“তাদের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ আরও অনেক আগেই নিতে পারত। তাহলে বিভিন্ন সময়ে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রবেশ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে পারত না,” বলেন একজন।
Published : 01 Aug 2024, 11:10 PM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের ছাদে তিন দশক আগের এক রাতে ছাত্রশিবিরের নির্যাতনে অচেতন হয়ে পড়েছিলেন নাজিম মুরাদ; নৃশংস সেই ঘটনা এখনও ভুলতে পারেন না তিনি।
ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সহ-সভাপতি মুরাদ বলছেন, ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ আরও ‘অনেক আগেই নিতে পারত’। তবে দেরিতে হলেও তিনি এখন খুশি।
তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ১৯৯২ সালের ২৪ অগাস্ট রাতে। অচেতন অবস্থায় হলের ছাদ থেকে তাকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। চিকিৎসা নিয়ে সেই যাত্রায় তিনি বেঁচে ফেরেন।
নির্যাতনের ৩২ বছর পরে হলেও জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করায় সন্তোষ প্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং তার পরে তারা ধর্মের নামে যা করেছে, তা এককথায় অন্যায়-বিভৎস ও নৃশংস, যা তারা এখনও করে যাচ্ছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্য সবসময়ই হুমকিস্বরূপ।
“তাদের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ আরও অনেক আগেই নিতে পারত। তাহলে বিভিন্ন সময়ে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রবেশ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে পারত না। দেরিতে হলেও এই সিদ্ধান্ত আসায় আমি আনন্দিত।”
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও নাশকতায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে বৃহস্পতিবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন।
এ আইনের ১৮ ধারায় বলা হয়েছে, “এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রহিয়াছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে।”
জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করায় এ সিদ্ধান্তকে কেবল ‘কাগজে-কলমে দেখতে চান না’ কানাই লাল তলাপাত্র। ছাত্রশিবিরের হামলায় ১৯৯৮ সালে মারা যায় তার ছেলে সঞ্জয় তলাপাত্র।
ওই বছরের ২০ অগাস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বটতলী রেলওয়ে স্টেশনে ক্যাম্পাসমুখী শাটল ট্রেন ছাড়ার আগে মিছিল হয়। সেই মিছিলে হামলা চালায় শিবিরকর্মীরা। হামলায় গুরুতর আহত সঞ্জয় তলাপাত্র দুই দিন হাসপাতালে ভর্তি থেকে ২২ অগাস্ট মারা যান।
জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের প্রতিক্রিয়ার তার বাবা কানাই লাল তলাপাত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সবসময়ই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিপক্ষে, সেটা যেকোনো ধর্মের হোক। জামাত-শিবির নিষিদ্ধ হয়েছে ঠিক আছে। এটা মুখে মুখে বা কাগজে হলে হবে না, মনেপ্রাণে হতে হবে।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাজিম মুরাদ ও সঞ্জয় তলাপাত্রের মতই ১৯৮৮ সালের ২৮ জুলাই হামলার শিকার হয়েছিলেন অশোক বড়ুয়া। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি।
সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধের কর্মসূচিতে হামলা চালায় ছাত্রশিবির। অশোককে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। ছাত্র-শিক্ষদের অনেকেই সেই যাত্রায় হামলার শিকার হয়েছিলেন। হাসপাতালে ১১ দিন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন অশোক।
পরের বছর ১৯৮৯ সালের ২৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ে অপর এক কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে শিবিরের কর্মীদের হামলায় আহত হন ছাত্র ইউনিয়নের ২২ নেতাকর্মী।
জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করায় পুরনো স্মৃতিচারণ করে অশোক বড়ুয়া বলেন, “তাদের নিষিদ্ধ করার আন্দোলন অনেক আগের। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এত দিন তাদের নিষিদ্ধ করা যায়নি। দীর্ঘদিন পর তা হয়েছে এতে আমরা খুশি।
“মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর এ বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে তাদের প্রতিহতও করা দরকার।”
আরও পড়ুন-