জোয়ারের পানির বান প্রায়ই ব্যতিব্যস্ত করে তুললেও ঘূর্ণীঝড়ের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এতটা পানি কখনও উঠতে দেখেননি আড়তদাররা।
Published : 25 Oct 2022, 03:14 PM
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভারি বর্ষণ আর জোয়ারের পানিতে রাতের পুরোটা সময় তলিয়ে ছিল দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জের বড় অংশ; যা বিপুল ভোগ্যপণ্য নষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
জোয়ারের পানির বান প্রায়ই তাদের ব্যতিব্যস্ত করে তুললেও গত দুই দশকের ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতার মধ্যেও এতটা পানি কখনও উঠতে দেখেননি এখানকার আড়তদাররা।
হাঁটু পানি ওঠা তাদের কাছে গা সওয়া হলেও সোমবার রাতে পানি উঠছে কোমর সমানের চেয়েও বেশি; রাত নয়টায় শুরু হঠাৎ জোয়ারে ঘন্টাখানেকের মধ্যে তলিয়ে গেছে পুরো এলাকা। রাতজুড়ে কখনও তা বেড়েছে, কখনও তা কিছুটা কমেছে।
মঙ্গলবার ভোরে ঝড় থেমে বৃষ্টি বন্ধ হলে আর ভাটার টানে পানি নেমে গেলে সকাল থেকে একটু একটু করে কেনাবেচায় ফিরতে শুরু করে আড়তগুলো।
বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় জমে থাকা পানি আর কাদা মাড়িয়ে আসতে শুরু করেছেন পাইকার আর দোকানিরা।
একই সঙ্গে চলছে গুদাম ও দোকানগুলো থেকে পানি নিষ্কাশনের কাজ। সকাল থেকে টানা বালতি দিয়ে পানি সেচেও কূলিয়ে উঠতে পারছেন না কর্মীরা। জোয়ারের সঙ্গে উঠে আসা কাদা আরও ভোগান্তি বাড়িয়েছে তাদের।
গুদাম ও দোকানে থাকা পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মসলা, চাল, গমের মত নিত্যপণ্যের বস্তায় পানি ঢুকে যাওয়ায় সেগুলো আলাদা করার কাজ কখন শেষ হবে সেই চেষ্টায় কর্মীরা দুপুর পর্যন্ত কাজ করে চলেছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরুর আগেই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া আর ভারি বর্ষণে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ পাইকারি বাজারে পানি জমতে শুরু করে। বিকালের পর থেকে দিনের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে থাকেন ব্যবসায়ীরা।
তবে বিপদের দেখা মিলতে শুরু করে রাত একটু বাড়তে থাকলেই। সিত্রাং এর প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উচ্চতার জ্বলোচ্ছ্বাসের কারণে কর্ণফুলীর পানির তোড় আসতে শুরু করে চাক্তাই খাল ধরে।
ব্যবসায়ীরা জানান, রাত নয়টার দিকে খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকায় নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশ শুরু হয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তা দ্রুত ছড়িয়ে পুরো এলাকা তলিয়ে যায়।
বিভিন্ন দোকান ও গুদাম দোকান তলিয়ে যাওয়ায় শত কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
ভোগ্যপণ্যের অগুনিত আড়ত, গুদাম ও দোকান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এ তিন এলাকায়।
শুধু চাক্তাই এলাকায় ধান চাল ব্যবসায়ী সমিতির অধীনে তিনশর মত আড়ত রয়েছে। যাদের রয়েছে একাধিক বড় বড় গুদাম। এর বাইরে ছোটখাট মিলিয়ে হাজারখানেক দোকান আছে এলাকায়। এর বেশিরভাগ আড়ত ও দোকানে পানি প্রবেশ করে বলে জানান এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম।
খাতুনগঞ্জ হামিদউল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রাত নয়টার দিকে পানি আসা শুরুর পর তা হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। এক ঘণ্টাও লাগেনি এলাকার বিভিন্ন দোকান-গুদামের বড় অংশ পানিতে ডুবে যেতে।
তিনি বলেন, রাতের বেলা অনেক দোকান ও গুদাম বন্ধ ছিল। শ্রমিকরাও ছিল না, যার কারণে দোকান-গুদামে পানি প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
“বিভিন্ন সময়ে খাতুনগঞ্জে পানি উঠলেও তা এত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে না। বর্ষায় জোয়ারে হাঁটু পরিমাণ পানি উঠলেও সোমবার ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জোয়ারে কোমর পরিমাণ পানি উঠেছে। গত কয়েক দশকে এমনটি ঘটেনি।”
ইদ্রিসের দাবি, পানিতে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মসলাসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য। যেগুলো পানি লাগায় নষ্ট হয়ে যাবে। এতে অন্তত শত কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়বেন ব্যবসায়ীরা।
অমাবশ্যা তিথি ও বায়ুচাপের অধিক্যের কারণে আবহাওয়া দপ্তরের থেকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং উপকূলে আঘাত হানার সময় স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত সাত-আট ফুট পর্যন্ত জোয়ারের পানি বাড়তে পারে। সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে শুরু করে মধ্যরাতে এটি বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে। এসময় ভারি বর্ষণ আর জ্বলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় উপকূলের জেলাগুলো।
চাক্তাই ধান চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জোয়ারের পানিতে চাক্তাই এলাকার প্রায় সকল আড়ত ও দোকান প্লাবিত হয়। সাড়ে ১২টা একটা পর্যন্ত জোয়ারের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি পানি প্রবেশ করে। কোমর সমান পানি হয়।
তার মতে, সাম্প্রতিক সময়ে জোয়ারের প্রভাবে এত বেশি দোকান বা আড়ত প্লাবিত হয়নি। বেশিরভাগ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ কেমন হবে তা এখন আন্দাজে বলাও কঠিন।
এদিকে নগরীর শুটকিপট্টি খ্যাত আসাদগঞ্জেও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন দোকান।
এখানকার শুটকি ব্যবসায়ী সমিতির দপ্তর সম্পাদক রাজীব বড়ুয়া জানান, আসাদগঞ্জের দুই থেকে আড়াইশ দোকানে পানি প্রবেশ করেছে।
বর্তমান সময়ে শুটকির মৌসুম না থাকায় বিভিন্ন দোকান ও গুদামে শুটকির পরিমাণ কম ছিল। যার কারণে দোকানে অনেক বেশি পানি ঢুকলেও ক্ষতি খুব বেশি হবে না বলে মনে করছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: ঘরে থই থই পানি, জিনিসপত্র নিয়ে দিশেহারা শ্যামলীর শাহীনুরেরা
সিত্রাংয়ের বৃষ্টিতে জলজটে ঢাকা
মেঘ কেটে দেখা মিলেছে রোদের, স্বাভাবিক হচ্ছে বরিশাল