ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা ফয়েজ উল্ল্যাহ বলেন, “কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে বলছে পেঁয়াজ নেই। কিন্তু তাদের আড়তের ভেতরে গিয়ে আমরা পেঁয়াজ পেয়েছি।”
Published : 09 Dec 2023, 09:21 PM
ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবর আসার পর ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দর দ্বিগুণ করে দেওয়ার পর চট্টগ্রামের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে মোট দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করা হয়েছে আগের দরে বিক্রিতে।
এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয় ৫০ হাজার টাকা করে, দুটির কাছ থেকে আদায় করা হয় ২০ হাজার টাকা করে এবং একটিকে জরিমানা করা হয় ১০ হাজার টাকা।
আড়তদার ও পাইকাররা ‘পেঁয়াজ নেই’ দাবি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করলেও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কয়েকটি আড়তে গিয়ে পেঁয়াজের অস্তিত্বও খুঁজে পেয়েছে।
শুক্রবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার খবর জানার পর দেশজুড়েই শুরু হয় হুলুস্থুল। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জেও দেখা যোয় অস্বাভাবিক চিত্র।
শুক্রবার সকালে সেখানে পাইকারিতে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৯০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে। বিকেলে ভারতের ঘোষণা আসার পর ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়তে বাড়তে চড়ে ১৭০ টাকা।
শনিবার সকালে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তা আরও বেড়ে হয় ২২০ টাকা। এই অবস্থায় মাঠে নামে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
সকালে নগরীর আগ্রাবাদের কর্ণফুলী বাজারে অভিযানে গিয়ে ফারুক স্টোর এবং আলিফ ট্রেডার্স নামের দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে তারা।
দুপুরে খাতুনগঞ্জে বরকত ভান্ডার ও কে ট্রেডার্সকে ২০ হাজার করে ও এইছ ট্রেডার্সকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সন্ধ্যায় খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীতে অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে দুটি দল।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্ল্যাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে বলছে পেঁয়াজ নেই। কিন্তু তাদের আড়তের ভেতরে গিয়ে আমরা পেঁয়াজ পেয়েছি।”
তিনি বলেন, “যেভাবে গতকাল থেকে আজ সকালের মধ্যে দাম বেড়েছে এর কোনো যুক্তি নেই। এটা জুলুমের পর্যায়ে পড়ে। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ আছে। তবে অন্য সময়ে তুলনায় পরিমাণে কিছুটা কম।”
জরিমানা করার পর সেখানকার পাইকারি আড়তগুলোকে শুক্রবারের দামে পেঁয়াজ বিক্রির নির্দেশনা দেয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
ফয়েজ উল্ল্যাহ বলেন, “আমরা দাঁড়িয়ে থেকে ১১০-১২০ টাকা দরে দেশি পেঁয়াজ এবং ১২০টাকা কেজি দরে ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি করেছি।”
১৫ দিনের মধ্যে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসলে বাজার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে বলে মত দেন তিনি।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চাহিদা মতো সরবরাহ নিশ্চিত না হলে অভিযানে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের সরবরাহ তেমন নেই। গত ২০-২৫ দিন ধরেই পেঁয়াজ কম আসছে। আমরা খবর পেয়েছি বর্ডারেও আসার মতো তেমন পেঁয়াজ নেই। স্বাভাবিক সময়ে দিনে ৩০ গাড়ি করে পেঁয়াজ আসে গড়ে। আজ পেঁয়াজের কোনো গাড়ি আসেনি।”
তিনি বলেন, “কোনো কোনো আড়তে আজ ২০-৩০ বস্তা করে পেঁয়াজ ছিল। ভোক্তা অধিকারের লোকজন সেটা ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি করিয়েছেন। কিন্তু যারা কিনে নিয়েছেন তারা খুচরায় কত টাকায় বিক্রি করবেন? আগামীকাল বিক্রির মতো উল্লেখযোগ্য পেঁয়াজ আড়তে নেই।”
দাম নিয়ন্ত্রণের উপায় এটা না দাবি করে তিনি বলেন, “স্বল্প মার্জিনে যদি সরকার আমদানিকারদের এলসি করার সুযোগ দেয়, তাহলে মিয়ানমার, চীন ও মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি সম্ভব হবে।”