Published : 17 Nov 2022, 01:36 PM
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসেছেন আওয়ামী লীগ থেকে; কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে পদত্যাগ করেছেন দুই সহ-সভাপতি।
কেন্দ্রীয় যুবলীগ অবশ্য বলছে, আওয়ামী লীগ থেকে যুবলীগে পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে গঠনতান্ত্রিক কোনো সমস্যা নেই।
মো. দিদারুল ইসলামকে সভাপতি এবং জহুরুল ইসলাম জহুরকে সাধারণ সম্পাদক করে বুধবার তিন বছরের জন্য দক্ষিণ জেলা যুবলীগের ৪১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এই কমিটির বাকি থাকা ৬০টি পদ পূরণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নতুন ঘোষিত কমিটিকে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিতে দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে তাদের।
প্রায় এক দশক পর গত ২৮ মে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়। তার প্রায় ছয় মাস পর কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হল।
সভাপতি পদ পাওয়া মো. দিদারুল ইসলাম কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
আর সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া জহুরুল ইসলাম জহুর বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। জহুর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের অনুসারী।
চট্টগ্রাম যুবলীগের সম্মেলন ঘিরে তোড়জোড়
চট্টগ্রামে যুবলীগের সম্মেলন ২৮ থেকে ৩০ মে
কমিটি ঘোষণার পর বুধবার রাতেই সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক ও সহ-সভাপতি পার্থ সারথী চৌধুরী লিখিতভাবে কেন্দ্রে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ ফারুক দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক। আর পার্থ সদ্য বিদায়ী দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
জানতে চাইলে ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আওয়ামী লীগ থেকে এনে কেন যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করতে হবে? যুবলীগে কি নেতাকর্মীর অভাব ছিল? এখানে গঠনতন্ত্র কোথায় অনুসরণ করা হয়েছে?
“শুধু তাই নয়, সভাপতি পদ যিনি পেয়েছেন, সম্মেলনে তিনি প্রার্থীও হননি। সম্মেলনে উনার কোনো প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী ছিল না। আমরা এই অনিয়মের তদন্ত দাবি করছি। তাই পদত্যাগ করেছি। এ বিষয়ে মাননীয় নেত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
ফারুকের অভিযোগ, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটিতে স্থান পাওয়া ৮জন কেন্দ্রীয় যুবলীগ এবং বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পদে আছেন।
পদত্যাগকারী আরেক সহ-সভাপতি পার্থ সারথী চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি যাদের দিয়ে কাজ চলবে বলে মনে করেছে, তাদের পদ দিয়েছে। ১২ বছর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাহী পদে ছিলাম।
“আমি মনে করেছি সহ-সভাপতি হিসেবে সেই নির্বাহী দায়িত্ব পালন সম্ভব না। আমি সভাপতি প্রার্থী ছিলাম। সহ-সভাপতি পদ আমি চাইনি। তাই লিখিতভাবে সাংগঠনিক উপায়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়ে পদত্যাগ করেছি।”
নতুন কমিটির সভাপতি মো. দিদারুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেন। এরপর পরিচয় পেয়ে ‘এক মিনিট পর’ কথা বলবেন জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আর দিদারুল কল ধরেননি।
নতুন সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জহুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলাম। কেন্দ্র থেকে ব্যালেন্স করে সবাইকে নিয়ে কমিটি দিয়েছে।”
তিনি যুবলীগ করতেন কিনা জানতে চাইলে জহুর বলেন, “আমি ছাত্রলীগের পর যুবলীগ করেছি। সেসব অনেক আগে।”
দুই সহ-সভাপতির পদত্যাগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জহুর বলেন, “সাংগঠনিকভাবে কিছু জানি না। ফেইসবুকে দেখেছি।”
এসব বিষয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগ তো একই। এক সংগঠন থেকে অন্য সংগঠনে যাওয়া এমন কিছু না। তেমন কোনো সাংগঠনিক বাধ্যবাধকতা নেই। উনারা আমাদের দলেরই লোক।
“যিনি সভাপতি হয়েছেন, তিনি জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের কোনো পদে তিনি ছিলেন না। আর সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের পদ থেকে আগেই পদত্যাগ করেছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।”
দুই সহ-সভাপতির পদত্যাগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে মাসুদ বলেন, “আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী চৌধুরী সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। তিনি সহ-সভাপতি পদ চাননি। তাই সঙ্গত কারণেই তিনি পদত্যাগ করেছেন।”