Published : 02 May 2025, 06:24 PM
আওয়ামী লীগ সরকার পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন দেশে সাংবাদিকতা চর্চায় ‘সবথেকে ভালো সময়’ যাচ্ছে বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেছেন, “বাক স্বাধীনতা বন্ধ হয় এমন কোনো কাজ করছে না অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জুলাই পরবর্তী আন্দোলনে বড় প্রাপ্তি আপনারা (সাংবাদিকরা) মুখ খুলে কথা বলতে পারছেন। ৮ অগাস্ট ইনটেরিয়ম গভমেন্ট ফর্ম (গঠন) করার পর দেশের কোনো সাংবাদিক এর চেয়ে বেশি পিরিয়ড এনজয় করেছেন কিনা আমার সন্দেহ।
“বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে যারা জার্নালিজম করছেন, এর চেয়ে বেটার টাইম আর আসেনি। আমরা কারও মুখ বন্ধ করছি না, কারও কলম ভেঙে ফেলছি না, কারও প্রিন্টিং প্রেসে গিয়ে সিলগালা করছি না। আমরা সবাইকে বলছি আপনারা জার্নালিজম করেন।”
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে শুক্রবার ‘জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশ: গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে কথা বলছিলেন প্রেস সচিব।
সরকার দেশে সাংবাদিকতার পরিবেশ চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “রাতের বেলা অনেক বক্তা অনেক কথা বলেন, অনেকেই মিথ্যা কথা পর্যন্ত বলেন। আমরা তো কারও মুখ বন্ধ করি না। অনেকেই মিথ্যা নিউজ ছড়ান, আমরা তো তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করি না। অনেকেই আজেবাজে কথা বলেন, মিথ্যা নিউজ শেয়ার করেন। কেউ কি শুনেছেন আমরা তার বিরুদ্ধে লেগেছি?
“অধ্যাপক ইউনুস ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম মাসেই উনি সকল লিডিং এডিটরদের ডেকেছেন। বলেছেন, ‘আপনারা সবাই মন খুলে লেখেন। আমরা চাই আপনারা সবাই মন খুলে আমাদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আপনার’।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে শফিকুল আলম বলেন, “আপনারা বলেন, ‘আপনারা (সরকার) এ কাজটা ভুল করছেন, এ পলিসিটা নিচ্ছেন এটা ভালো হবে না, খারাপ হবে’। আমরা জার্নালিজমের সেই পরিবেশটা চাই। কিন্তু সেই পরিবেশটা না দেখে কেউ কেউ বলছেন আগের চেয়ে খারাপ অবস্থা।”
‘কোনো সাংবাদিকের চাকরি খাচ্ছি না’
সম্প্রতি ঢাকার তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতির প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা সভায় কথা বলেন প্রেস সচিব। কোনো সাংবাদিকের চাকরিচ্যুত করার মত ঘটনার সঙ্গে সরকারি কর্তৃপক্ষের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন তিনি।
“আমরা কোনো সাংবাদিকের চাকরি খাচ্ছিও না, চাকরি দিচ্ছিও না। আপনারা (সাংবাদিকরা) যদি মনে করেন, সরকার ভেতরে ভেতরে এ চালগুলো চালছে, আপনারা ইনভেস্টিগেট করেন। আমরা এগুলো করছি কিনা,” বলেন তিনি।
সাংবাদিকদের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় সাংবাদিক নেতাদের গণমাধ্যম কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ করার পরামর্শ দেন প্রেস সচিব।
দেশের সাংবাদিকতার হাল তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা যে নিউজ কনজিউম করছি সে ধরনটা চেইঞ্জ হয়ে গেছে। মানুষ এখন নিউজ পড়ছে কম, মানুষ এখন নিউজ কনজিউম করছে ভিডিওর মাধ্যমে।
“প্রতিনিয়ত অপতথ্য, মিস ইনফরমেশন, ডিজ ইনফরমেশন আসছে। এ মিস ইনফরমেশন, ডিজ ইনফরমেশন আমাদের সোসাইটিকে ডিস্ট্যাবিলাইজ (অস্থিতিশীল) করছে। এ কমিউনিটিকে ওই কমিউনিটির বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ পলিটিক্যাল পার্টিকে ওই পলিটিক্যাল পার্টির বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পলিটিক্যাল প্রসেসটা ব্যাহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ডেমোক্রেসিকে আন্ডারমাইন করা হচ্ছে।”
অপতথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে ভারতীয় গণমাধ্যম ও আওয়ামী লীগ ‘কাজ করছে’ বলে মন্তব্য করেন শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, “তাদের তো অনেক টাকা, তারা মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার নিয়ে বসে আছে। যেহেতু আপনারা এখন নিউজটা ফেইসবুকের মাধ্যমে কনজিউম করতেছেন, আপনি বুঝতেও পারছেন না এটা সত্য কিনা। আপনি তো পত্রিকা পড়ছেন না।
“আপনার হ্যাবিটটা চেইঞ্জ হয়ে গেছে। আপনি তো সকালে উঠে ফেইসবুক ইউটিউবটা দেখছেন। এখানে তারা সবরকমের অপতথ্য দিচ্ছে।”
‘সাংবাদিকদের কেউ কেউ আন্দোলনকারীদের ধরিয়ে দিয়েছে’
জুলাইয়ের গণআন্দোলনের মধ্যে চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের কেউ কেউ আন্দোলনকারীদের ধরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়ার কথা বলেন প্রেস সচিব। ঘটনা তদন্তে প্রেস ক্লাবকে কমিটি করার পরামর্শ দেন তিনি।
তার কথায়, “এই চট্টগ্রামেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা এসে বলছে, আন্দোলনের সময় তাদের ধরিয়ে দিয়েছে সাংবাদিক। কী ভয়াবহ অভিযোগ। আমার মনে হয় এসব বিষয়ে প্রেস ক্লাবের একটা তদন্ত কমিটি করা উচিৎ। কোন কোন সাংবাদিক এটাতে ইনভলব ছিল, সেটা এনকোয়ারি করে বের করা উচিৎ।
“চট্টগ্রামে যদি কোনো রিটায়ার্ড জাজ থাকে, তার নেতৃত্বে কমিটি করে দেওয়া উচিৎ যে কোন কোন সাংবাদিক এতে ইনভলব ছিল। এটা কিন্তু ভয়াবহ অভিযোগ। এটা নিয়ে বসে থাকা যাবে না, যারা যারা এটা করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। যদি জুলাই আন্দোলন ব্যর্থ হত, তাহলে ছাত্রদের এই সাংবাদিকরা কী করতে একবার ভেবে দেখেন।”
তিনি বলেন, “অনেকেই বলেন যারা স্বৈরাচারের দোসর ছিল, তাদের বিষয়ে আমরা ‘সফট’। কিন্তু আমাদের দেখতে হবে যে আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। একজন লোকের এগেইনস্টে আমরা তখনই মুভ করতে পারি, যখন আমরা এভিডেন্স পাব। এ কাজগুলো অনেকক্ষেত্রে সাংবাদিক ইউনিয়ন করতে পারে।”
গত ১৫ বছরে দেশে গুম-খুনের ঘটনাগুলোতে সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে শফিকুল আলম বলেন, “গুমের ঘটনা ঘটেছে, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং (বিচারবহির্ভূত হত্যা) হয়েছে। অনেক সাংবাদিক সেটাকে জাস্টিফাই করেছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে, অনেক সাংবাদিক সেটাকে জাস্টিফাই করেছে যে ওরা দাঁড়াতে পারে না। কেউ দাঁড়াতে পারে না বলে কি আপনি তাকে অ্যারেস্ট করবেন? এভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বয়ান তৈরি করা হত।”
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন-সিএমইউজে ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের যৌথ আয়োজনে এ আলোচনা সভা হয়েছে।
সেখানে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের অন্তবর্তীকালীন কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, সিএমইউজে সভাপতি মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব অন্তবর্তীকালীন কমিটির সদস্য গোলাম মাওলা মুরাদ, কমনওয়েলথ জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সেক্রেটারি ও পিপলস ভিউ সম্পাদক ওসমান গণি মনসুর উপস্থিত ছিলেন।