রোহিত শার্মার উড়ন্ত শুরুর পরও ভড়কে যাননি অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। নিয়ন্ত্রিত বোলিং আর দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে ভারতকে আড়াইশর মধ্যে বেঁধে ফেলে তারা। এরপর রান তাড়ায়ও শুরুটা ভালো হয়নি, পঞ্চাশের আগেই নেই ৩ উইকেট। তবে শক্ত হাতে বিপদ আর বাড়তে দেননি ট্রাভিস হেড, মার্নাস লাবুশেন। দৃঢ়তা দেখিয়ে অনায়াসে ফাইনাল জয়ের পর অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স আত্মতৃপ্তি নিয়ে বললেন, শেষের জন্য জমা ছিল তাদের সেরা পারফরম্যান্স।
শিরোপা পুনরুদ্ধারের অভিযানে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হেরে শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ যাত্রা। পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে নামায় টুর্নামেন্টের শুরুর অংশেই হয়তো তাদের শেষ দেখে ফেলেছিলেন অনেকে। সেখান থেকে অসাধারণ প্রত্যাবর্তনে টানা ৯ ম্যাচ জিতে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তুলল অস্ট্রেলিয়া।
ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লেখা এই যাত্রায় প্রথম পর্বের বাকি সাত ম্যাচে সেই অর্থে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখাতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। বরং নিউ জিল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে একরকম হারের মুখ থেকে জয় পায় তারা। সেমি-ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও কঠিন পরীক্ষা দিয়ে তাদের জয় ৩ উইকেটে।
সেই তুলনায় ফাইনাল ম্যাচেই অনেক সহজ জয় পেল অস্ট্রেলিয়া।
রোহিতের ৩১ বলে ৪৭ কিংবা ভিরাট কোহলির ৫৪ ও লোকেশ রাহুলের ৬৬ রানের ইনিংসের পরও ভারতকে ২৪০ রানে আটকে রাখে দলটি। পরে রান তাড়ায় সপ্তম ওভারের মধ্যে ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারালেও হেডের সেঞ্চুরি ও লাবুশেনের ফিফটিতে ৬ উইকেটে জিতল কামিন্সের দল।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ফাইনালের পারফরম্যান্সকেই নিজেদের সেরা বললেন কামিন্স।
"মনে হচ্ছে, শেষের জন্যই আমরা সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলাম। কয়েকজন বড় ম্যাচের ক্রিকেটার নিজেদের মেলে ধরল…টুর্নামেন্টজুড়ে বেশিরভাগ সময় আমরা আগে ব্যাটিং করেছি। আজ ভাবলাম, রান তাড়া করার জন্য রাতটা বেশ ভালো। আমাদের মনে হয়েছে, পরের দিকে (ব্যাটিং) সহজতর হবে।"
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টস জিতে ফিল্ডিং নেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। খেলা শুরুর আগ পর্যন্ত এর পক্ষে-বিপক্ষে চর্চা হয় অনেক। পরে রোহিতের আগ্রাসী শুরুর পর প্রশ্ন উঠতে থাকে টসের সিদ্ধান্ত নিয়ে। তবে ম্যাচ যত সামনে এগিয়েছে, ততই যথার্থতা প্রকাশ পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্তের।
জয়ের পর বোলিংয়ের সময় পরিকল্পনা কী ছিল, তাও জানালেন কামিন্স।
"সবাই লড়াইয়ে নামতে উন্মুখ ছিল। উইকেট আমার ভাবনার চেয়ে কিছুটা মন্থর ছিল এবং সেরকম স্পিনও করেনি। (বোলাররা) সবাই খুব ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে এবং আঁটসাঁট বোলিং করেছে। অসম বাউন্সের এমন মন্থর উইকেটে আমরা লেগ সাইডে ক্যাচিং পজিশনে ফিল্ডার রাখলাম এবং তাদেরকে (ভারতের ব্যাটসম্যান) রানের জন্য পথ খোঁজার চ্যালেঞ্জ জানালাম।"
নিখুঁত বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও দুর্বার ছিল অস্ট্রেলিয়া। দুর্দান্ত ক্যাচে রোহিতের বিদায় নিশ্চিত করেন ট্রাভিস হেড। মাঠ জুড়ে ক্ষিপ্র চিতার মতো রান বাঁচান ডেভিড ওয়ার্নার, লাবুশেনরা।
এমন বোলিং-ফিল্ডিংয়ের সৌজন্যে প্রথম ইনিংসের পরই জয়ের আগাম সুবাস পাচ্ছিলেন কামিন্স।
"ফিল্ডিংয়ে সবাই ছিল মরিয়া। মূলত গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু। ছেলেরা সেদিন দুর্দান্ত ছিল। তাদেরকে ২৪০ রানের মধ্যে রাখতে পেরে খুব খুশি ছিলাম, সত্যি বলতে তিনশর নিচে যে কোনো লক্ষ্যই ভালো। আমার মনে হয়েছে, এই উইকেটে ৩০০ হয়তো কঠিন হবে, তবে তাড়া করা সম্ভব। ২৪০ রান দেখে আমরা খুব খুশি ছিলাম।”
পরে রান তাড়ায় চতুর্থ উইকেটে ১৯২ রানের জুটি গড়েন হেড ও লাবুশেন। জয়ের জন্য ২ রান বাকি থাকতে ১২০ বলে ১৩৭ রান করে আউট হয়ে যান হেড। অন্যপাশে লাবুশেন অপরাজিত থাকেন ৫৮ রানে।
সফল রান তাড়ায় মূল কারিগর দুই ব্যাটসম্যানকে প্রশংসায় ভাসালেন কামিন্স।
"মার্নাস (লাবুশেন) ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাটিংয়ে নেমেছে এবং ট্রাভিস (হেড) সবসময় যা করে, তা-ই করেছে। সত্যিই সাহসী ব্যাটিং। সে ম্যাচটা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এবং বোলারদের ওপর চাপ ফিরিয়ে দিয়েছে। এত বড় মঞ্চে এমনটা করতে পারা অসাধারণ।"
হাতের চোটে টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে দলের সঙ্গেই ছিলেন না হেড। ষষ্ঠ ম্যাচ থেকে তাকে পায় অস্ট্রেলিয়া। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করেন বাঁহাতি ওপেনার।
পরে সেমি-ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বল হাতে ২ উইকেটের পর ব্যাটিংয়ে খেলেন ৪৮ বলে ৬২ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। ফাইনালের মতো সেরা চারের ওই ম্যাচেও তার হাতে ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।