দুঃস্বপ্নের সকালে ৪৩ রানে শেষ বাংলাদেশ

উইকেটে ঘাস। আছে আর্দ্রতাও। আকাশ মেঘলা। খেলা শুরুর আগে হয়েছে বৃষ্টি। ব্যাটসম্যানদের অপেক্ষায় চ্যালেঞ্জ তাই ছিল। কিন্তু এভাবে ভেঙে পড়বে বাংলাদেশ, এটা কি ওয়েস্ট ইন্ডিজও ভাবতে পেরেছিল? দুঃস্বপ্ন বললেও বুঝি বলা হয় কম। ম্যাচের প্রথম সকালে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল লাঞ্চের আগেই।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2018, 02:04 PM
Updated : 4 July 2018, 10:23 PM

অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম সকালে টস হেরে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ৪৩ রানে। টেস্টে নিজেদের আগের সর্বনিম্ন রানকে পেছনে ফেলেছে অনেকটা ব্যবধানে।

২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোর পি সারা ওভালে ৬২ ছিল আগের সর্বনিম্ন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটি সব দল মিলিয়েই সর্বনিম্ন।

সব মিলিয়ে টেস্ট ইতিহাসের এটি দশম সর্বনিম্ন স্কোর। গত ৪৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম রান!

বাংলাদেশের ইনিংসে বাউন্ডারি ছিল কেবল তিনটি। দুটি মেরেছেন লিটন দাস, একটি দশে নামা রুবেল হোসেন।

টেস্টের আগে যাকে নিয়ে ছিল মূল শঙ্কা, সেই শ্যানন গ্যাব্রিয়েল উইকেটই পেলেন না। বাংলাদেশকে ধসিয়ে দিলেন অন্যরা। ধ্বংসজ্ঞের শুরু করেছিলেন কেমার রোচ। ৫ ওভারের এক স্পেলে ৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট। চার পেসার মধ্যে সবচেয়ে অনভিজ্ঞ যিনি, সেই মিগেল কামিন্স নিয়েছেন তিনটি।

এক ওভারে তিন উইকেট নেওয়ার পর পায়ের পেশিতে টান লাগায় মাঠের বাইরে চলে যান রোচ। নাহলে বাংলাদেশের স্কোর কত থাকত, কে জানে!

উইকেট সবুজ দেখে ম্যাচের আগের দিন বাংলাদেশের কোচ ও অধিনায়ক বলেছিলেন, ভড়কে যায়নি দল, বরং প্রস্তুত তারা চ্যালেঞ্জ নিতে। কিন্তু ২২ গজে দেখা গেল না সেই প্রত্যয়ের ছিটেফোটা।

ব্যর্থতার মূল দায় ব্যাটসম্যানদেরই। কেবল মাহমুদউল্লাহর আউট ছাড়া খুব অসাধারণ বলে আউট হননি কোনো ব্যাটসম্যানই।

ঘাসের উইকেট আর মেঘলা আকাশ মিলিয়ে টস জয়ী দলের বোলিং নেওয়া ছিল অনুমিতই। জেসন হোল্ডার বাংলাদেশকে পাঠান ব্যাটিংয়ে। তিন পেসার নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ।

দেশের ৮৮তম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয় পেসার আবু জায়েদ চৌধুরীর। তখন কে ভাবতে পেরেছিল, বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং পাওয়ার পরও লাঞ্চের আগে বোলিং করতে হবে তাকে।

দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকে হারিয়ে উইকেট পতনের স্রোত শুরু। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৪ হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়া থেকে ছিলেন ১৫ রান দূরে। ফিরলেন ৪ রান করেই।

স্টাম্পের বাইরে পিচ করে আরেকটু বেরিয়ে যাওয়া রোচের যে বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন তামিম, সেটি ছেড়ে দিলেও পারতেন। তেমনি ছেড়ে দিলে পারতেন মুমিনুল হকও। আউট হয়েছেন জায়গার দাঁড়িয়ে শরীর থেকে দূরে ব্যাট চালিয়ে।

টানা দুই ওভারে দুটির পর নিজের পরের ওভারে রোচ নেন তিন উইকেট। বাংলাদেশের তিন অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার মুশফিক, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ ফেরেন রানের মুখ দেখার আগেই। রান তখন ৫ উইকেটে ১৮।

ওপেনার লিটন দাস তখনও টিকে। অভিষেক টেস্টের দেড় বছর পর দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে লিটন গড়েছেন ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি, যদিও সেটি কেবলই ১৬ রানের।

দু অঙ্ক ছোঁয়া একমাত্র ব্যাটসম্যান লিটন আউট হয়েছেন সবচেয়ে বাজে শটে। ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়েও বারবার উড়িয়ে মারতে চাইছিলেন। সেই চেষ্টায়ই শেষ পর্যন্ত উইকেট উপহার দিয়ে আসেন কামিন্সকে। ওই ওভারে আউট সোহানও।

৩৫ রানে ৯ উইকেট হারানোর পর শেষ জুটির ৮ রানকেও মনে হচ্ছিল মহামূল্য! দলীয় পঞ্চাশ ছোঁয়া যদিও হয়নি।

লাঞ্চের আগে ৩ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোনো উইকেট না হারিয়ে তুলেছে ৯ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: (লাঞ্চ পর্যন্ত)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৮.৪ ওভারে ৪৩ (তামিম ৪, লিটন ২৫, মুমিনুল ১, মুশফিক ০, সাকিব ০, মাহমুদউল্লাহ ০, সোহান ৪, মিরাজ ১, রাব্বি ০, রুবেল ৬*, আবু জায়েদ ২; রোচ ৫/৮, গ্যাব্রিয়েল ০/১৪, হোল্ডার ২/১০, কামিন্স ৩/১১)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৩ ওভারে ৯/০।