চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের পরদিনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রাবাসের ডাইনিংয়ের পাশে মিলল তার স্নাতক আর তার বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ।
Published : 12 Dec 2016, 03:47 PM
পরিবারের দাবি, গত ২০ নভেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের সময় থেকেই ওই দুটি সনদ আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
এর আগে গত ৩১ অক্টোবর রাতে দিয়াজের বাসায় ভাংচুরের সময় অন্যান্য জিনিসপত্রের সঙ্গে এসব সনদও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি আলমগীর টিপুর অনুসারীরা সার্টিফিকেট দুটি ফিরিয়ে দিয়েছিল বলে দাবি দিয়াজের পরিবারের।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের ডাইনিংয়ের পাশে খোলা জায়গায় ঝাড়ু দেওয়ার সময় সনদ দুটি খুঁজে পান কর্মচারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সনদ দুটি দেখে মনে হচ্ছে এগুলো কেউ তাৎক্ষণিকভাবে ফেলে গেছে। কারণ যদি রাতে ফেলত তাহলে ওগুলো ভেজা থাকত। সনদগুলো এখন আমাদের কাছে আছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিয়াজের বোন আইনজীবী জুবাইদা সারওয়ার চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন সনদ পাওয়ার মানে হচ্ছে এগুলো খুনিরা নিয়ে গিয়েছিল। এখন ফেলে গেছে। বিষয়টি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সিআইডিকে জানিয়েছি।”
সেই বিরোধ, চাঁদা দাবিসহ নানা কারণে ‘ষড়যন্ত্র’ করে দিয়াজকে ‘হত্যার পর লাশ ঘরে ঝুলিয়ে’ রাখা হয় বলে দাবি তার পরিবারের।
জুবাইদা জানান, গত ৩১ অক্টোবর ক্যাম্পাসের দুই নম্বর গেট এলাকায় দিয়াজের বাসাসহ ছাত্রলীগের চার নেতা-কর্মীর বাসায় হামলা ও লুটপাট চালানো হয়।
“সেদিন আমার মায়ের স্বর্ণালংকার, দিয়াজের ল্যাপটপ আর সনদপত্রগুলো নিয়ে যায় আলমগীর টিপুর অনুসারীরা।”
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু ও দিয়াজ দুজনেই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
জুবাইদা বলেন, লুটপাটের পর তারা মেয়রের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেন। তাদের সামনেই মেয়র ফোন করে টিপুকে জিনিসপত্র ফিরিয়ে দিতে বলেন।
“নভেম্বরের ১০ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ছোট ভাই মিরাজ ইরফান চৌধুরীর সাক্ষাৎকার ছিল। সেখানে আমাদের বাবা ছরওয়ার কামালের মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রয়োজন ছিল। মেয়র বলে দেয়ার পর টিপু ফোনে দিয়াজের সাথে যোগাযোগ করে জানায়, এক ছোট ভাই সার্টিফিকেটগুলো দিয়ে যাবে।”
জুবাইদা বলেন, এরপর দিয়াজ তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা চেয়ে বলেছিলেন, সার্টিফিকেট ফিরিয়ে দিতে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেছে টিপুর অনুসারীরা। তিনি টাকা দিলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমতিয়াজ অভি ৮ নভেম্বর সার্টিফিকেটগুলো ফিরিয়ে দিয়ে যান।
“মিরাজ ঢাকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে ফেরার পর বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়াজের কাছেই ছিল। ও মৃত্যুর দিন থেকে আর সেসব সনদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।”
ওইদিন থেকে দিয়াজের মোবাইল ফোন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীতে পড়া ব্লেজারও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান জুবাইদা।
তিনি বলেন, “১৮ নভেম্বর আমি দিয়াজের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া মা’র স্বর্ণালংকার আর ল্যাপটপ কখন ফেরত পাওয়া যাবে। দিয়াজ বলেছিল ২০ নভেম্বর ওরা ল্যাপটপ ফেরত দেবে বলেছে। তারপরই গয়নার বিষয়ে কথা বলবে।”
দিয়াজের মৃত্যুর পর ২১ নভেম্বর প্রথম দফায় ময়নাতদন্ত করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের তিন চিকিৎসক। ২৩ নভেম্বর তারা যে প্রতিবেদন দেন, সেখানে দিয়াজের মৃত্যুর কারণ ‘আত্মহত্যা’ লেখা হয়।
ওই ময়নাতদন্ত প্রত্যাখ্যান করে দিয়াজের পরিবার অভিযোগ করে, প্রভাবশালীরা প্রতিবেদন প্রভাবিত করেছে। পরদিন আলমগীর টিপু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী।
এরপর তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজে দিয়াজের দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দিয়াজের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা জানালেও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করে বলেছেন, চট্টগ্রামের ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে তারা প্রতিবেদন দেবেন।
দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের পর রোববার গভীর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে দিয়াজের লাশ আবার দাফন করা হয়।