শহর থেকে দূরের মাঠে যখন তলানির লড়াই চলমান ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের, পুনে শহরে টিম হোটেলে তখন নিস্তরঙ্গ বাংলাদেশ দল। কোনো অনুশীলন নেই। হোটেলেই নিজের মতো করে সময় কাটান তারা। যে কয়জনের দেখা পাওয়া গেল হোটেলের লবি আর ফুড কোর্টে, তাদেরকে বেশ ফুরেফুরেই মনে হলো।
মাহমুদউল্লাহ বাইরে কোথাও গিয়েছিলেন। দুপুরের দিকে তাকে দেখা গেল হোটেলে ফিরতে। একটু পর পোশাক বদলে আবার বাইরে গেলেন। নির্বাচক হাবিবুল বাশারও দুপুরের দিকে বের হলেন খাবার খেতে। জেডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেলের ঠিক পেছনেই শপিং মল। ফুড কোর্টও আছে। সেখানে দেখা গেল, একসঙ্গে লাঞ্চ করছেন মাহমুদউল্লাহ, হাসান মাহমুদ ও শেখ মেহেদি হাসান। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন মুশফিকুর রহিম, তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজও।
একের পর এক পরাজয়ে দলের ভেতর যে দমবন্ধ করা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল, সেই ফাঁস কিছুটা আলগা হয়েছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় দিয়ে। হাবিবুল জানালেন, একটু হলেও স্বস্তি ফিরেছে দলে। বিশ্বকাপ স্বপ্ন ভেঙে গেছে দলের, চুরমার হয়ে গেছে ক্রিকেটারদের হৃদয়ও। তবে পেশাদার হিসেবে তো ভাঙা মন নিয়ে শোকসভা করার উপায় নেই। প্রতিটি দিন, প্রতি ম্যাচই নতুন লড়াই।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার আশা উজ্জ্বল হয়েছে কিছুটা। সম্ভাবনা জিইয়ে রাখতে হলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়টাও জরুরি। যদিও কাজটি কঠিন। বাজে শুরুর পর অস্ট্রেলিয়া যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে সবশেষ ম্যাচে ধ্বংসস্তুপ থেকে যেভাবে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, এরপর তারা স্রেফ উড়ছে। সেই দলকে মাটিতে নামাতে প্রয়োজন বিশেষ জোর।
এই বাংলাদেশ দলের সেই জোর আছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় না। তবু আশা ছাড়ছেন না দলের সঙ্গে থাকা নির্বাচক হাবিবুল বাশার।
“আমরা যত ম্যাচ খেলেছি, সবগুলো ম্যাচেই প্রতিপক্ষ অনেক শক্তিশালী ছিল। বিশ্বকাপে দুর্বল প্রতিপক্ষ বলতে কেউ নেই। শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, সব দলেরই কোনো না কোনো ‘গেম চেঞ্জার’ ছিল। ওভাবে চিন্তা করলে কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কোনো ম্যাচ হারার কথা না। কিন্তু শুরুতে তারাও দুই ম্যাচ হেরেছে। আমরা আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলে নিশ্চিতভাবেই অস্ট্রেলিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারি।”
“অস্ট্রেলিয়া খুব ভালো ফর্মে আছে। তাদের কিছু গেম চেঞ্জার আছে, ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রাভিস হেড, মিচ মার্শ- সবাই ভালো খেলোয়াড়। কিন্তু কোনো দলই অপরাজেয় নয়। নিশ্চিতভাবে আমাদের চেষ্টা থাকবে সেরা খেলাটা খেলার।”
এই লড়াইয়ে বাংলাদেশ অবশ্য একটা জায়গায় পিছিয়ে থাকছে আগে থেকেই। আঙুলে চোট নিয়ে ছিটকে গেছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার এই চোট নিয়ে কিছু বিভ্রান্তিও ছড়িয়েছে। যদিও ম্যাচ শেষে তার আঙুলে ব্যান্ডেজ দেখা গেছে, কিন্তু মাঠে তাকে সেভাবে আঘাত পেতে দেখা যায়নি। পুরোনো চোট মাথাচাড়া দিয়েছে কি না বা চোট নিয়েই তিনি খেলেছেন কি না, এমন প্রশ্নও উঠছে।
তবে দলসূত্রে জানা গেছে, এটি একদমই নতুন চোট। সাকিব উইকেটে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই দুশমান্থা চামিরার বল ছোবল দেয় তার আঙুলে। তিনি তাৎক্ষণিক বুঝে যান, আঙুলে চিড় ধরেছে। মাঠেই টান দিয়ে স্থানচ্যুত হওয়া হাড় জায়গামতো আনার চেষ্টা করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। পরে ব্যথানাশক নিয়ে ব্যাটিং চালিয়ে যান। ৬৫ বলে ৮২ রানের ম্যাচ জেতানো দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। ম্যাচ শেষে স্ক্যান করিয়ে ধরা পড়ে চিড়।
তার জায়গায় সুযোগ পাওয়া এনামুল হকের দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা বুধবার সন্ধ্যায়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার একাদশে ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনাও আছে যথেষ্টই। তবে সাকিবের অভাব যে অপূরণীয়, তা বললেন হাবিবুলও।
“সাকিবের অভাবটা নিশ্চিতভাবেই অনেক বেশি অনুভব হবে। সেটাই স্বাভাবিক। সে অধিনায়ক, সেরা অলরাউন্ডারও। ব্যাটিং-বোলিং, দুই বিভাগেই সেরা পারফর্ম করে দলের পক্ষে। ওকে নিশ্চয়ই দল মিস করবে। কিন্তু ইনজুরির ক্ষেত্রে তো কারো হাত নেই। সেটা মেনে নিয়ে আমাদের খেলতে হবে।”
অসুস্থতার কারণে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে খেলতে পারেননি মুস্তাফিজুর রহমান। ‘ফ্লু’ থেকে তিনি সেরে ওঠার পথে আছে বলে জানালেন টিম অপারেশন্স ম্যানেজার রাবিদ ইমাম।
পুনের মহারাষ্ট্র অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে বৃহস্পতি ও শুক্রবার অনুশীলন করবে বাংলাদেশ দল। এই দুটি অনুশীলন সেশন ও একটি ম্যাচ, এরপরই শেষ বিশ্বকাপ অভিযান।