‘এখতিয়ারবহির্ভূত’ ছুটি: মনিপুর স্কুলের সভাপতিকে ঢাকা বোর্ডের শোকজ

অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেনকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হবে না, তা তিন দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে নোটিসে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2023, 04:12 AM
Updated : 10 March 2023, 04:12 AM

রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ‘অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটি’র সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেনের ঘোষিত পাঁচ দিনের ছুটিকে ‘এখতিয়ারবহির্ভূত’ ঘোষণা করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এভাবে ছুটির ঘোষণা সরকারের জারি করা নির্দেশনা লঙ্ঘন জানিয়ে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের স্বাক্ষরে দেওয়া এই কারণ দর্শাও নোটিস বৃহস্পতিবার বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

‘এখতিয়ারবহির্ভূত’ভাবে ছুটি ঘোষণা এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে সভাপতিকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হবে না, সে বিষয়ে তিন দিনের মধ্যে দেলোয়ার হোসেনের জবাব চাওয়া হয়েছে।

নোটিসে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুলের জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক মো. জাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দিতে ‘অবহেলা’ করেন মনিপুর স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তার স্বাক্ষরে ৭ মার্চ জারি করা নোটিসে ৯ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত শ্রেণিকার্যক্রমসহ সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জারি করা সরকারি ছুটির তালিকার প্রজ্ঞাপনের লঙ্ঘন।

“উক্ত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান প্রধানের সংরক্ষিত ছুটি তিন দিন। সভাপতি কর্তৃক পাঁচ দিন ছুটি ঘোষণার বিষয়টি এখতিয়ার বহির্ভূত ও সরকার কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা অমান্যের শামিল।”

এ কে এম দেলোয়ার হোসেনকে পাঠানো নোটিসে বলা হয়, “উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক নির্দেশিত নির্দেশনা পালনে অনীহা এবং সরকারের জারিকৃত নির্দেশনা অমান্যের কারণে অ্যাডহক কমিটির সভাপতিকে প্রবিধান অনুযায়ী কেন অব্যাহতি প্রদান করা হবে না সে বিষয়ে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে কারণ ব্যাখ্যাপূর্বক ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের দপ্তরে জমা দিতে বলা হচ্ছে।”

বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, একাধিক ক্যাম্পাসে বিদ্যালয়টিতে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে এই শিক্ষার্থীরা এখন জিম্মি দশায় পড়েছে।

একদিকে আছেন প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেনের অনুসারীরা, অন্যদিকে নতুন দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেনের সমর্থকরা। প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন দায়িত্ব ছাড়তে না চাওয়ায় বিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর মধ্যে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ছুটির ঘোষণা আসে।

গত মঙ্গলবার এক নোটিসে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ১৫ মার্চ পর্যন্ত ছুটির নোটিস দেন। এরপর বুধবার বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন আলাদা নোটিশে ১২ মার্চ থেকে বিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দেন।

পাল্টাপাল্টি এই নোটিসে দুশ্চিন্তায় পড়েন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। একজন অভিভাবক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঠিক বুঝতে পারছি না বাচ্চাকে ১২ তারিখ স্কুলে পাঠাবো কী না। যদি আবার গ্যাঞ্জাম হয়।”

অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটি সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের জারি করা ৭ মার্চের নোটিসে বলা হয়, “গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সাবেক জনৈক বরখাস্ত শিক্ষকের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন বহিরাগত প্রবেশ করে অধ্যক্ষ মহোদয়ের নামফলক ভেঙে চুরমার করে, কক্ষের তালা ভেঙে প্রবেশ করে, কক্ষ তছনছ করে।

“বহিরাগতরা দুই-তিন ধরে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে। সাধারণ সমাবেশের সময় প্রখর রোদে শিক্ষার্থীদের মাঠে দাঁড় করিয়ে মাইকে উসকানিমূলক / কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয় এবং ক্লাস চলাকালীন সময়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি/ হইচই করে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।”

এমন পরিস্থিতিতে তিনি ১৫ মার্চ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন ওই নোটিসে।

বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক রাশেদ কাঞ্চন বলছেন, মূল বিষয়টি ঘটেছে বিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেনের নিয়োগ নিয়ে। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) অধ্যক্ষ পদে ফরহাদ হোসনের নিয়োগ বিধিসম্মত নয় বলে জাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়, ম্যানেজিং কমিটিকে দায়িত্বও বুঝিয়ে দিতে বলে।

“কিন্তু ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে গত ৬ মার্চ বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে অন্য শিক্ষকদের উপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন জাকির হোসেন। সেদিন যারা জাকির হোসেনের সঙ্গে ছিলেন এখন তাদের নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে।”

রাশেদ কাঞ্চনের ভাষ্য, বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক পর্যন্ত এমপিওভুক্ত, তাই এখানে অধ্যক্ষ পদ থাকতে পারে না বলে মাউশির অভিমত।

এই শিক্ষক বলেন, পদ বুঝে নিয়ে বুধবার ছুটির নোটিস কমিয়ে ১২ তারিখ বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত দেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককের জারি করা নোটিসে অ্যাডহক কমিটির সভাপতির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে আবার বিধি বহির্ভুতও বলা হয়েছে।

সেই নোটিসে বলা হয়, “অ্যডহক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় তার এই বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। তবে বিধিবহির্ভূতভাবে ঘোষিত ছুটির নোটিসটি প্রত্যাহার করে প্রধান শিক্ষকের সংরক্ষিত তিন দিনের ছুটি থেকে শুধু বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করছি। আগামী রোববার (১২ মার্চ) থেকে যথারীতি শ্রেণী ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চলমান থাকবে।”

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নোটিসে বলা হয়, “এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে সভাপতি মহোদয়ের সহযোগিতা কামনা করছি। এছাড়া সাবেক প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন যেন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও প্রশাসনিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে না পারেন, নোটিস দিয়ে কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারেন, প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ব্যবহার করতে না পারেন তা নিশ্চিত করতে সভাপতি মহোদয় ও সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি।”

এ বিষয়ে কথা বলতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেনের ফোনে সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।