রাজশাহীর হয়ে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ‘ম্যান অব দা ম্যাচ’ নাজমুল হোসেন শান্ত, রানের তালিকায় শীর্ষে ওঠে টুর্নামেন্ট শেষ করলেন তরুণ জিসান আলম।
Published : 19 Dec 2024, 02:28 PM
মিডিয়াম পেসার গোলাম কিবরিয়ার লেংথ বল উড়িয়ে মারলেন জিসান আলম। টাইমিং খুব খারাপ হলো না। লং অনের ওপর দিয়ে বল উড়ে যাচ্ছিল। ফিল্ডার সেখানে তাওহিদ হৃদয়, যার উচ্চতা খুব বেশি নয়। কিন্তু অনেকটা লাফিয়ে দারুণভাবে বল মুঠোয় জমালেন হৃদয়, এরপর এক পায়ে শরীরের ভারসাম্য রাখলেন চমৎকারভাবে। বিস্মিত ও হতাশ হয়ে মাঠ ছাড়লেন জিসান।
তার বিদায়ের পর পথ হারাল সিলেট বিভাগও। জিততে পারলে জিইয়ে থাকত তাদের প্লেঅফ সম্ভাবনা। কিন্তু হেরে গিয়ে বিদায় নিল তারা। শেষ হলো এই টুর্নামেন্টে জিসানের পথচলাও। ১০ ছক্কায় সেঞ্চুরিতে আসর শুরু করা ২০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান শেষ করলেন ৫ ছক্কায় ৩২ বলে ৬০ রান করে।
রাজশাহী বিভাগের বিদায় নিশ্চিত হয়েছিল আগেই। শেষ ম্যাচে তারা বিদায় করে নিল সিলেটকে। ব্যাটিংয়ে ৪৮ বলে ৭৮ রানের ইনিংসের পর চার ওভার আঁটসাঁট বোলিংয়ে একটি উইকেট নিয়ে ম্যাচের নায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
রাজশাহী টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল জয় দিয়ে, শেষও করল জয়ে। মাঝের পাঁচ ম্যাচে তাদের পরিণতি ছিল পরাজয়।
জাতীয় ক্রিকেট লিগ টি-টোয়েন্টিতে বৃহস্পতিবার সকালের আরেক ম্যাচ জিতে ঢাকা মেট্রো অব্যাহত রাখল তাদের অপ্রতিরোধ্য পথচলায়। সাত ম্যাচে তাদের জয় সাতটি। তাদের জয়ের ভিত গড়ে দেন ঘরোয়া ক্রিকেটের দীর্ঘদিনের দুই সেনানী শামসুর রহমান ও মার্শাল আইয়ুব।
এই ম্যাচ হেরে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল চট্টগ্রাম বিভাগের প্লেঅফে খেলা।
অলরাউন্ড শান্ত
চোটের কারণে বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যেতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। পুনবার্সন শেষে এই জাতীয় লিগ দিয়েই মাঠে ফেরেন তিনি। ফিরে প্রথম ম্যাচে করেছিলেন ৫৪ বলে ৮০। এরপর টানা তিন ম্যাচে ব্যর্থ। শেষটা করলেন ৬ চার ও ৫ ছক্কায় ৪৮ বলে ৭৮ করে। পরে বল হাতে চার ওভারে ১৯ রান দিয়ে তিনি শিকার করেন পিনাক ঘোষের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অধিনায়কের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ২৬ রানে জেতে রাজশাহী বিভাগ।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা রাজশাহী প্রথম দুই ওভারে কেবল সাত রান তুললেও পরে ঝড় তোলেন শান্ত ও হাবিবুর রহমান। পাওয়ার প্লের পরের চার ওভারে আসে ৫৫ রান।
ফর্মে থাকা হাবিবুর আউট হন দুটি করে চার ও ছক্কায় ১৪ বলে ২৫ রান করে। তিনে নেমে সেই ধারা ধরে রেখে সাব্বির হোসেন করেন ১৪ বলে ৩০!
শান্ত ফিফটিতে পা রাখেন ৩১ বলে। রাজশাহী একশ পেরিয়ে যায় নবম ওভারে।
শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়ের জুটির সময় ১৪ ওভার শেষে দলের রান দাঁড়ায় ২ উইকেটে ১৫২। রাজশাহীর দৃষ্টি তখন দুইশর বেশি রানে।
কিন্তু সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও ইবাদত হোসেনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে রানের রাশ টেনে ধরতে পারে সিলেট। হৃদয়কে (১৭ বলে ২১) বোল্ড করে জুটি ভাঙেন খালেদ।
এই পেসারের বলেই পরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন শান্ত। যদিও আউট হয়ে অসন্তুষ্ট দেখা যায় তাকে। ব্যাট মাটিতে লেগেছে বলে ইঙ্গিত করছিলেন তিনি।
শেষ ছয় ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে রাজশাহী তুলতে পারে কেবল ২৯ রান।
সিলেটের রান তাড়ায় ওপেনার তৌফিক খান তুষার ও তিনে নামা মুবিন আহমেদ দিশান দ্রুত আউট হলেও দলকে পথে রাখেন জিসান। ২৮ বলে ফিফটিতে পৌঁছে যান তিনি।
গোলাম কিবরিয়ার প্রথম বল যখন উড়িয়ে দেন তিনি ছক্কায়, ৮.১ ওভারে সিলেটের রান তখন ৯১।
কিন্তু ওই ওভারেই আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় জিসানের বিদায় আর সিলেটের উল্টোযাত্রার শুরুর।
পরের আর কোনো ব্যাটসম্যান সেভাবে ভালো করতে পারেননি। কেবল একটু জ্বলে ওঠার চেষ্টা করছিলেন পিনাক ঘোষ (২১ বলে ২৭)। টার্ন করা দারুণ ডেলিভারিতে তাকে থামান শান্ত। ১৮ রান করতে ২৮ বল খেলেন তোফায়েল আহমেদ।
আসাদুজ্জামান পায়েলের দারুণ বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত পরিষ্কার ব্যবধানেই জেতে রাজশাহী। টি-টোয়েন্টিতে আগের ১৬ ম্যাচের কোনোটিতে দুই উইকেটের বেশি নিতে না পারা পেসার এবার ২৪ রানে নেন ৪ উইকেট।
৭ ইনিংসে ২৮১ রান নিয়ে আসর শেষ করলেন জিসান, এখনও পর্যন্ত যা টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ। ২৫৯ রান নিয়ে দুইয়ে হাবিবুর রহমান সোহান, ২৪৮ রান মোহাম্মদ নাঈম শেখের।
আসরের সর্বোচ্চ ২২ ছক্কাও জিসানের। ১৭ ছক্কা নিয়ে দুইয়ে হাবিবুর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রাজশাহী বিভাগ: ২০ ওভারে ১৮১/৮ (শান্ত ৭৮, হাবিবুর ২৫, সাব্বির ৩০, হৃদয় ২১, শাকির ০, প্রিতম ১, কিবরিয়া ০, ফরহাদ রেজা ৪, নিহাদউজ্জামান ১০*, ওয়াসি ১*; ইবাদত ৪-০-২৯-২, নাবিল ৪-০-৩৪-০, খালেদ ৪-০-২৪-৩, তোফায়েল ৩-০-৩৫-২, রাব্বি ৩-০-৩৩-০, নাঈম সাকিব ২-০-২২-১ )।
সিলেট বিভাগ: ২০ ওভারে ১৫৫/৮ (তৌফিক ১০, জিসান ৬০, মুবিন ৯, পিনাক ২৭, তোফায়েল ১৮, রাব্বি ৮, ওয়াসিফ ০, নাঈম সাকিব ১২*, ইবাদত ০, খালেদ ২*; ফরহাদ রেজা ৩-০-৩০-১, পায়েল ৪-০-২৪-৪, নিহাদউজ্জামান ৪-০-৩৩-০, ওয়াসি ২-০-২৬-০, সাব্বির ২-০-১২-১, কিবরিয়া ১-০-৮-১, শান্ত ৪-০-১৯-১)।
ফল: রাজশাহী ২৬ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাজমুল হোসেন শান্ত।
ঢাকা মেট্রোর সাতে সাত, সুযোগ হারিয়ে অপেক্ষায় চট্টগ্রাম
জিতলেই প্লে অফ নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের। কিন্তু সম্ভাবনা জাগিয়েও পেরে উঠল না তারা। দুই অভিজ্ঞ শামসুর রহমান ও মার্শাল আইয়ুবের ফিফটির পর বোলারদের সম্মিলিত পারফরম্যান্সে অপ্রতিরোধ্য পথচলায় সাত ম্যাচের সব কটি জিতল ঢাকা মেট্রো।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার মাঠে ম্যাচটি ১৭ রানে জিতে নেয় ঢাকা মেট্রো।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ঢাকা মেট্রো শুরু করে প্রথম ওভারে তিন বাউন্ডারিতে। তবে ৬ বলে ১৩ করে পরের ওভারেই আউট হয়ে যান ইমরানউজ্জামান। তিনে নামা আনিসুল ইসলাম ইমন পাননি রানের দেখা।
শহিদুল ইসলামকে তিন বলের মধ্যে দুই চার ও এক ছক্কার পর ঢাকা মেট্রোর অধিনায়ক মোহাম্মদ নাঈম শেখ আউট হন নাঈম হাসানকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে (১৩ বলে ২২)।
৩৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে টালমাটাল দলকে থিতু করেন শামসুর ও মার্শাল। অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার ও দীর্ঘদিনের দুই বন্ধু চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ৯৬ রান।
মার্শালের ব্যাট থেকে আসে ৪২ বলে ৫১। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২৬ সেঞ্চুরিতে সাড়ে ৯ হাজারের বেশি রান করা ব্যাটসম্যানের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মাত্র দ্বিতীয় ফিফটি এটি। ৪৬ ম্যাচের ক্যারিয়ারে আগের ফিফটি করেছিলেন তিনি ২০১৩ সালের বাংলাদেশ গেমসে, ঢাকা মেট্রোর হয়েই করেছিলেন ৩৫ বলে ৫৩।
টুর্নামেন্টে আগের পাঁচ ম্যাচের চারটিতে বিশ ছুঁয়েও ফিফটি করতে না পারা শামসুর এবার ৪৮ বলে করেন ৫৬।
এই দুজনের বিদায়ের পর দ্রুত রান তোলার তাড়ায় ভালো করতে পারেননি কেউ। ২০ ওভারে ঢাকা মেট্রো তোলে ১৫৮।
চট্টগ্রামে রান তাড়ায় প্রথম বলেই বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসানকে স্লগ সুইপ করে সীমানা ধরা পড়েন মুমিনুল হক। তবে তিনে নামা সাদিকুর রহমানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ৫০ রান তুলে ফেলে চট্টগ্রাম।
এরপরই ম্যাচের মোড় পাল্টে দেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। ১৭ রান করা মাহমুদুল হাসান জয়কে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন এই লেগ স্পিনার। জাতীয় দলের বাইরে থাকা লেগ স্পিনার পরে ফিরিয়ে দেন ২৭ বলে ৪৪ রান করা সাদিকুরকেও।
এরপর শাহাদাত হোসেন, শহিদুল ইসলামদের ব্যর্থতার মধ্যে দলকে লড়াইয়ে রাখেন ইয়াসির আলি চৌধুরি। তবে ৩১ বলে ৪৬ করে শেষের আগের ওভারে অধিনায়ক রান আউট হওয়ায় শেষ যায় চট্টগ্রামের আশাও।
আগেই প্লে অফ নিশ্চিত করা ঢাকা মোট্রো টানা সাত হয়ে নিশ্চিত করল প্রাথমিক পর্বের শীর্ষস্থানো। অন্যদের ফলাফলের জটিল সমীকরণের অপেক্ষায় চট্টগ্রাম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা মেট্রো : ২০ ওভারে ১৫৮/৮ (ইমরানউজ্জামান ১৩, নাঈম শেখ ২২, আনিসুল ০, শামসুর ৫৬, মার্শাল ৫১, আমিনুল ৭, আবু হায়দার ১, আল আমিন জুনিয়র ১*, রকিবুল ০, আলিস ১*; ফাহাদ ৪-০-৩২-২, নাঈম ৪-০-২৩-২, শহিদুল ৪-০-২৮-১, শামীম ৩-০-২৪-০, শরিফ ৪-০-৩৯-৩, মুমিনুল ১-০-৮-০)।
চট্টগ্রাম বিভাগ: ২০ ওভারে ১৪১/৯ (মুমিনুল ০, জয় ১৭, সাদিকুর ৪৪, শাহাদাত ৫, ইয়াসির ৪৬, শহিদুল ৪, সাব্বির ৫, নাঈম ৪, শরিফ ০, শামীম ৯*, ফাহাদ ২*; রকিবুল ৪-০-২৯-২, আলিস ৪-০-২৪-১, আরাফাত সানি ৪-০-৩৪-২, আবু হায়দার ৪-০-২৫-১, আমিনুল ২-০-১২-২, আনিসুল ২-০-১৩-০ )।
ফল: ঢাকা মেট্রো ১৭ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: শামসুর রহমান।