দুঃস্বপ্নের ব্যাটিংয়ের পর হতাশার বোলিং। ব্যাটসম্যানরা রেকর্ড সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর বোলাররা পারলেন না ঘাসের উইকেট কাজে লাগাতে। টেস্টের প্রথম দিনেই তাই কোণঠাসা বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট একাই করেছেন গোটা বাংলাদেশ দলের দ্বিগুণের বেশি রান।
Published : 05 Jul 2018, 01:12 AM
অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম দিন লাঞ্চের আগেই ৪৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিন শেষ করেছে ২ উইকেটে ২০১ রানে। প্রথম দিনেই ক্যারিবিয়ানদের লিড হয়ে গেছে ১৫৮!
এই উইকেটে কিভাবে ব্যাট করতে হয়, সেটির উদাহরণ মেলে ধরে ব্র্যাথওয়েট অপরাজিত ২০৪ বলে ৮৮ রানে। বাংলাদেশ দলের চেয়ে বেশি রান করেছেন আরও দুই ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান।
নিজেদের টেস্ট ইতিহাসেই এটিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে দিন বললে খুব ঝুঁকি থাকে না। বাংলাদেশের আগের সর্বনিম্ন রান ছিল যে টেস্টে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই টেস্টের প্রথম দিনটিকেই হয়ত রাখা যায় কাছাকাছি। ২০০৭ সালে সেই টেস্টে লাঞ্চের পর দ্বিতীয় বলে ৬২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ, লঙ্কানরা দিন শেষ করেছিল ১ উইকেটে ১৫৪ রানে।
সকালে ব্যাটিংয়ে চূড়ান্ত ব্যর্থতার পর বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রাখতে পারত বোলিং। সেই সুযোগও ছিল। উইকেট তখনও প্রাণবন্ত, সবুজ ঘাস সব জীবন্ত। আর্দ্রতাও ছিল কিছু, ছিল বাউন্স। কিন্তু সেসবকে কাজে লাগাতে জানতে হবে তো!
চূড়ান্ত হতাশার দিনে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করেছে ক্যাচ মিস। কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে ৩৫ রানে স্মিথের সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন দেশসেরা উইকেটকিপার বলে বিবেচিত নুরুল হাসান সোহান। শেষ বিকেলে সাকিব আল হাসানের বলে ৭৮ রানে ব্র্যাথওয়েটের ক্যাচ মিড অনে ছেড়েছেন মুশফিকুর রহিম।
এছাড়া আর উইকেটের সুযোগও ততটা সৃষ্টি করতে পারেনি বাংলাদেশ। ক্যারিবিয়ানদের মতো ফুল লেংথে টানা বোলিং করতে পারেননি কোনো পেসার। ফুল লেংথ বলগুলোর বেশির ভাগ ছিল অনেক বাইরে। মুভমেন্ট মিললেও তাই ব্যাটসম্যানরা ছেড়েছেন অনায়াসে।
বরং সাকিবের স্পিনেই একটু অস্বস্তি ছিল ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের। খারাপ করেননি মিরাজ, শেষ বিকেলে দারুণ করেছেন মাহমুদউল্লাহ।
বোলারদের অভাবনীয় সাফল্যের পর ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দারুণ শুরু এনে দেন ব্র্যাথওয়েট ও ডেভন স্মিথ। রান খুব করে চাইছিলেন দুজনই, সবশেষ শ্রীলঙ্কা সিরিজে তিন টেস্টে দুজনের ছিল কেবল একটি করে ফিফটি। বাংলাদেশের ধারহীন বোলিংকে কাজে লাগিয়ে সেই দুজনই গড়েছেন শতরানের জুটি।
২০১৪ সালে বাংলাদেশের ক্যারিবিয়ান সফরে সেন্ট লুসিয়ায় ১৪৩ রানের জুটি গড়েছিলেন এই ব্র্যাথওয়েট ও লিওন জনসন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, পরের ৬২ ইনিংসে আর শতরানের উদ্বোধনী জুটি পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশকে পেয়েই কাটল সেই খরা।
জুটি ভাঙলেও স্বস্তি ফেরেনি বাংলাদেশের। দ্বিতীয় উইকেটে আরেকটি জুটি গড়েন ব্র্যাথওয়েট ও কাইরান পাওয়েল।
৮১ রানের এই জুটি ভাঙে দিনের শেষ ভাগে। মাহমুদউল্লাহকে বোলিংয়ে এনে সাফল্য মেলে দ্বিতীয় ওভারে। বাড়তি লাফানো বলে স্লিপে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত রিফ্লেক্স ক্যাচ নেন লিটন দাস। ৪৮ রানে ফেরেন পাওয়েল।
নাইটওয়াচম্যান দেবেন্দ্র বিশুকে নিয়ে বাকি সময়টুকু নিরাপদে কাটিয়ে দেন ব্র্যাথওয়েট। দারুণ দিনের পর ক্যারিবিয়ানদের মুখে তখন হাসি। একটু স্বস্তি হয়ত ছিল বাংলাদেশেরও। বিভীষিকার দিনটি তো শেষ হলো!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৮.৪ ওভারে ৪৩ (তামিম ৪, লিটন ২৫, মুমিনুল ১, মুশফিক ০, সাকিব ০, মাহমুদউল্লাহ ০, সোহান ৪, মিরাজ ১, রাব্বি ০, রুবেল ৬*, আবু জায়েদ ২; রোচ ৫/৮, গ্যাব্রিয়েল ০/১৪, হোল্ডার ২/১০, কামিন্স ৩/১১)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৬৮ ওভারে ২০১/২ (ব্র্যাথওয়েট ৮৮*, স্মিথ ৫৮, পাওয়েল ৪৮, বিশু ১*; আবু জায়েদ ১/৫৫, রুবেল ০/২৪, কামরুল ০/৪৫, সাকিব ০/২২, মিরাজ ০/৪৫, মাহমুদউল্লাহ ১/৬)।