীর পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে গ্রেপ্তার হন আরও পাঁচজন।
এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি হালিশহরের ওই বাসায় পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক।
তবে এই তিনটি ঘটনার সঙ্গে নতুন জঙ্গি দল ‘শহীদ হামজা বিগ্রেড’ এর জড়িত থাকার কথা র্যাব কর্মকর্তারা জানতে পারেন গত বছর এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে নগরীর কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচটি রাইফেল ও পাঁচটি পিস্তলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করার পর।
র্যাব অধিনায়ক মিফতা উদ্দিন বলেন, “হাটহাজারী ও বাঁশখালীর দুটি ঘটনাও একই সংগঠনের। তবে আইন অনুসারে নির্দিষ্ট ঘটনায় যারা সংশ্লিষ্ট, কেবল তাদেরই আসামি করা যায়। তদন্তে হালিশহরের ওই বাসায় বিস্ফোরক মজুদের সাথে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে- তাদেরই আসামি করা হয়েছে।”
হালিশহরের ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করা সরঞ্জামের মধ্যে ছিল ৭৬টি বোমা, ২৪ রাউন্ড গুলি, পাইপ বোমা তৈরির জন্য খালি পাইপ ও খালি পানির ফ্লাক্স।
বিস্ফোরক দ্রব্যের মধ্যে ছিল ৫০ কেজি অ্যালুমিনিয়াম ডাস্ট, ৩৫ কেজি পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ১০ কেজি সালফার, আট কেজি সোডিয়াম অ্যামাইড, পাঁচ লিটার নাইট্রোবেনজিন, চার কেজি আর্সেনিক ডি সালফাইড, ২৮০০ গ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও দুই কেজি চারকোল।
এছাড়া ৮৬ জোড়া জাঙ্গল বুট, ৯৭ জোড়া পিটি শু, ৯৬ জোড়া নাইলন বেল্ট ও ১৮৫ জোড়া মোজা পাওয়া যায় ওই বাড়িতে।
র্যাব কর্মকর্তা মিফতা বলেন, “গ্রেপ্তার আসামিরা আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, নাশকতার জন্যই এসব বিস্ফোরক ওই বাড়িতে জড়ো করা হয়েছিল।”
বিস্ফোরক উদ্ধারের ওই ঘটনায় র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক এমজি রব্বানি হালিশহর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি দায়ের করেন। শুরুতে কিছুদিন পুলিশ তদন্ত করলেও পরে র্যাবই দায়িত্ব পায়।
আল্লামা লিবদি নামে দুবাইয়ের এক নাগরিক শহীদ হামজা ব্রিগেডকে অর্থায়ন করে বলে র্যাবের ভাষ্য।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, হালিশহরে বিস্ফোরক মজুদের ঘটনায় গ্রেপ্তার মনিরুজ্জামান ওরফে ডনের মাধ্যমে লিবদি টাকা যোগাচ্ছিলেন।
মামলার অভিযোগপত্রে আল্লামা লিবদিকে আসামি না করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মিফতা উদ্দিন বলেন, “এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলতে পারবেন।”