টিম সাউদির লেংথ ডেলিভারি ফ্লিক করলেন ভিরাট কোহলি৷ ডিপ স্কয়ার লেগে বামে সরে দুই হাতে দারুণ ক্যাচ নিলেন ডেভন কনওয়ে। এক মুহূর্তের জন্য যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। পরমুহূর্তেই গ্যালারির সবাই দাঁড়িয়ে উন্মত্ত গর্জনে জানালেন অভিনন্দন। আউট হওয়ার পরও এমন সম্ভাষণ যে রেকর্ডের খাতায় ঝড় তোলা কোহলিরই প্রাপ্য।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম সেমি-ফাইনালে ১১৩ বলে ১১৭ রান করেছেন কোহলি। ৯ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো ইনিংসে তিনি রেকর্ড বইয়ে যোগ করেছেন নতুন নতুন অধ্যায়।
আগের তিন আসরের সেমি-ফাইনালে কোহলি করেছিলেন যথাক্রমে ৯, ১ ও ১। ফলে সাফল্যমণ্ডিত ক্যারিয়ারেও কখনও কখনও তাকে শুনতে হয়েছে বড় ম্যাচে ব্যর্থতার সমালোচনা। সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে এবার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে তিনি পেলেন জাদুকরী তিন অঙ্কের দেখা।
গত ৫ নভেম্বর নিজের ৩৫তম জন্মদিনে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৯তম সেঞ্চুরি করেছিলেন কোহলি। সেদিন অভিনন্দন জানিয়ে সাচিন টেন্ডুলকার লিখেছিলেন, 'আমার ৪৯ (বছর) থেকে ৫০-এ যেতে লেগেছে ৩৬৫ দিন। আশা করি, তুমি দ্রুতই পৌঁছে যাবে ৫০-এ (সেঞ্চুরিতে)।"
নিজের শৈশবের নায়কের আশা পূরণ করে স্রেফ ১০ দিনের মাথায় ৫০তম সেঞ্চুরি করলেন কোহলি। ওয়ানডেতে তিনিই এখন সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক। অবসর নেওয়ার প্রায় ১০ বছর পর ৪৯ সেঞ্চুরি নিয়ে দুইয়ে নেমে গেলেন টেন্ডুলকার।
বিশ্বকাপে এটি কোহলির পঞ্চম সেঞ্চুরি। তার সমান ৫ সেঞ্চুরি রয়েছে কুমার সাঙ্গাকারা, রিকি পন্টিংয়ের। টেন্ডুলকার ও ডেভিড ওয়ার্নার করেছেন ৬টি করে সেঞ্চুরি। ভারতের বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শার্মা ৭ সেঞ্চুরি নিয়ে এককভাবে শীর্ষে।
চলতি আসরে এ নিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে পঞ্চাশ বা তার বেশি রান করেছেন কোহলি। ভারতের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বিশ্বকাপে এটিই টানা পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসের রেকর্ড। ১৯৯৬ ও ২০০৩ আসরে সাচিন টেন্ডুলকার, ১৯৮৭ সালে নাভজোত সিং সিধু, চলতি আসরে শ্রেয়াস আইয়ার টানা ৪টি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেছেন।
কিউইদের বিপক্ষে তিন অঙ্ক ছোঁয়া ইনিংসে টেন্ডুলকারের আরও কয়েকটি রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন কোহলি। চলতি আসরে ১০ ইনিংসে তার সংগ্রহ ৭১১ রান। বিশ্বকাপের এক আসরে ৭০০ রান করা প্রথম ব্যাটসম্যান তিনি। ২০০৩ সালে ১১ ইনিংসে টেন্ডুলকার করেছিলেন ৬৭৩ রান।
এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসের (আটটি) রেকর্ডেও সবার ওপরে বসেছেন কোহলি। চলতি আসরে ৩টি সেঞ্চুরি ছাড়াও ভারতের তারকা ব্যাটসম্যান খেলেছেন ৫টি ফিফটির ইনিংস। ২০০৩ সালে ১ সেঞ্চুরির সঙ্গে ৬টি ফিফটি করেছিলেন টেন্ডুলকার। গত আসরে সাকিব আল হাসান ২ সেঞ্চুরির সঙ্গে করেন ৫টি ফিফটি।
চার বিশ্বকাপ খেলা কোহলি এখন পর্যন্ত ৩৬ ইনিংসে ৬০.০৩ গড়ে করেছেন ১ হাজার ৭৪১ রান। বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় তার চেয়ে স্রেফ ২ রানে এগিয়ে থেকে দুই নম্বরে রিকি পন্টিং (৪২ ইনিংসে ১ হাজার ৭৪৩ রান)। সবার ওপরে টেন্ডুলকার, ৪৪ ইনিংসে ২ হাজার ২৭৮ রান।