দিয়াজ ইরফান চৌধুরী আত্মহত্যা করেছেন বলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের যে চিকিৎকরা সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন, তাদের বক্তব্যের অসারতা তুলে ধরতে ফেইসবুকের শরণ নিয়েছেন এই ছাত্রলীগ নেতার মা জাহেদা আমিন চৌধুরী।
Published : 27 Dec 2016, 05:02 PM
দিয়াজের মৃত্যু ঘিরে নানা প্রশ্ন-সন্দেহ
দিয়াজ আত্মহত্যা করেছেন: ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন
দিয়াজের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ‘প্রভাবিত’, ফের অভিযোগ পরিবারের
দিয়াজের ‘খোয়া যাওয়া’ সনদ মিলল চবি ছাত্রাবাসের ডাইনিংয়ে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী জাহেদা মঙ্গলবার সকালে নিজের ফেইসবুক পাতায় ‘রাইটিং প্যাডে’ হাতে লেখা একটি পৃষ্ঠা ছবি হিসেবে দিয়েছেন; তাতে তিনি চমেকের অধ্যক্ষ ও চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেছেন, আত্মহত্যা কাকে বলে?
লেখার সঙ্গে দিয়াজের ঝুলন্ত অবস্থায় তোলা দুটি ছবিও পোস্ট করেছেন জাহেদা।
ক্যাম্পাসের বাসা থেকে গত ২০ নভেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক দিয়াজের লাশ উদ্ধার করা হয়।
শুরুতেই এটাকে হত্যা বলে দাবি করে দিয়াজের পরিবার। চট্টগ্রাম মেডিকেলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা ‘আত্মহত্যা’ বলার পর তা মেনে না নিয়ে হত্যা মামলা করেন জাহেদা।
এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুনরায় ময়নাতদন্ত হয় ১১ ডিসেম্বর। এবার ময়নাতদন্তকারীরা দেহে জখমের চিহ্ন পাওয়ার কথা জানালেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।
এর মধ্যেই ফেইসবুকে জাহেদা লিখেছেন- “চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, সকল ডাক্তারদের অনুরোধ করছি ড্রিল কাপড়ের (সুতি) মোটা ডাবল খাটের চাদর (আমার টাকা দিয়ে কিনে দিব) একি (একই) চাদর দিয়ে কোনো পশু প্রাণী ১টি মাত্র গিঁট দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে ফাঁসি দিন।
“কোনো পশু প্রাণী না পেলে- দিয়াজের ‘মা’ অর্থাৎ আমি প্রস্তুত আছি সে একি (একই) চাদর দিয়ে ১টি মাত্র গিঁট দিয়ে আমাকে ফাঁসি তে ঝুলিয়ে দিন। সারাদেশের মানুষ দেখুক আত্মহত্যা কাকে বলে। সারা শরীরে এমনকি পায়ে এভাবে দাগ পাওয়া যায় কি না। মোটা চাদর দিয়ে এভাবে গলা কাটে কি না।”
এর সঙ্গে দেওয়া ছবির একটিতে দেখা যায়, দিয়াজের শরীরে আঘাতের বিভিন্ন চিহ্ন। অন্য ছবিতে ঝুলন্ত দিয়াজের পা যে বিছানার উপর রাখা বালিশের সাথে লাগানো তা চিহ্নিত করা আছে।
দিয়াজের বোন জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন যে লেখাটি তার মা-ই দিয়েছেন, হাতের লেখাটিও তার মায়ের।
ক্যাম্পাসে নতুন কলা ভবন ও শেখ হাসিনা হলের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের ৯৫ কোটি টাকার দরপত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ।
দিয়াজের বোন জুবাঈদার অভিযোগ, প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরির সময় নিয়মবহির্ভূতভাবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ।
অধ্যক্ষের উপস্থিতি চট্টগ্রামের ‘এক নেতার’ নির্দেশে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ‘প্রভাবিত’ করার লক্ষ্যে বলেও দাবি জুবায়দার।
‘সত্য’ উদঘাটনে মেডিকেল কলেজটির অধ্যক্ষের মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাইয়ের দাবিও জানান জুবা্ঈদা।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের পরিদর্শন পিছিয়েছে
দিয়াজের লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে চট্টগ্রামে আসার কথা ছিল।
কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এএসপি অহিদুর রহমান ফোনে দিয়াজের পরিবারকে জানিয়ে দেন, ঢাকার চিকিৎসকরা বুধবার আসছেন না।
সোমবার সিআইডি কর্মকর্তা ও মামলার তদন্তকারী অহিদুর রহমানকে ফোন করে বুধবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ঘটনাস্থলে আসবেন বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ।
অহিদুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল তিনি (সোহেল মাহমুদ) ফোন করে আমাকে বুধবার আসার বিষয়ে জানান। এরপর আমি দিয়াজের পরিবার ও সাংবাদিকদের জানিয়ে দিই।
“আজ তিনি আবার ফোন করে বলেন, তাদের অসুবিধা আছে- আসতে পারবেন না: ১ জানুয়ারি আসবেন।”
দিয়াজের বোন জুবাঈদা বলেন, “ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা বুধবার আসবেন বলেছিল। আজ দুপুর ১২টায় সিআইডি কর্মকর্তা জানালেন, তারা ১ জানুয়ারি আসবেন।
“৩০ ডিসেম্বর আমরা ওই বাসা ছেড়ে দেয়ার কথা। চিকিৎসকরা এত সময় কেন নিচ্ছেন, বুঝতে পারছি না।”
রোববার চট্টগ্রাম সফরে আসা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজের মৃত্যু নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মুখে পড়েছিলেন।
তিনি বলেন, “দিয়াজের মৃত্যুর বিষয়টি কনফিউজিং। সিআইডির পূর্ণ তদন্ত হওয়ার পর বিষয়টি পরিষ্কার হবে।”
আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন কবে জমা দেবেন- জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা অহিদুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনও পাইনি। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা ডিএনএ টেস্ট ও ভিসেরা পরীক্ষার জন্য দিয়েছেন। সেগুলো পেতে সময় লাগবে।
“ময়নাতদন্ত ও অন্যান্য প্রতিবেদন পেলে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।”