মুখ্য নির্বাচন কর্মকর্তা তারিক আহমদ বলেন, “আগের নির্বাচন যেহেতু হয়নি তাই সেই তফসিলও আর নেই। তাই নতুন করে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।”
Published : 08 Apr 2025, 10:20 PM
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের জন্য নতুন তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে আগামী ১৬ এপ্রিল ভোটগ্রহণের দিন রাখা হয়েছে।
সমিতির নির্বাচনের উদ্দেশ্যে গঠিত এডহক কমিটি কর্তৃক গত ১৮ মার্চ ৫ সদস্যের যে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিল তারাই মঙ্গলবার সভা করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করল।
নির্বাচন কমিশনের মুখ্য নির্বাচন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট তারিক আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামী ১৬ এপ্রিল ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।”
এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণার পরও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়নি। ভোটের ছয় দিন আগে ৪ ফেব্রুয়ারি সে সময়ের নির্বাচন কমিশনের ৫ সদস্যই পদত্যাগ করেছিলেন।
পদত্যাগপত্রে বিভিন্নভাবে ‘হেনস্তা, ভয়ভীতি ও হুমকির সম্মুখীন’হওয়ার কথা উল্লেখ করেছিলেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা।
নির্বাচন না হলেও ১০ ফেব্রুয়ারি সমিতির নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি সমিতির সাধারণ সভায় ৫ সদস্যের একটি এডহক কমিটি গঠন করা হয়।
পরদিন ১৭ ফেব্রুয়ারি এডহক কমিটিকে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় এ কে এম মকবুল কাদের চৌধুরীকে। কমিটির অন্য চার সদস্য হলেন অ্যাডভোকেট শামসুল আলম, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, জহুরুল আলম ও রফিক আহম্মদ।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির বিধান অনুসারে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসেবে ১৭ এপ্রিলের মধ্যে ভোট গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এডহক কমিটির।
মঙ্গলবার ঘোষিত তফসিল অনুসারে সমিতির ২১টি পদের জন্য বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয় বার লাইব্রেরি থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল করতে হবে।
পরদিন শুক্রবার মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হবে। শনিবার বিকেল ৩টায় মনোনয়নপত্রের বৈধতা সংক্রান্ত আপত্তি শুনানি ও সিদ্ধান্ত এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে।
১৬ এপ্রিল বুধবার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
মুখ্য নির্বাচন কর্মকর্তা তারিক আহমদ বলেন, “আগের নির্বাচন যেহেতু হয়নি তাই সেই তফসিলও আর নেই। তাই নতুন করে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।”
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন আয়োজনের জন্য গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর প্রথমবার নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু ৫ সদস্যের ওই কমিটিতে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ আছে এমন অভিযোগ উঠে। পরে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হয়।
এরপর আরও দু’বার নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। সবশেষ ১৪ জানুয়ারি মোহাম্মদ সোলায়মানকে প্রধান করে চতুর্থবারের মত নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।
তাদের ঘোষিত তফসিল অনুসারে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। বাছাই শেষে ২১ পদে ৪০ জন প্রার্থী চূড়ান্ত হয়। তারা সবাই ভোটের জন্য প্রচারও চালাচ্ছিলেন পুরোদমে।
তাতে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা আইনজীবী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এবং আওয়ামীপন্থি ও সমমনারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। যদিও অতীতে আওয়ামীপন্থিরা আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিতেন।
এর মধ্যে গত ২৬ জানুয়ারি আদালত প্রাঙ্গণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার এবং তারা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন সেই দাবি জানানো হয়।
ওই পরিস্থিতিতে ৪ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ একটি দরখাস্ত দিয়ে ভোটগ্রহণের দিন সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগের প্রস্তাব করে। অন্যদিকে ঐক্য পরিষদ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থক আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের মনোনয়ন বাতিলের জন্য আবেদন করে নির্বাচন কমিশনের কাছে।
সেদিন পদত্যাগপত্রে নির্বাচন কমিশন বলেছিল, “উভয়পক্ষের পারস্পরিক অবস্থান নির্বাচনের প্রতিকূল হওয়ায় এবং নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে বিভিন্নভাবে হেনস্তা, ভয়ভীতি ও হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।
“এমতাবস্থায় আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন করার কোনো সুযোগ বা পরিবেশ বিদ্যমান নেই বিধায় নির্বাচন কমিশন সর্বসম্মতভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে অপারগতা প্রকাশ করে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।”
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ১৩২ বছরের ইতিহাসে নির্বাচন না হওয়ার কোন নজির নেই জানিয়ে একাধিক আইনজীবী সেদিন বলেছিলেন, বহিরাগতরা আদালত অঙ্গনের বিষয়ে সম্পৃক্ত হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং চট্টগ্রাম বারের ঐতিহ্য নষ্ট হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ, ঝুলে গেল চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির ভোট