বিপিএলের ম্যাচে সাত উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়ার পর এই পেসার বললেন, এমন কিছুর ভাবনা তার ছিল।
Published : 02 Jan 2025, 07:29 PM
হাসতে হাসতে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ঢুকলেন তাসকিন আহমেদ। চেয়ারে বসার পরও মুখে চওড়া হাসি। সেটা নিয়েই রসিকতা করে বললেন, “এরকম জিততে পারলে তো হাসবই…।” তবে দলের জয়ই শুধু নয়, তার এমন ফুরফুরে থাকার কারণ আছে আরও। দিনটি তো তারই!
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৫ উইকেট পাওয়াই অনেক বড় ব্যাপার। তাসকিন সেখানে একাই নিয়েছেন সাত উইকেট! বিপিএলে বৃহস্পতিবার তাসকিনের রেকর্ড গড়া পারফরম্যান্সের পথ ধরে ঢাকা ক্যাপিটালসকে হারিয়ে আসরে প্রথম জয়ের স্বাদ পেয়েছে দুর্বার রাজশাহী।
আইসিসির সব সদস্য দেশ টি-টোয়েন্টি মর্যাদা পেয়ে যাওয়ার পর বিচিত্র সব রেকর্ড হয় এখন নিয়মিতই। বিশ্বজুড়ে এত টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয় যে, হিসেব রাখাও কঠিন। তার পরও এক ম্যাচে সাত উইতেট শিকারের নজির ছিল তাসকিনের আগে স্রেফ দুটি।
বিপিএলে প্রথমবার সাত শিকারের কীর্তি গড়ার পর ম্যাচ সেরা হয়ে সংবাদ সম্মেলনে তাসকিন বললেন, এই অর্জনের ওজন তিনি জানেন।
"ফাইফার (৫ উইকেট) তো যে কোনো সংস্করণেই অনেক স্পেশাল। কারণ অনেকবার ৩-৪ উইকেট পেয়েছি। কিন্তু একটু ভাগ্যও লাগে ৫ উইকেট পেতে। আমার জন্য এটা বড় পাওয়া। যেহেতু আমি বাংলাদেশের ছেলে, বিপিএলের ইতিহাসে আমার নাম থাকবে খেলা ছাড়ার পরও, এটা আমার জন্য গর্বের ব্যাপার।"
এমনিতে পারফরম্যান্স নিয়ে ক্রিকেটারদের নানারকম স্বপ্ন থাকে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাত উইকেটকে বলা যায়, অনেকটা স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো। তবে তাসকিন বললেন, এমন কিছুর ভাবনা তার ছিল।
"হ্যাঁ ভেবেছি…! আসলে না ভাবলে হতো না (হাসি)। তবে উইকেট পেতে ভাগ্যও পাশে থাকতে হয়। কিন্তু আমি খুশি যে, বোলিংয়ে যেটা করতে চেয়েছি, সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে। ভালো বোলিং করতে পারাই গুরুত্বপূর্ণ। উইকেট তো অনেক সময় কম-বেশি হয়। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।"
"মজার বিষয় হলো, আমাদের দলের ম্যাসিউর আনোয়ার বলতেছিল, 'ভাইয়া, তুমি আজকে ৪ উইকেট নাও।' আমি ভাবলাম, ‘চাচ্ছিস যখন, আল্লাহর কাছে বেশিই চা!’ আমি ওটা... মানে ৭ উইকেট পেয়ে গেছি (হাসি)। আমি আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি এবং জিতেছি।"
শেষ ওভারে তিন উইকেট নিয়ে সপ্তম উইকেটের স্বাদ যখন ফেলেন তাসকিন, তখনও একটি ডেলিভারি তার বাকি ছিল। স্ট্রাইকে তখন মুস্তাফিজুর রহমান। আট উইকেটও তখন অসম্ভব মনে হচ্ছিল না। সেটি করতে পারলে অনন্য এক নজির গড়া হতো। তবে মুস্তাফিজ আউট হননি। তাসকিন অবশ্য যা পেয়েছেন, তাতেই খুশি।
"আসলে লোভে যাই নাই (হাসি)। বেশি লোভে গেলে হাফভলি হয়ে চারও হয়ে যেতে পারত। আমি একটি একটি বল ধরে এগোচ্ছিলাম এবং নিজের ভাবনায় স্বচ্ছ ছিলাম যে কী করা দরকার। ভালো লেগেছে যে, যখনই অধিনায়ক আমাকে ভরসা করে দায়িত্ব দিয়েছে, ব্রেক থ্রু দিতে পেরেছি।"
নিজের দ্বিতীয় বলেই লিটন কুমার দাসকে ফিরিয়ে উইকেট শিকার শুরু করেন তাসকিন। পরে আরও ছয়টি উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়া বোলিংয়ের পর বললেন, সবচেয়ে ভালো লেগেছে তার প্রথম উইকেটটিই।
“প্রথমটি, যেটিতে লিটন আউট হলো। আনপ্লেয়েবল ডেলিভারি ছিল, যে কোনো ব্যাটসম্যানেরই ওখানে ব্যাট পেতে দিতে হতো এবং (কোনায় লেগে) নিয়ে গেছে। এরকম উইকেটে বল ক্যারি করলে ফাস্ট বোলারদের ভালো লাগে এবং বাংলাদেশের উইকেটে এমন ক্যারি করছে মানে ভালো ব্যাপার।”
গত বছর তিন সংস্করণ মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩০ ম্যাচে ৬৩ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। বাংলাদেশের কোনো পেসারের জন্য যা এক পঞ্জিকাবর্ষে রেকর্ড। নতুন বছরের শুরুটাও তার দারুণ হলো বিপিএলে। এই সাত উইকেটের আগে প্রথম ম্যাচে নিয়েছিলেন তিন উইকেট।
আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে ২৯ বছর বয়সী পেসার বললেন, তার কাছ থেকে এমন পারফরম্যান্সই প্রাপ্য দলগুলির।
“সত্যি বলতে আমার মনে হয়, আমার দেওয়ার সময় শুরু হয়েছে। এতদিন বোর্ড পাশে থেকেছে, অভিজ্ঞতা হয়েছে, পরিস্থিতি ভালো বুঝতে পারি, ম্যাচ সচেতনতা ভালো হচ্ছে। আমার দায়িত্ব এখন দলকে দেওয়া, যে দলেই খেলি, বাংলাদেশ হোক বা ফ্র্যাঞ্চাইজি।”