চট্টগ্রাম উত্তর যুবলীগের আংশিক কমিটি, শুরুতেই দুই সহ-সভাপতির পদত্যাগ

কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ার পদত্যাগ করেছেন সহ সভাপতি পদের দুইজন।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2023, 11:20 AM
Updated : 7 Feb 2023, 11:20 AM

এস এম রাশেদুল আলমকে সভাপতি ও মো. শাহজাহানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষাণা করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের ৩২ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি।

এদিকে কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ার কমিটি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন সহ-সভাপতি পদ পাওয়া দুইজন।  

পদত্যাগী নেতা নুরুল মোস্তফা মানিক ও রাজিবুল আহসান সুমনের অভিযোগ, কমিটি করার ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার ক্রম এবং রাজনীতিতে অবদান ‘বিবেচনা করা হয়নি’।

সোমবার রাতে ঘোষিত কমিটিতে সভাপতির পদ পাওয়া রাশেদুল আলম সদ্য সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক হওয়া মো. শাহজাহান সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পদে ছিলেন।

যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কমিটির শূন্য পদ পূরণ করে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় যুবলীগের অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।  

কমিটির নয় সহ-সভাপতি হলেন সামসুদ্দোহা সিকদার আরজু, মো. নুরুল মোস্তফা মানিক, দীপক কান্তি দত্ত, রাজিবুল আহসান সুমন, মো. মিজানুর রহমান, মো. শহিদুল আলম, নাছির হায়দার করিম বাবলু, আশেক ই ইলাইহী সোহেল ও মো. মোশারফ হোসেন। তাদের মধ্যে মানিক ও সুমন সোমবার রাতেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. নুরুল মোস্তফা মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমি যুবলীগ করেছি। সহ-সভাপতি পদেও অনেকদিন ছিলাম। আমি সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলাম।

“জ্যেষ্ঠতা এবং রাজনৈতিক অবদান বিচার বিশ্লেষণ করা উচিত ছিল। আমার ব্যক্তিগত কিছু বিষয়ও আছে। তাই আমি পদত্যাগ করেছি। আজ চিঠি ঢাকায় পাঠাব।”

এর আগে সোমবার রাতেই ফেইসবুকে যুবলীগ চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক বরাবরে লেখা চিঠিটি পোস্ট করেন নুরুল মোস্তফা মানিক।

সেখানে তিনি লেখেন, “আমি বিগত ৩৫/৩৬ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকেছি। চাওয়া পাওয়ার হিসেবে নিকেশ কিংবা ত্যাগ তিতিক্ষার ফিরিস্তি তুলে ধরতে চাই না। শেখ হাসিনার একজন কর্মী এই পরিচয়ই আমার জন্য যথেষ্ট।

“অতএব মহোদয় এর কাছে আকুল আবেদন, সদ্য ঘোষিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগ এর সহ সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করতে সুযোগ দিয়ে বাধিত করবেন।”

Also Read: চট্টগ্রাম যুবলীগের সম্মেলন ঘিরে তোড়জোড়

Also Read: চট্টগ্রাম দক্ষিণ যুবলীগের কমিটি, শুরুতেই দুই সহ-সভাপতির পদত্যাগ

আরেক সহ-সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন যুবলীগ চেয়ারম্যান বরাবরে লেখা একটি পদত্যাগপত্র ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।

চিঠিতে সুমন লিখেছেন, “আমি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি (২০০২-২০১০), সন্দ্বীপ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক (১৯৯৮-২০০০), সন্দ্বীপ সরকারি এ বি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি (১৯৯৪-১৯৯৬)।

“আমি দলের দুঃসময়ে নির্যাতিত সাবেক ছাত্রনেতা। ... রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে অনেকবার গ্রেপ্তার ও পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছি।”

চিঠিতে সুমন বলেন, “আশা করেছিলাম, রাজনীতিতে আমার মেধা, যোগ্যতা ও ত্যাগের মূল্যায়ন করে আমাকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত করবেন। কিন্তু চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের আংশিক কমিটিতে আমার নাম সহ সভাপতি হিসাবে দেখে বিস্মিত ও হতাশ হয়েছি।

“যেহেতু আমি সহসভাপতি পদে সিভি জমা প্রদান করিনি, সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সহ সভাপতি পদে আমার নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করা হয়নি এবং যেহেতু সহ সভাপতি পদে থাকার আমার কোন আগ্রহ বা ইচ্ছা নাই।”

রাজিবুল আহসান সুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দলের দুঃসময়ে দীর্ঘদিন ত্যাগ স্বীকার করে রাজনীতি করেছি। যেখানে সম্মান নেই, সেখানে কেউ থাকবে না। সভাপতি হিসেবে যে দায়িত্ব পালন সম্ভব সেটা সহ-সভাপতি পদে থেকে সম্ভব নয়। যেহেতু সহ-সভাপতি হিসেবে যৌক্তিক ভূমিকা পালন করতে পারব না, সেজন্য পদত্যাগ করেছি।”

পদত্যাগের চিঠি মঙ্গলবার ডাকযোগে যুবলীগ চেয়ারম্যান ও দপ্তর সম্পাদককে পাঠাবেন বলে জানান রাজিবুল।

সম্পাদকীয় পদ পাওয়া একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিটিতে জ্যেষ্ঠতা অনুসরণ করা হয়নি। জুনিয়ররা উপরের পদ পেয়েছেন। তারা যাদের কর্মী হিসেবে ছাত্রলীগ করেছিল সেই সিনিয়ররা নিচের দিকে পদ পেয়েছেন।

“সাধারণ সম্পাদক পদে যারা প্রার্থী ছিলেন, তারা যুগ্ম সম্পাদক এমনকি সাংগঠনিক সম্পাদক পদও পাননি।”

পদত্যাগীদের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জ্যেষ্ঠতা অনুসরণ করা হয়নি এটা সঠিক নয়। সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার দক্ষতার উপরই সংগঠন বেঁচে থাকে। কারো দক্ষতাই বিবেচ্য।

“যাচাই বাছাই ও তথ্য বিশ্লেষণ করে, কারো বিরুদ্ধে কোনো ধরনেরর অভিযোগ আছে কিনা সেসব তথ্য নিয়ে ক্লিন ইমেজের দক্ষ সংগঠক দেখেই কমিটি গঠন করা হয়। এক্ষেত্রেও তা অনুসরণ করা হয়েছে।”

দুই সহ-সভাপতির পদত্যাগের বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তিনি কিছু জানেন না বলেও দাবি করেন মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ।

কমিটিতে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তিনজন হলেন- সৈয়দ মঞ্জুর আলম, মো. এরশাদ হোসেন ও আব্দুল করিম। চার সাংগঠনিক সম্পাদক হলেন- আবুল বসর, মো. ফোরকান, এম এ খালেদ চৌধুরী ও মো. আবু তৈয়ব।

কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক মো. শাহজাহান, শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, আইন বিষয়ক সম্পাদক বিমল চন্দ্র নাথ, ত্রাণ সম্পাদক মো. সাহেদ সরওয়ার, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. ওসমান চৌধুরী, জনশক্তি ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক এস এম আল নোমান, ক্রীড়া সম্পাদক মোশারফ হোসেন মান্না, পরিবেশ সম্পাদক মো. হাছান মুরাদ এবং শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক মো. আবু সৈয়দ।

এছাড়া আরও তিন সদস্য হলেন এস এম অহিদুল্লা, মো. ফজলে কাদের ও বাবলু।

গত ২৯ মে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়। এরআগে ২০১২ সালে উত্তর জেলার সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল।