৮১ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে শীর্ষে অবস্থান সংহত করেছে ফরচুন বরিশাল, পাশাপাশি নিশ্চিত হয়ে গেছে প্রথম কোয়ালিফায়ারে খেলাও।
Published : 29 Jan 2025, 09:06 PM
প্রথম ইনিংসের শেষ দিকে স্টেডিয়ামের বড় পর্দায় ভেসে উঠল, 'আজকের দর্শক উপস্থিতি ১৯ হাজার ১৪২ জন।' চলতি বিপিএলে ফরচুন বরিশালের ম্যাচে এত দর্শকের আগমন দেখা গেছে প্রায় নিয়মিতই। কিন্তু বিশ হাজারের কাছাকাছি মানুষকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের স্বাদ উপহার দিতে পারেনি ঢাকা ক্যাপিটালস। যাচ্ছেতাই ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে বড় ব্যবধানে হেরেছে তারা।
ঢাকা না পারলেও অবশ্য মাঠে উপস্থিত দর্শক কিছুটা বিনোদন দিয়েছেন ফরচুন বরিশালের ব্যাটসম্যানরা। ঢাকাকে ৭৩ রানে অলআউট করার পর তাদের বোলারদের কচুকাটা করে মাত্র ৩৯ বলে ম্যাচ জিতে নিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
বিপিএলে এটিই (৮১) সবচেয়ে বেশি বল বাকি থাকতে জয়। ২০১৭ সালে সিলেট সিক্সার্সের ১০২ রানের লক্ষ্য ৭৩ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলেছিল ঢাকা ডায়নামাইটস।
১১ ম্যাচে বরিশালের এটি নবম জয়। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে অবস্থান আরও সংহত করল তারা। পাশাপাশি সেরা দুইয়ে থেকে প্রথম কোয়ালিফায়ার খেলাও নিশ্চিত হয়ে গেল বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।
দিনের প্রথম ম্যাচে চিটাগং কিংসের জয়ে আগেই প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছিল ঢাকা। সব মিলিয়ে ১১ ম্যাচে তাদের জয় ৩টি।
হতশ্রী ব্যাটিংয়ের ঢাকার পক্ষে ১৫ রানের বেশি করতে পারেননি কেউ। সর্বোচ্চ ১৫ রান আসে অধিনায়ক থিসারা পেরেরার ব্যাট থেকে।
বরিশালের হয়ে স্রেফ ২ রানে ৩ উইকেট নেন তানভির ইসলাম। দারুণ বোলিংয়ে ৩টি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ নাবি ও ফাহিম আশরাফও। টুর্নামেন্টে ফাহিমের উইকেট হয়ে গেল ২০টি।
শুরুতেই শেষের দিকে ঢাকা
ইবাদত হোসেন চৌধুরির প্রথম ওভারে চমৎকার শটে দুটি চার মারেন লিটন কুমার দাস। কিন্তু ওই শুরু ধরে রাখতে পারেননি তিনি। এক ওভার পর বোলিংয়ে এসে ঢাকার ওপেনারকে ফেরান তানভির ইসলাম।
স্টাম্প সোজা ডেলিভারি কাট করার চেষ্টায় বোল্ড হন ১০ রান করা লিটন। নিজের ওপর হতাশা থেকেই হয়তো, বেশ কিছুক্ষণ ক্রিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিড়বিড় করতে থাকেন তিনি।
তিনে নামা রিয়াজ হাসানকে ওই ওভারেই এলবিডব্লিউ করেন তানভির। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি আফগান তরুণের।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ফাহিম আশরাফের বলে ছক্কার খোঁজে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন তানজিদ হাসান। ১৪ বলে মাত্র ৭ রান করতে পারেন টুর্নামেন্টের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
পাওয়ার প্লেতে মাত্র ২৮ রান করতে পারে ঢাকা।
দলের বিপদ বাড়িয়ে অষ্টম ওভারে মোহাম্মদ নাবির বল আকাশে তুলে আউট হন সাব্বির রহমান।
কোটজি-মোসাদ্দেকের বিস্ময়কর ব্যাটিং
চার নম্বরে নামা জেপি কোটজি ভুলেই যান, রান-টান কিছু করতে হবে। এক প্রান্তে একের পর এক ডেলিভারিতে রান করতে পারেননি নামিবিয়ান ব্যাটসম্যান। ছয়ে নেমে মোসাদ্দেক হোসেনও কোনো বল স্বচ্ছন্দ্যে খেলতে পারেননি।
নবম ওভারে আক্রমণে ফেরা তানভিরের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল ক্রিজ ছেড়ে খেলার চেষ্টা করেন মোসাদ্দেক। স্বাভাবিকভাবেই বলের নাগাল পাননি। পরে ক্রিজে ফেরার চেষ্টাও করেননি অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। ৬ বলে ২ রান করে ধরেন ড্রেসিং রুমের পথ।
এক ওভার পর মোহাম্মদ নাবির বলে মোসাদ্দেকের আউটেরই পুন:মঞ্চায়ন করেন কোটজি। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল ক্রিজ ছেড়ে খেলার চেষ্টায় ব্যাটে লাগাতে ব্যর্থ হওয়ার পর আর পেছনে তাকাননি এই কিপার-ব্যাটার।
৫ রান করতে ১৮ বল খেলেন নামিবিয়ান ব্যাটসম্যান। স্ট্রাইক রেট মাত্র ২৭.৭৭! বিপিএলে অন্তত ১৫ বলের ইনিংসে এর চেয়ে কম স্ট্রাইক রেট আছে আর মোটে একটি। ২০২৩ সালে ঢাকা ডমিনেটর্সের হয়ে ১৭.৬৪ স্ট্রাইক রেটে ১৭ বলে ৩ রান করেছিলেন অ্যালেক্স ব্লেক।
একই ওভারে নাজমুল ইসলামও ড্রেসিং রুমে ফিরলে ৪১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে ঢাকা।
পেরেরা-বিটনের ব্যাটে বিব্রতকর রেকর্ড থেকে মুক্তি
বিপিএল ইতিহাসে সর্বনিম্ন ৪৪ রানের কমে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়া ঢাকাকে ৭০ পার করান রন্সফোর্ড বিটন ও থিসারা পেরেরা। ফুলারের ওভারে দুটি চার মারেন বিটন। ইবাদতের বলে ব্যাটের কানায় লেগে কিপারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা পান পেরেরা।
পরপর দুই ওভারে দুজনকেই আউট করেন ফাহিম আশরাফ। চলতি আসরে সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যায় ঢাকা। এর আগে চিটাগং কিংসের বিপক্ষে ৮০ রানে অলআউট হয়েছিল দুর্বার রাজশাহী।
ত্রয়ীর তিন
আগের ম্যাচে ১ ওভারে ১৬ রান খরচ করা তানভির এদিন ২ ওভারে এক মেইডেনসহ দেন মাত্র ২ রান। তার ঝুলিতে জমা পড়ে ৩ উইকেট। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন বাঁহাতি স্পিনার।
৪ ওভারে মাত্র ৯ রানে ৩ উইকেট নেন নাবিও। আর ৩ উইকেটের জন্য ফাহিমের খরচ ১৫ রান। কোটার পুরো ৪ ওভার বোলিং করেও সাফল্য পাননি ইবাদত।
আবার ব্যর্থ হৃদয়
ছোট লক্ষ্যেও ফর্ম খুঁজে পাননি তাওহিদ হৃদয়। প্রথম ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বল পুল করে ছক্কা মারেন তিনি। পরের ওভারে মেহেদি হাসানের বলও ওড়ান ছক্কায়। মনে হচ্ছিল, বড় কিছু করবেন তিনি।
কিন্তু তৃতীয় ওভারে মুস্তাফিজের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে যান জাতীয় দলের এই ব্যাটসম্যান (৮ বলে ১৫ রান)। সব মিলিয়ে আসরে ১০ ইনিংসে ১৮.৯০ গড়ে তার সংগ্রহ ১৮৯ রান। ফিফটি নেই একটিও, সর্বোচ্চ ৪৮।
মালানের ঝড়, বরিশালের রেকর্ড
তিন নম্বরে নেমে চালিয়ে খেলতে সময় নেননি দাভিদ মালান। একের পর এক চার-ছক্কায় দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
পঞ্চম ওভারে বিটনের বলে দুই চারের মাঝে দুটি ছক্কা মারেন ৩৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। পরের ওভারে মেহেদির বলে তামিম ইকবাল মারেন দুটি চার। পরে নাজমুলের বলে জোড়া বাউন্ডারিতে ম্যাচ শেষ করেন মালান।
৫ চার ও ২ ছক্কায় ১৬ বলে ৩৭ রান করেন মালান। ৪ চারে ১৪ বলে ২১ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ঢাকা ক্যাপিটালস: ১৫.৩ ওভারে ৭৩ (তানজিদ ৭, লিটন ১০, রিয়াজ ০, কোটজি ৫, সাব্বির ৭, মোসাদ্দেক ২, পেরেরা ১৫, নাজমুল ০, বিটন ১০, মুস্তাফিজ ২, মেহেদি ৪*; ইবাদত ৪-০-২৪-০, নাবি ৪-০-৯-৩, তানভির ২-১-২-৩, ফুলার ৩-০-১৮-১, ফাহিম ২.৩-০-১৫-৩)
ফরচুন বরিশাল: ৬.৩ ওভারে ৭৭/১ (তামিম ২১*, হৃদয় ১৫, মালান ৩৭*; মুস্তাফিজ ২-০-১৬-১, মেহেদি ২-০-২৩-০, মোসাদ্দেক ১-০-৬-০, বিটন ১-০-২০-০)
ফল: ফরচুন বরিশাল ৯ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তানভির ইসলাম