দেশের মাঠে ভালো ব্যাটিং উইকেটে খেলার আকুতি

এই সময়ের ওয়ানডে ক্রিকেটের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে মিরপুরে ও দেশের অন্যান্য মাঠে ভালো ব্যাটিং উইকেটে ম্যাচ আয়োজনের জন্য বিসিবির কাছে অনুরোধ নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাসকিন আহমেদের।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিপুনে থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2023, 04:26 AM
Updated : 12 Nov 2023, 04:26 AM

বিশ্বকাপ ব্যর্থতা থেকে এবার অনেক শিক্ষাই তো পেয়েছে বাংলাদেশ। আপাতত সবচেয়ে বড় উপলব্ধি বলে মনে হচ্ছে, দেশের মাঠে ব্যাটিং উইকেটে খেলা। এবারের বিপর্যয়ের আঁধার থেকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার আলোতে পৌঁছতে এটিকেই জরুরি বলে মনে করছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাসকিন আহমেদ। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ও দেশের অন্যান্য মাঠে ভালো ব্যাটিং উইকেটে খেলানোর জন্য বিসিবির কাছে অনুরোধ রাখলেন দুজনই। 

এই অনুরোধ, আকুতি বা দাবি অবশ্যই নতুন কিছু নয়। নানা সময়ে দেশের অনেক ক্রিকেটারই ভালো উইকেটে খেলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে ওয়ানডের বদলে যাওয়া ধারায় যেখানে সাড়ে তিনশ রান হচ্ছে নিয়মিতই, এমনকি চারশ রানও খুব বিরল নয়, বাংলাদেশ সেখানে অনেকটাই পিছিয়ে। ওয়ানডেতে এখনও পর্যন্ত সাড়ে তিনশ রান করতে পারেনি তারা।

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেন যেখানে, সেই মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট তো বেশির ভাগ সময়ই থাকে মন্থর ও নিচু বাউন্সের। মিরপুরেও যখন ব্যাটিং উইকেট থাকে কিংবা দেশের অন্যান্য ভেন্যুতে যখন ব্যাটিং সহায়ক উইকেট দেখা যায়, সেখানেও কখনও কখনও বল একটু গ্রিপ করে বা থমকে আসে। নিখাদ ব্যাটিং স্বর্গ পাওয়া যায় কম সময়ই। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের তাই দ্রুত রান তোলা, বড় শট খেলার স্কিলের ঘাটতি থেকে যায়, মানসিকতাও থাকে একটু রক্ষণাত্মক। 

সেটির খেসারত এবার বিশ্বকাপে ভালোভাবেই দিতে হয়েছে এই দলকে। ওয়ানডে ব্যাটিং যেখানে বিবর্তিত হয়ে প্রতিনিয়ত নতুন উচ্চতায় উঠে চলেছে, বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ঘরানা সেখানে যেন মান্ধাতার আমলের। এই অচল ব্যাটিং দিয়ে বিশ্বকাপে মুখ থুবড়ে পড়েছে বাংলাদেশের সব সম্ভাবনা। গোটা আসরে বাংলাদেশ তিনশ ছাড়াতে পেরেছে স্রেফ শেষ ম্যাচটিতে। এ দিন উইকেট ছিল মূলত সাড়ে তিনশ রানের। বাকি ৮ ম্যাচের ১টিতে কেবল ছুঁতে পেরেছে আড়াইশ। ভেন্যু থেকে ভেন্যুতে ব্যাটিং বান্ধব উইকেট ও ছোট সীমানা পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা।

এবারের বিশ্বকাপে শনিবার পর্যন্ত ওভারপ্রতি রানে বাংলাদেশের (৫.০২) চেয়ে পিছিয়ে আছে কেবল নেদারল্যান্ডস (৪.৮১)। 

এই সময়ের ওয়ানডে ব্যাটিংয়ের তুলনায় বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের দীনতা বেশ প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে এই বিশ্বকাপে। বাস্তবতার উপলব্ধি হয়েছে এই দলের ক্রিকেটারদেরও। শেষ ম্যাচের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তুলে ধরলেন সেই সীমাবদ্ধতাটুকু। 

“দেখুন, এরকম বোলিংয়ের বিপক্ষে আজকে আমরা তিনশ করেছি। দুটি রান আউট যদি না হতো বা মাঝখানে যদি একটা বড় জুটি হতো, তাহলে আমরা ওখান থেকে সাড়ে তিনশই করতাম। আমার মনে হয় ওই আত্মবিশ্বাসটা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আছে যে এরকম মানসম্পন্ন বোলিংয়ের বিপক্ষে তিনশ করেছি। এটাও সত্য যে, আমরা যত ভালো উইকেটে খেলব...আমার মনে হয় ওই অভ্যাসটা দরকার।” 

“আমরা জানি কীভাবে ২৬০ রান করতে হয়। কীভাবে ধারাবাহিকভাবে তিনশ আমরা করতে পারি, ওই অভ্যাসটা যদি তৈরি হয়, তাহলে  তিনশ-সাড়ে তিনশ আমরা নিয়মিত করতে পারব।”

গত ৮ বছর ধরেই ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে একটা মানদণ্ড বজায় রাখতে পেরেছে, নিজেদের একটা জায়গা করে নিয়েছে। তবে সেখান থেকে পরের ধাপটায় যেতে পারেনি। এবারের বিশ্বকাপ আরেকটি কঠিন বাস্তবতার ছবিও দেখিয়েছে বাংলাদেশকে। 

নিজেদের সেই অবস্থানটা বুঝতে পারছেন শান্ত। তার আশা, এখান থেকে উত্তরণের জন্য করণীয়টুকু অনুসরণ করবে বিসিবি। 

“সবাই দেখলাম, আমরা কী অবস্থায় আছি। যদিও এখনও আমার কাছে মনে হয়, যতটা খারাপ ব্যাটিং আমরা করেছি, এতটা খারাপ দল আমরা নই। প্রস্তুতি ঠিক ছিল, কিন্তু ফলাফল আসেনি। এটা আশা করব সামনে যখন আমরা সাদা বলের ক্রিকেট খেলব, ওয়ানডে হোক বা টি-টোয়েন্টি, প্রত্যেকটি উইকেট যেন ভালো হয় এবং স্পোর্টিং উইকেট হয়। সেক্ষেত্রে বোলাররাও আরও উন্নতি করতে পারবে যে ভালো উইকেটে কীভাবে তিনশ রান ডিফেন্ড করব।” 

“ভালো উইকেট মানে এই না যে প্রতি ম্যাচে সাড়ে তিনশ রান  হবে। তিনশ রানও ডিফেন্ড করা সম্ভব। আমার মনে হয়, তাহলে ব্যাটিং-বোলিং দুটাই উন্নতি হবে। ক্রিকেট বোর্ড অবশ্যই এই জিনিসটা হয়তো ভাবছে…আমাদেরকে ওই রকম উইকেট দেওয়া হবে বলে আশা করছি।”

বোলারদের সেই দিকটি তুলে ধরলেন তাসকিন আহমেদও। ভালো ব্যাটিং উইকেটে নিয়মিত খেলা মানে স্রেফ ব্যাটসম্যানদের উন্নতির সুযোগ নয়, বোলারদের জন্যও সেটা কঠিন পরীক্ষার প্রস্তুতি। এই ধরনের উইকেটে বোলিং করাটাও তো শিখতে হবে! 

এবারের বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানদের মতো প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশের পেস আক্রমণও। ছোট মাঠ, গতিময় আউটফিল্ড আর দুর্দান্ত ব্যাটিং উইকেটে পেসাররা ধুঁকেছেন, ভুগেছেন। কার্যকর হওয়ার পথ বের করতে পারেননি। তাসকিন তাই দেশের মাঠে নিয়মিতই এই ধরনের উইকেটে পরীক্ষা দিতে চান ব্যাটসম্যানদের সামনে। 

“বিশ্বকাপে আমাদের আশা অনুযায়ী ভালো ক্রিকেট খেলতে পারিনি। তবে ভালো একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে যে খুব ভালো উইকেটে খেলা হয়েছে। বেশির ভাগ মাঠই হাই-স্কোরিং। আমার মনে হয় যে, এটার জন্য আমাদেরকে আরও বেশি বেশি রান করার অভ্যাস করতে হবে। যেটা বাংলাদেশে একটু কম… মিরপুরে আমরা ভোগান্তিতে পড়ি, লো-স্কোরিং উইকেট হয়। এজন্য বাইরে ৩৮০-৪০০ রানের উইকেটেও আমরা ভালো ব্যাটিং করলে সর্বোচ্চ ৩২০ করে থাকি। সবমিলিয়ে দেশে আরও ভালো উইকেটে খেললে হয়তো ভবিষ্যতে আমরা এরকম উইকেটে আরও ভালো খেলতে পারব।”