খুলনার টাইগার্সের বিপক্ষে বাজে বোলিংয়ের পর ফিক্সিংয়ের সন্দেহে জড়িয়ে যাচ্ছে সাইফ উদ্দিনের নাম, নিজ দলের ক্রিকেটারের পাশে থাকার কথা বলছেন রংপুর রাইডার্সের টিম ডিরেক্টর শানিয়ান তানিম।
Published : 01 Feb 2025, 08:14 PM
দুটি করে ‘ওয়াইড’ ও ‘নো’ বলসহ দশ বলের ওভার। রান এলো ২২। আগের ওভারে দুটি ‘নো’ বলসহ রান ১৭। সব মিলিয়ে ৩ ওভারে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের খরচ ৫৫ রান। বল হাতে এমন বাজে দিন কাটানোর পর ফিক্সিংয়ের গুঞ্জন উঠছে রংপুর রাইডার্সের অলরাউন্ডারের বিরুদ্ধে।
বিপিএলে বেশ কিছু ম্যাচে ক্রিকেটারদের ফিক্সিংয়ের সন্দেহের খবর ছড়িয়ে পড়েছে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে। সেখানে আছে সাইফ উদ্দিনের নামও। এমন কিছু হলে অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে তদন্তের কাজে পূর্ণ সহযোগিতার ঘোষণা দিয়ে রাখলেন রংপুরের টিম ডিরেক্টর শানিয়ান তানিম। পাশাপাশি নিজ দলের ক্রিকেটারের পাশে থাকার কথাও জানালেন তিনি।
ঘটনাটি খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে প্রথম পর্বে রংপুর রাইডার্সের শেষ ম্যাচের। মোহাম্মদ নাঈম শেখের সেঞ্চুরিতে সেদিন ২২০ রান করে খুলনা। ম্যাচের প্রথম ওভারে দুই ছক্কাসহ ১৬ রান দেন সাইফ। পরে চতুর্দশ ওভারে আক্রমণে ফিরে দুটি ‘নো’ বল করেন তিনি। এরপর সপ্তদশ ওভারেও করেন আরও দুটি ‘নো’ বল।
সব মিলিয়ে ওভারপ্রতি ১৮.৩৩ হারে ৩ ওভারে তিনি দেন ৫৫ রান। বিপিএলে অন্তত ৩ ওভার হাত ঘোরানো ইনিংসে এটিই সবচেয়ে বাজে ইকোনমির রেকর্ড। গত আসরে রংপুরের বিপক্ষে খুলনার হয়ে ৩ ওভারে ৫৫ রান দিয়েছিলেন নাসুম আহমেদও।
বোলিংয়ে এমন বাজে দিন কাটানোর পর খবর ছড়িয়ে পড়েছে, সাইফের বিরুদ্ধে ফিক্সিংয়ের তদন্ত করছে অ্যান্টি করাপশন ইউনিট। এই গুঞ্জন পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি শানিয়ান। শনিবার দলের অনুশীলনের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, খবর সত্যি হলে তদন্তে সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে রংপুর।
“আমি জানি অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। বিসিবির অ্যান্টি করাপশন ইউনিট এর বিরুদ্ধে কাজ করছে। সাইফ উদ্দিনের একটা খারাপ ওভার হয়েছে বলে তারা হয়তো কোন ধরনের তদন্ত বা কিছু করছে। রংপুর রাইডার্সের দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের থামানোর আমরা কেউ নই। তারা যদি কোনো তদন্ত করতে চায়, তারা করতে পারে। সেই রাইট তাদের আছে।”
“অন্যদিকে নিজেদের খেলোয়াড়কে প্রটেক্ট করা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের (অ্যান্টি করাপশন ইউনিট) সহযোগিতা করা ছাড়া আর উপায় নেই। যদি তাদের মনে হয় কোনো ক্রিকেটার ভুল করছে, তাদের তদন্ত কাজে স্বাগত জানাই। শুধু ক্রিকেটার নয়, পুরো ফ্র্যাঞ্চাইজির বিরুদ্ধে (তদন্ত) হলেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”
প্রসঙ্গক্রমেই প্রশ্ন ওঠে, রংপুরের পক্ষ থেকেই সাইফের ওই ম্যাচের বোলিং নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে কি না। এমন অভিযোগ উড়িয়ে দেন শানিয়ান।
“আমাদের সন্দেহের কিছু নেই। আমি মনে করি, আমাদের ক্রিকেটাররা মাঠে গিয়ে শতভাগ দেবে। তারপরও আমরা বলেছি যে, বিসিবি বা অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে কোনো ধরনের তথ্য দিয়ে যদি সহযোগিতা করতে হয়, সেটার জন্য আমরা একমত। তবে এমন না যে, আমরা বলেছি ওর (সাইফ) ওপর তদন্ত করতে।”
“এমন করাও ঠিক নয়। কারণ আমাদের কাছে এমন কোনো প্রমাণ নেই বা কিছু নেই, যা দিয়ে আমরা বলতে পারব ওর ওপর তদন্ত করা হোক। দলের ক্রিকেটারদের প্রটেক্ট করা আমাদের কাজ। অ্যান্টি করাপশনের কাজ তদন্ত করা। তারা তাদের কাজ করুক, আমরা আমাদের কাজ করি।”
টানা আট জয়ে সবার আগে প্লে-অফ নিশ্চিত করার পর জিততেই ভুলে গেছে রংপুর। প্রথম পর্বের শেষ চার ম্যাচেই হেরেছে তারা। এর সঙ্গে দলের অলরাউন্ডারের বিরুদ্ধে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ স্বাভাবিকভাবেই আরও ধাক্কা হিসেবেই আসার কথা দলটির জন্য।
তবে শানিয়ান বললেন, বাইরের কথায় কান দিচ্ছেন না তারা।
“বাইরের লোক অনেক কিছু বলতে পারে। আমাদের কাজ হলো, ঘরের ভেতরে যেন ফাটল না ধরে। এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কালকেও একসঙ্গে ডিনার করেছি। আমাদের এই ব্যাপার (সাইফের বিরুদ্ধে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ) নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি।”
“আমাদের কাজ হলো পরের ম্যাচ জেতা, ফাইনালে ওঠা ও ট্রফি জিতে ঠিকঠাক টুর্নামেন্ট শেষ করা। কার নামে কী অভিযোগ হচ্ছে, তা আমাদের চিন্তার বিষয় নয়। আমাদের ভাবনা খেলা নিয়ে। আমরা আজকে অনুশীলন করতে এসেছি। আমাদের লক্ষ্য একটাই, ফাইনালে যাওয়া।”