রানের পাহাড় গড়ে নেদারল্যান্ডসকে গুঁড়িয়ে দিল পাঁচবারের বিশ্বকাপ জয়ীরা।
Published : 25 Oct 2023, 09:05 PM
টানা দ্বিতীয় ম্যাচে শতকের স্বাদ পেলেন ডেভিড ওয়ার্নার। খুনে ব্যাটিংয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্রুততম শতকের রেকর্ড গড়লেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তাতে রানের যে পাহাড়ে উঠল অস্ট্রেলিয়া, তার নিচে যেন চাপা পড়ল নেদারল্যান্ডস। বিশাল এক জয় পেল পাঁচবারের বিশ্বকাপ জয়ীরা।
দিল্লিতে বুধবার নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৩০৯ রানে।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে রানের হিসাবে সবচেয়ে বড় জয় এটিই। নিজেদের রেকর্ডই নতুন করে লিখল অস্ট্রেলিয়া।
২০১৫ আসরে পার্থে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাদের জয় ছিল ২৭৫ রানে। এতদিন ওয়ানডেতেও যা ছিল অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় জয়।
ওয়ানডে ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়ার এই ম্যাচের চেয়ে বড় জয় আছে আর কেবল একটিই- এই বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভারতের ৩১৭ রানের জয়।
অস্ট্রেলিয়া এ দিন ৮ উইকেটে করে বিশ্বকাপে তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯৯ রান। জবাবে নেদারল্যান্ডস ২১ ওভারে গুটিয়ে যায় স্রেফ ৯০ রানে।
স্রেফ ৪৪ বলে ৮ ছক্কা ও ৯ চারে ১০৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা ম্যাক্সওয়েল। তিনি শতক স্পর্শ করেন এ দিন ৪০ বলে।
বিশ্ব মঞ্চে নিজের ষষ্ঠ শতকে ৯৩ বলে ১০৪ রান করেন ওয়ার্নার। এই ওপেনারের ইনিংস গড়া ১১ চার ও ৩ ছক্কায়।
‘শতক’ করেন আরও একজন, তবে সেটা বোলিংয়ে! ১০ ওভারে ১১৫ রান দেন নেদারল্যান্ডসের পেস বোলিং অলরাউন্ডার বাস ডে লেডে। বিশ্বকাপে তো বটেই, ওয়ানডে ইতিহাসেই এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার রেকর্ড এটি।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বোলিংয়ে স্রেফ ৩ ওভারে ৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন অ্যাডাম জ্যাম্পা। আসরে টানা তিন ম্যাচে ৪টি করে উইকেট নিলেন এই লেগ স্পিনার। বিশ্ব মঞ্চে এমন কীর্তি আছে আর কেবল ভারতের মোহাম্মদ শামি (২০১৯ আসরে) ও পাকিস্তানের শাহিদ আফ্রিদির (২০১১ আসরে)।
অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে এ দিন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের তৃতীয় ওভারে আরিয়ান দত্তকে টানা চারটি বাউন্ডারিতে ডানা মেলে দেন ওয়ার্নার। তার উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী মিচেল মার্শ অবশ্য বিদায় নেন ৯ রান করেই।
দ্বিতীয় উইকেটে এরপর স্টিভেন স্মিথের সঙ্গে ১৩২ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন ওয়ার্নার। ৬৮ বলে ৭১ রান করা স্মিথকে থামান আরিয়ান।
ওয়ার্নারকেও দুবার ফেরানোর সুযোগ আসে। একটি রান আউট ও একটি ক্যাচের সুযোগ হাতছাড়া করে ডাচরা।
ওয়ার্নার ও মার্নাস লাবুশেনের ৮৪ রানের জুটিতে আড়াইশর কাছে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৪৭ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬২ রান করেন লাবুশেন।
ওয়ার্নার ২২তম ওয়ানডে শতকে পা রাখেন ৯১ বলে। বিশ্বকাপে ষষ্ঠ শতকে তিনি পাশে বসেন সাচিন টেন্ডুলকারের। তাদের চেয়ে বেশি ৭টি শতক আছে শুধু রোহিত শর্মার।
শতকের পর আর বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। জস ইংলিস ও ক্যামেরুন গ্রিন টিকতে পারেননি। ৪৩তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ৬ উইকেটে ২৯০। সেখান থেকে চারশতে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব ম্যাক্সওয়েলের।
এই মাঠেই সপ্তাহ তিনেক আগে বিশ্বকাপের রেকর্ড ৪৯ বলে শতক করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার এইডেন মার্করাম। তার চেয়ে ৯ বল কম খেলেই নতুন রেকর্ড গড়লেন ম্যাক্সওয়েল।
সপ্তম উইকেটে প্যাট কামিন্সের সঙ্গে ম্যাক্সওয়েলের জুটিতে ৪৪ বলে আসে ১০৩ রান। যেখানে কামিন্সের অবদান স্রেফ ৮। বিশ্বকাপে সপ্তম বা এর নিচের উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড জুটি এটি।
বড় রান তাড়ায় মাক্স ও'ডাওড ও ভিক্রাম সিংয়ের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ২৮ রান। মিচেল স্টার্ক এই জুটি ভাঙার পর থেকে নিয়মিতই উইকেট হারিয়ে একশর আগে গুটিয়ে যায় ডাচরা। সর্বোচ্চ ২৫ রান করেন ভিক্রাম।
অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ বোলারের সবাই পান অন্তত একটি উইকেট। শেষের ৪টি নেন জ্যাম্পা।
আসরে প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর টানা তিনটি জিতল অস্ট্রেলিয়া। পাঁচ ম্যাচে চতুর্থ হারের স্বাদ পেল নেদারল্যান্ডস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৯৯/৮ (মার্শ ৯, ওয়ার্নার ১০৪, স্মিথ ৭১, লাবুশেন ৬২, ইংলিস ১৪, ম্যাক্সওয়েল ১০৬, গ্রিন ৮, কামিন্স ১২*, স্টার্ক ০, জ্যাম্পা ১*; আরিয়ান ৭-০-৫৯-১, আকারম্যান ৪-০-১৯-০, ফন বিক ১০-০-৭৪-৪, মিকেরেন ১০-০-৬৪-০, ভিক্রাম ৪-০-২৭-০, ফন ডার মেরওয়া ৫-০-৪১-০, ডে লেডে ১০-০-১৫-২)
নেদারল্যান্ডস: ২১ ওভারে ৯০ (ভিক্রাম ২৫, ও'ডাওড ৬, আকারম্যান ১০, এঙ্গেলব্রেশট ১১, ডে লেডে ৪, এডওয়ার্ডস ১২*, নিদামানুরু ১৪, ফন বিক ০, ফন ডার মেরওয়া ০, আরিয়ান ১, মিকেরেন ০; স্টার্ক ৪-০-২২-১, হেইজেলউড ৬-০-২৭-১, কামিন্স ৪-০-১৪-১, মার্শ ৪-০-১৯-২, জ্যাম্পা ৩-০-৮-৪)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৩০৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: গ্লেন ম্যাক্সওয়েল