ইজ দ্যাট আ বার্ড… ইজ দ্যাট আ প্লেন… ইট’স মুশফিক

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দিল্লিতে অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়ে কুসাল পেরেরাকে ফেরান বাংলাদেশের অভিজ্ঞ কিপার।  

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি দিল্লি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2023, 01:22 PM
Updated : 6 Nov 2023, 01:22 PM

“ইজ দ্যাট আ বার্ড… ইজ দ্যাট আ প্লেন… ইট’স সুপারম্যান…”, কমিক চরিত্র ‘সুপারম্যান’ নিয়ে ১৯৬৬ সালে লি অ্যাডামসের কথায় সুর বেঁধেছিলেন চার্লস স্ট্রাউস। দিল্লিতে সোমবার মুশফিকুর রহিমকে দেখেও ক্ষনিকের জন্য মনে পড়ে গেল সেই লাইনটিই। তার ক্যাচটি ছিল এতটাই অসাধারণ। 

ক্রিকেটে উড়ন্ত কোনো ক্যাচ বা দুরন্ত কোনো রান আউটের সঙ্গে এই কথাটি নানা সময়ই ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে, ১৯৯২ বিশ্বকাপে ইনজামাম-উল-হককে রান আউট করার সময় জন্টি রোডসের সেই বিখ্যাত ডাইভের ক্ষেত্রে তো এখনও তা বলা হয়। এবার মুশফিকের এই ক্যাচের ক্ষেত্রেও তা খুব মানিয়ে যায়। 

কিপিংয়ে ক্যারিয়ারে কম সমালোচনা শুনতে হয়নি মুশফিকেক। সেসবের উপযুক্ত কারণও ছিল। সাধারণ সব ক্যাচও অনেকবার ছেড়েছেন মুশফিক। স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। রান আউট করতে গিয়ে গড়বড় করেছেন। সেটির খেসারত নানা সময়ে দিতে হয়েছে দলকে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দারুণ কিছু ক্যাচও তিনি নিয়েছেন। এ দিন যে ক্যাচটি নিলেন, এই ৩৬ বছর বয়সে, নিঃসন্দেহে তার ক্যারিয়ারের সেরা ক্যাচগুলির ছোট্ট তালিকায়ও এটি থাকবে। 

আরুন জেটলি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের প্রথম ওভার সেটি। ম্যাচের তৃতীয় বলে শরিফুল ইসলামকে দারুণ এক শটে বাউন্ডারি মারেন কুসাল পেরেরা। ওভারের শেষ বলেই সেই ক্যাচ। 

শরিফুলের বলটি ছিল বাঁহাতি কুসালের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে লেংথ বল। যথারীতি নিজের মতো করেই তিনি জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালিয়ে দেন। বলটি একটু বাড়তি বাউন্স করে ব্যাটের কানায় লেগে উড়ে যায় প্রথম স্লিপের দিকে। সেখানে নাজমুল হোসেন শান্ত হাত উঁচিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন বল মুঠোয় জমানোর। কিন্তু তার মুখের সামনে থেকে বাজপাখির মতো ছোবল দিয়ে বল মুঠোয় জমান মুশফিক। 

বেশ কিছু ব্যাপার এখানে একদম নিখুঁত করেছেন মুশফিক। প্রথম, তার রিফ্লেক্স ছিল দুর্দান্ত। বল বেশ গতিময়তায় ছুটে যাচ্ছিল। ক্যাচ নিতে হলে সেই গতির সঙ্গে তাল মেলানো ছিল জরুরি। ৩৬ পেরিয়েও সেই কাজটি দারুণভাবেই করতে পারলেন মুশফিক। চোখের পলকে ডাইভ দেন তিনি। 

এরপর ডাইভিংয়ের প্রসারণ। বলের কাছে যেতে পারা। ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার মুশফিকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অতটা দূরত্ব কাভার করা। বয়স তার অনেক হলেও ফিটনেস তো এখনও দুর্দান্ত। ডাইভের টাইমিংটা তিনি জুতসই করলেন তো বটেই, বাতাসে ভেসেও গেলেন অনেকটা দূর। তার এই উচ্চতা নিয়ে প্রথম স্লিপের সামনে থেকে বল মুঠোয় জমানো চাট্টিখানি কথা নয়!

কাজ শেষ হয়নি সেখানেই। রিফ্লেক্স-ডাইভ নিখুঁত হলেও বল ছুটছিল বুলেট গতিতে। উড়ন্ত মুশফিকের বাঁহাতের গ্লাভসের বুড়ো আঙুল ও তর্জনির মাঝখানে যে অংশটুকু থাকে, কিপারদের গ্লাভসে কাভারটুকু রাখা হয় তাদের বল ধরার সুবিধার্থে, বল আটকে যায় সেখানেই। 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও চোখধাঁধানো অংশটুকু এরপরই। ডাইভ দিয়ে বল গ্লাভসে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুশফিক বুঝে যান, বল আটকেছে ওই অংশটুকুতে, যেখান থেকে ছুটে যেতে পারে যে কোনো সময়ই। বিশেষ করে ডাইভ দিয়ে যখন তিনি মাটিতে আছড়ে পড়বেন, সেই অংশ থেকে বল ছিটকে পড়ার শঙ্কা প্রবল। সেখানেই অসাধারণ প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব দেখালেন মুশফিক। 

বল গ্লাভসে নেওয়ার পর যখন তিনি মাটিতে পড়তে যাচ্ছেন, ডাইভে ভেসে থাকা অবস্থায়ই ডানহাতকে নিয়ে আসেন বাঁহাতকে সুরক্ষা দিতে। দুহাত মুঠো করে যখন জমিয়ে ফেলেন, বলের আর সাধ্য কী সেখান থেকে ছুটতে পারে! 

এই যে পুরো বর্ণনা, একটির পর একটি ঘটনা এবং সবকিছুর সংযোগ, এসব করে ফেলেন তিনি এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে! টিভি সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানের হিসেবে সময়টা ০.৭২ সেকেন্ড!

প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো শান্ত ক্যাচ নিতে গিয়ে দেখেন, তার সামনে থেকে শিকার লুফে নিয়েছেন আরেকজন। শুরুতে চমকে যান তিনি। এরপর আনন্দে লাফিয়ে মুশফিকের পিঠেই চড়ে বসেন উদযাপনে। 

ক্রিকেটে ভালো অনেক কিছুই দেখা যায়, খুব ভালো দেখা যায়, দুর্দান্ত কিছু, অসাধারণ কিছু দেখা যায়। শতভাগ নিখুঁত কিছু একটু কমই দেখা যায়। মুশফিক তৃপ্তি পেতে পারেন যে, তার ক্যাচটির ক্ষেত্রে সবকিছুই ছিল শতভাগ নিখুঁত। 

প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেওয়ার পর মুশফিক এ দিন ধানাঞ্জায়া ডি সিলভাকে স্টাম্পিং করেন। শুরুতে বল ফসকে গেলেও পরে শুধরে নেন। দুশমান্থা চামিরাকে সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট করে শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ করেন। 

তবে তার কাজ তো শেষ হয়নি সেখানে। ব্যাটিংয়েও তাকে প্রয়োজন হতে পারে দলের। সেটুকু করতে পারলেই দিনটি তার জন্য হয়ে উঠবে সোনায় সোহাগা।