“মসজিদের সাম্প্রতিক ঘটনার সঙ্গে এই নির্দেশনার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই,” বলছেন রেজিস্ট্রার।
Published : 28 May 2024, 09:56 PM
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মসজিদসহ অন্যান্য অ্যাকাডেমিক ভবন ও এর আশেপাশে বসবাসরত কর্মচারীদের তিন মাসের মধ্যে আবাসস্থল ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আইনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে মধ্যরাতে এক নারী শিক্ষার্থীকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়ার ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ইমামকে নামাজ পড়ানো থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।
ঘটনা তদন্তে সোমবার ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার পরদিনই কর্মচারীদের আবাসস্থল ত্যাগ করার নির্দেশনা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ভবনসহ অন্যান্য অ্যাকাডেমিক ভবন ও অন্যান্য পার্শ্ববর্তী স্থানে কর্মচারীগণ যত্রতত্র বসবাস করায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে বসবাসকারী কর্মচারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসস্থল আগামী ২৬ অগাস্টে অর্থাৎ তিন মাসের মধ্যে ত্যাগ করার নির্দেশ প্রদান করা হল।”
ক্যাম্পাসে সীমিত সংখ্যক শিক্ষকের জন্য ডরমিটরি আছে। তবে কর্মচারীদের জন্য কোনো আবাসনের ব্যবস্থা নেই। তারা নিজেদের মতো করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ঘর বানিয়ে বসবাস করে আসছেন।
কর্মচারী সমিতির সভাপতি জামাল হোসাইন বলেন, ক্যাম্পাসের বিভিন্নস্থানে অবস্থানরত সিংহভাগই চতুর্থ শ্রেণির সহায়ক কর্মচারী। তৃতীয় শ্রেণির কয়েকজন কর্মচারীও পরিবার নিয়ে ক্যাম্পাসে থাকেন। সব মিলিয়ে ৯০টির মত পরিবার বসবাস করছেন।
জামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রার পর থেকেই তারা ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকছেন। ক্যাম্পাসে সংঘটিত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় তারাই এগিয়ে আসেন।
“পানি, বিদ্যুৎ ছাড়াও অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে এদের ক্যাম্পাসে থাকা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত বিষয়টি পুনরায় ভেবে দেখা।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়ক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে একটা গ্রুপ আছে- যারা চায় না, আমরা ক্যাম্পাসে থাকি; এটা তাদের হিংসা হয়।
“প্রতিবার একজন নতুন উপাচার্য এলে উনাকে আমাদের থাকার বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন আমরা এখানে থাকতে না পারি।"
আবু সাঈদ বলেন, “আমাদের বেতন কত? চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হয়ে বাইরে বাসা নিয়ে থাকা কি সম্ভব? যেই বেতন পাই- তা দিয়ে বাসা ভাড়া দিব নাকি ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ দেব? খাবইবা কী? বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়লে পরিবার নিয়ে আমরা পথে বসে যাব।”
এর আগে মৌখিকভাবে একাধিকবার আবাসস্থল ছাড়তে বলা হয়েছে জানিয়ে সাঈদ বলেন, “কিন্তু বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমরা এখানকার পুরাতন লোক, দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করে আসছি। আমরা ক্যাম্পাসে গিয়ে উপাচার্য ম্যাডামের সাথে কথা বলব। উনি মানবিক দিক বিবেচনা করবেন বলে আশা রাখি।"
জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদেরকে মৌখিকভাবে অনেকবার বলা হয়েছে, কিন্তু তারা ছাড়েননি। এত ছোট ক্যাম্পাসে কর্মচারীরা অনেক জায়গা জুড়ে আছেন। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের ৩ মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যেন তারা আবাসস্থল ত্যাগ করেন।"
হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত, এমন প্রশ্নের উত্তরে রেজিস্ট্রার আইনুল বলেন, “তারা এখানে পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে থাকছে। অপরিকল্পিতভাবে নিজেদের ইচ্ছামতো বাসস্থান তৈরি করে আছে, যার ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে পারে।
“বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও তারা বিভিন্ন কৌশলে মৌখিক অনুমতি নিয়ে থেকেছেন। তাই তাদের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"
এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে মসজিদের সাম্প্রতিক ঘটনার সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে আইনুল ইসলাম বলেন, “দুইটা একদম ভিন্ন ঘটনা, একটির সাথে আরেকটির কোনো সম্পর্ক নেই।"