ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে জেতানো তানভির ইসলামকে এই ম্যাচেই বাদ দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন প্রধান কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
Published : 03 Feb 2024, 09:41 AM
'জোরে করেই যদি বল ঘোরাতে পারি, তাহলে আস্তে করার প্রয়োজন কী'- গত বছর বিপিএল শেষে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তানভির ইসলাম। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বাঁহাতি স্পিনারের শক্তির জায়গা মূলত এটি, জোরের ওপর টার্ন করাতে পারেন তিনি। তবে পরিস্থিতি বুঝে গতি বৈচিত্রেও যে ব্যাটসম্যানদের নাকানিচুবানি খাওয়াতে পারেন, সেটিও দেখিয়ে দিলেন এবার।
গত দুই বিপিএলে কুমিল্লার হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করা তানভির এবারও ছুটে চলেছেন। সিলেটে শুক্রবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে দলের জয়ের নায়ক তিনি। দারুণ লেংথ, টার্ন ও গতির তারতম্যের নতুন বলে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন ২৫ বছর বয়সী স্পিনার। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে তিনি ১৩ রানে নেন ৪টি উইকেট। অথচ এই ম্যাচেই কিনা তাকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবছিলেন কুমিল্লার প্রধান কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন!
একাদশের বাইরে থাকার অভিজ্ঞতা আগেই আছে তানভিরের। গত আসরেই যেমন প্রথম দুই ম্যাচে তাকে খেলায়নি কুমিল্লা। তৃতীয় ম্যাচ থেকে সুযোগ পেয়ে তিনি লিখেছেন সাফল্যের গল্প। পরের সবগুলো ম্যাচ খেলে নিয়েছেন আসরের সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট। এবার আর তাকে বেঞ্চে বসায়নি কুমিল্লা। শুরু থেকেই খেলছেন দলের মূল স্পিনার হিসেবে।
প্রথম চার ম্যাচে বোলিং খুব একটা খারাপও করেননি তানভির। ওভারপ্রতি সাত রান খরচায় নেন ৫ উইকেট। তবে তার বোলিংয়ের ধরনে পুরোপুরি সন্তুষ্ট ছিলেন না সালাউদ্দিন। ভাবছিলেন তিনি দলীয় ভারসাম্যের কথাও। একাদশে খুশদিল শাহ নিয়মিতই খেলছেন, ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বাঁহাতি স্পিন যিনি ভালোই করতে পারেন।
সেই ভাবনা থেকে সরে এসে শেষ পর্যন্ত শুক্রবার দুই বাঁহাতি স্পিনার নিয়েই খেলে কুমিল্লা। পারফরম্যান্স দিয়েই তানভির নিশ্চিত করে দেন, সহসাই তাকে বাদ দেওয়া যাবে না! নতুন বলে টানা ৪ ওভারের স্পেলে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা নেন তিনি। প্রতিটি রানের জন্য সংগ্রাম করতে হয় আভিশকা ফার্নান্দো, টম ব্রুস, শাহাদাত হোসেনদের।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন জানালেন তানভিরকে বাদ দিতে চেয়েও শেষ পর্যন্ত কোন ভাবনা থেকে আবার সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন তিনি।
“তানভিরকে তো একবার বাদ দেওয়ার চিন্তা করছিলাম। রাতের বেলা দুই বাঁহাতি স্পিনার নিয়ে খেলব কি না, ভাবছিলাম। তবে তানভির যেহেতু গত দুইটা বছর আমাদের ভালো সার্ভিস দিয়েছে... এবং ওর একটা বড় শক্তি হলো, ও বলটা স্পিন করায়। এখানে যারা স্পিন করায়, তারা সাহায্য পাবে। আগের ম্যাচটা দেখে আমাদের মনে হয়েছে, এখানে রাতের ম্যাচে স্পিন হবে।”
কুয়াশাচ্ছন্ন কন্ডিশনে নতুন বলে প্রথম ওভার থেকেই টার্ন পেতে শুরু করেন তানভির। সচরাচর ৯০ থেকে ৯৫ কিমি প্রতি ঘণ্টায় করলেও উইকেটের অবস্থা বুঝতে পেরে প্রতি ওভারেই গতি কমিয়ে কিছুটা ঝুলিয়ে বোলিং করতে থাকেন তিনি।
তার শেষ ওভারে গতির তারতম্যে বিভ্রান্ত হন ব্রুস। ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন কিউই কিপার-ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় ওভারে আভিশকাকে রীতিমতো নাচিয়ে ছাড়েন তানভির। পুরো ওভারে কঠিন পরীক্ষার সামনে পড়া শ্রীলঙ্কান ওপেনার শেষমেশ টার্নে পরাস্ত হয়ে ক্যাচ দেন স্লিপে।
এমনিতে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের পরিস্থিতি বুঝে খেলার সামর্থ্যের ঘাটতির কথা বলে নিয়মিত সমালোচনা করেন সালাউদ্দিন। তবে চট্টগ্রামের বিপক্ষে ম্যাচের উইকেট ঠিকঠাক পড়ে সেই অনুযায়ী বোলিং করায় তানভিরকে বাহবা দিতেও ভুললেন না অভিজ্ঞ কোচ।
“তানভির স্পিন করিয়েছে। তবে ব্রেক যে এত পাবে, সেটা আশা করিনি। যেহেতু তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পেরেছে, এটাই বড় গুণ। প্রতিদিনই আপনি একরকম যাবেন না। আপনাকে তাড়াতাড়ি উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। তানভির আজকে সেটা করতে পেরেছে। এই পরিপক্বতা সে দেখিয়েছে। উইকেটটা বুঝতে পেরেছে যে কীভাবে বল করতে হবে।”
“আজকে (শুক্রবার) ভালো জায়গায় বল করেছে, উইকেট বুঝে করেছে। যেটা আমাদের ছেলেদের সমস্যা যে, তারা বোঝে না কোন উইকেটে কেমন বোলিং করতে হবে। সে (তানভির) আগের ম্যাচগুলোতে খারাপ করছিল, আমি খুশি ছিলাম না। আজকে খুব ভালো জায়গায় বোলিং করেছে, সিমে হিট করেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, উইকেটটা বুঝতে পেরেছে। সাহস করে বোলিং করেছে। ভালো লেগেছে।”
ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে ইনিংস বিরতিতে তানভির বলেন, কোচ সালাউদ্দিনের পরামর্শ অনুসরণ করেই সাফল্য পেয়েছেন তিনি।
“সালাউদ্দিন স্যার ম্যাচের আগেই বলেছেন, 'উইকেটে বল টার্ন করতে পারে, সামনে সামনে করো। বাতাসে করো, তাহলে সহায়তা পাবে।' তা-ই হয়েছে। চেষ্টা করেছি সেভাবে বল করতে, ব্যাটসম্যান যেন সামনে খেলে। তাহলে একটা সুযোগ থাকবে। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।”