আইসিসির খোলনলচে পাল্টে ফেলতে তিনটি প্রভাবশালী বোর্ডের 'বিতর্কিত' খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও তা আর ভোটাভুটির জন্য সভায় ওঠানো হয়নি। তবে এই প্রস্তাবে কিছু পরিবর্তনের পর সব বোর্ড এর অনেক বিষয়ে ‘একমত’ হয়েছে বলে আইসিসি জানিয়েছে।
Published : 28 Jan 2014, 08:45 PM
‘৩ মোড়লের’ প্রস্তাবে সায় দেয়নি বাংলাদেশ
ভারতীয় বোর্ডের ওয়েবসাইট হ্যাকড
আইসিসি পুনর্গঠন প্রস্তাবে মুশফিকের হতাশা
টেস্ট খেলার অধিকার রক্ষায় লড়বে বাংলাদেশ
বড় ৩ বোর্ডের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ফিকা
খসড়া প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি দক্ষিণ আফ্রিকার
দুবাইয়ে মঙ্গলবার আইসিসির ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা সভায় এ নিয়ে পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাক-বিতণ্ডার পর তা ভোটে না উঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আগামী মাসে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের তৈরি করা এই খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হবে।
সভায় বাকবিতণ্ডার বিষয়ে আইসিসি প্রেসিডেন্ট অ্যালান আইজ্যাক বলেন, তিন দেশের খসড়া 'পজিশন পেপার' গণমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এত সমস্যা হয়েছে। এ জন্যই সভায় তিন বোর্ডের প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) ‘৩ মোড়লের’ এই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নেয় বলে জানান গণমাধ্যম ও যোগাযোগ কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।
পরে সব সদস্যেরই যোগ্যতা অনুযায়ী সব ধরনের ক্রিকেট খেলার সুযোগ বর্তমানের মতোই রাখার বিষয়ে সভায় সবাই একমত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের টেস্ট খেলা নিয়ে শঙ্কা দূর হয়েছে।
সভা শুরুর আগেই ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ), পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি) আইসিসির কাছে লেখা চিঠিতে প্রভাবশালী তিনটি বোর্ডের তৈরি করা প্রস্তাব উত্থাপন পিছিয়ে দিতে চিঠি দেয়। বিসিবি চিঠিতে প্রস্তাবটি নিয়ে 'আরো আলোচনার প্রয়োজন আছে' বলে উল্লেখ করে।
অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে সঙ্গে নিয়ে আইসিসির পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য ভারতীয় বোর্ড বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার খোলনলচে পাল্টে ফেলার প্রস্তাব আনার পর থেকেই এ নিয়ে প্রবল সমালোচনা হচ্ছে।
মূল খসড়া প্রস্তাবে আইসিসির রাজস্ব বণ্টন মডেল, প্রশাসনিক কাঠামো ও ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে (এফটিপি) বড় ধরনের পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছিল। পাশাপাশি র্যাঙ্কিংয়ের ৯ ও ১০ নম্বর দেশকে টেস্ট খেলতে না দিয়ে সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে আইসিসি কন্টিনেন্টাল কাপে খেলানোর প্রস্তাব রাখা হয়।
ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কমপক্ষে আগামী চার বছর টেস্ট খেলার সুযোগ থাকতো না বাংলাদেশের। খসড়া প্রস্তাবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এই দুই স্তরের টেস্ট ফরম্যাট থেকে সরে আসা।
এ ছাড়া প্রভাবশালী ওই তিন দেশের প্রায় সব সুপারিশের বিষয়ে সব দেশ একমত হয়েছে বলে আইসিসি দাবি করেছে। আর এর মাধ্যমে ভারতের নেতৃত্বে থাকা এই জোটই আইসিসিতে সর্বেসর্বা হতে যাচ্ছে।
মঙ্গলবারের সভার আগে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই), ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) এবং ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) তাদের পরিকল্পনায় সম্মতি দিতে আইসিসির অন্য পূর্ণ সদস্যদেশগুলোকে চাপ দেয়। এতে কাজও হয়েছে, সভায় খসড়া প্রস্তাবের অনেক কিছুই দেশগুলো মেনে নিয়েছে।
আইসিসির সদস্য দেশগুলোর বোর্ডের প্রধানকে নিয়ে গড়া এক্সিকিউটিভ বোর্ড আর বিভিন্ন কমিটিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য এক্সিকিউটিভ কমিটি (এক্সকো) নামে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এর স্থায়ী সদস্য হবে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। আর বাকি সাতটি দেশগুলোর থেকে আসবে এর চতুর্থ সদস্য। পরে নতুন খসড়া প্রস্তাবে চারটির জায়গায় এক্সকোতে পাঁচ সদস্য রাখার কথা বলা হলে সবাই তাতে রাজি হয়।
আইসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইসিসি-র প্রথম চেয়ারম্যানের গদি পাবে ভারত। অন্য দু'টি গুরুত্বপূর্ণ কমিটির প্রধান হিসেবে প্রথমে থাকছেন 'মোড়লিপনায়' ভারতের দুই সহযোগী অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বোর্ড। আইসিসির বিজ্ঞপ্তির ভাষ্যমতে এটাও নাকি সভায় সবাই মেনে নিয়েছে।
তিন দেশের এই পরিবর্তিত প্রস্তাব পাশ হলেও বিশ্ব ক্রিকেটে ক্ষমতার দু’টি স্তর তৈরি হবে। আইসিসিতে সব সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা চলে যাবে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও বিশেষ করে ভারতের হাতে। এরপরেও সভায় ভারতের আরো নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকায় উঠে আসার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে বলে আইসিসি জানায়।
সভায় অংশ নেয়া একটি দেশের বোর্ড কমকর্তা জানিয়েছেন, আইসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যেভাবে সব সুপারিশের ব্যাপারে ঢালাওভাবে সবার ‘একমত’ হওয়ার বলা হয়েছে, আদতে বিষয়টি সেভাবে হয়নি। বরং অনেকেই বলেছে, তারা নিজেদের বোর্ডে এ নিয়ে আলোচনা করবে।
তবে আইসিসির নির্বাহী পর্ষদের প্রথম দিনের সভা শেষ হয়েছে সিঙ্গাপুরে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত সমাধানের রাস্তা খোলা রেখেই।
সবকিছু এখন খোলাসা হওয়ার পর ‘৩ মোড়ল’ ছাড়া অন্য দেশগুলোর বোর্ডে আলোচনা হবে পরবর্তী সভায় পরিবর্তিত খসড়া প্রস্তাবটি উঠলে তাতে সমর্থন দেয়া হবে কিনা। পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা এরই মধ্যে নিজেদের বোর্ডে এ নিয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছে।