আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পরও ধোঁয়ার তীব্রতায় মার্কেটের ভেতরে প্রবেশ করা যাচ্ছিল না, বলছে ফায়ার সার্ভিস।
Published : 28 Jun 2024, 09:39 PM
চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজারের দোকান ব্রাদার্স টেলিকম মোহাম্মদীয়া প্লাজায় হলেও এর আরেকটি দরজা রেজুয়ান কমপ্লেক্সে; লাগোয়া দুটি ভবনের ঘিঞ্জি পরিবেশে সুযোগ নেই আলো-বাতাস ঢোকার।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যখন মোবাইল সরঞ্জামের এ দোকানে আগুন লাগে, তখন ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠে যায় পাঁচতলা পর্যন্ত।
আগুনে না পুড়লেও তীব্র ধোঁয়ায় বের হতে না পেরেই দম বন্ধ হয়ে প্রাণ যায় তিনজনের; হাসপাতালে ভর্তি আছেন দুজন।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, আলো-বাতাস প্রবেশের সুযোগ না থাকায় ধোঁয়া বের হতে পারেনি। ফলে ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে হতাহত হয়েছে বেশি।
পাঁচ তলা মোহাম্মদীয়া প্লাজায় বিভিন্ন মোবাইল সরঞ্জামের দোকানের পাশাপাশি অফিসও রয়েছে। ছাদের একপাশে পাকা ঘর আর অপরপাশে টিনশেড ঘরে মেস বানিয়ে থাকেন দোকান কর্মচারীদের অনেকেই।
যে দোকানে আগুনের সূত্রপাত, সেই ব্রাদার্স টেলিকমের পাশের দোকান ‘অ্যাওয়ে টেলিকমের’ মালিক রিদয়ানুল হক বলেন, তার দোকান দ্বিতীয় তলায় হলেও তিনি থাকেন ছয়তলায় মেসে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দোকান বন্ধ করে মেসে যান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রাত দেড়টার দিকে ঘরে ধোঁয়া দেখে দৌড়ে নিচে নেমে আসি। ওই সময় দেখি ব্রাদার্স টেলিকম থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। দোকানের শাটার বন্ধ থাকার পরও প্রচুর পরিমাণে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। শ্বাস প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। তখন আমি দৌঁড়ে নিচে নেমে যাই।”
ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোহাম্মদীয়া প্লাজার ছাদে টিন শেড বাসাও আছে। তার পাশেই আরও কয়েকটি বহুতল ভবন। আলো-বাতাস চলাচলের রাস্তা না থাকার কারণে আগুনের ধোঁয়া বের হতে পারেনি।
”যারা হতাহত হয়েছে, তারা কেউ দগ্ধ হয়নি। ধোঁয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পারায় হতাহত হয়েছে বেশি।”
ভবনটিতে রাত দেড়টার দিকে আগুন লাগলেও ফায়ার সার্ভিসের চারটি স্টেশনের আটটি ইউনিট পাঁচ ঘণ্টা পর ভোরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় মো. রিদুয়ান (৪৫), মো. শাহেদ হোসেন (২০) ও মো. ইসমাইল হোসেন ইকবাল (১৮) নামে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
মেরিনা পারভিন (৩৫) ও তার নয় বছর বয়েসী মেয়ে জান্নাতুল আক্তার হাজেরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তিতে আহতদের ১৫ হাজার টাকা করে এবং নিহতদের দাফনে ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।
মোহাম্মদীয়া প্লাজার বাসিন্দারা জানান, ছাদে টিনশেড ঘরে থাকতেন রিদুয়ান, পাঁচ তলায় থাকতেন শাহেদ। পরদিন ছুটির দিন হওয়ায় ইকবাল রাতে বন্ধু শাহেদের বাসায় এসেছিলেন।
আগুন লাগার কারণ হিসেবে প্রাথমিক অনুসন্ধানে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটকেই সূত্রপাত মনে করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আগুনে পাঁচটি দোকান পুড়েছে। আগুনের ব্যাপ্তি বড় না হলেও আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সময় লেগেছে। ভবনগুলো এত লাগোয়া যে আমাদের গাড়ি প্রবেশ করে না। মূল সড়কে গাড়ি রেখে পাইপ টেনে পানি দিতে হয়েছে।
“আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর আমরা মার্কেটে প্রবেশ করলেও ধোঁয়ার কারণে পুনরায় বের হয়ে যেতে হয়েছে। এত বেশি ধোঁয়া সেখানে দাঁড়ানো যাচ্ছিল না। পরে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সরঞ্জাম পরে প্রবেশ করতে হয়েছে।”
চট্টগ্রাম নগরীর সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র রেয়াজউদ্দিন বাজার গড়ে উঠেছে বড় এলাকাজুড়ে। একটির সঙ্গে আরেকটি লাগোয়া ছোট বড় শতাধিক মার্কেট রয়েছে সেখানে।
সবজি, কাপড়, জুতা, কসমেটিকস, ইলেকট্রনিক্স, মোবাইল ও ফলমূলসহ সবকিছুই মেলে এ বাজারে। বেশকিছু খাবারের দোকান রয়েছে, যেখানে রান্না হয় সিলিন্ডার গ্যাসে।
নিচ তলার দোকানের ওপরে থাকা গুদামগুলোকে বাজারটির ‘বড় সমস্যা’ বলে চিহ্নিত করে আসছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ইন্টারনেট ও ডিস লাইনের তার।
২০১৯ সালে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের তরফ থেকে রেয়াজউদ্দিন বাজার, টেরিবাজারসহ নগরীর ৪২টি বিপণি বিতান ও ব্যবসাকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন-
চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ৩ জনের মৃত্যু
গভীর রাতে চট্টগ্রামে রেয়াজউদ্দিন বাজারে আগুন, ধোঁয়ার কুণ্ডলী