৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবনের জন্য।
Published : 26 Jun 2024, 05:54 PM
নতুন অর্থবছরে ৯৪৫ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ২০ কোটি ৫ লাখ টাকা।
বিদায়ী অর্থবছরে গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল ১৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে আগামী অর্থবছরে গবেষণায় বাজেট বাড়ছে ৫ কোটি টাকা।
এই অর্থ গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত নয় জানিয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের গবেষণা বাবদ ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর হতে ৫ কোটি টাকা বেশি। উদ্ভাবনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫ লাখ টাকা।
“বর্তমান যুগে টিকে থাকতে হলে নতুন নতুন উদ্ভাবন প্রয়োজন। প্রচুর অর্থ ব্যয় ব্যতীত এ ব্যাপারে সাফল্যমণ্ডিত হওয়া দিবাস্বপ্ন মাত্র। গবেষণার জন্য ২০ কোটি টাকা পর্যাপ্ত নয়।”
কোষাধ্যক্ষ বলেন, “বিশ্বাবিদ্যালয়ে ২ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত আছেন। প্রত্যেকের জন্য গড়ে গবেষণা বাবদ বরাদ্দ ১ লাখ টাকা। এই অর্থ দিয়ে বড় ধরনের মৌলিক গবেষণা আদৌ কি সম্ভব?
“আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং নিয়ে অনেক আলোচনা শুনতে পাই। এই র্যাংকিং উন্নত করতে হলে প্রয়োজন গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা। এই খাতে বাজেট বরাদ্দ বহুলাংশে বৃদ্ধি করলে আমরা কাঙ্ক্ষিত ফল পাব বলে আমার বিশ্বাস।”
বুধবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে এই বাজেট পেশ করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে কোষাধ্যক্ষ এ বাজেট পেশ করেন।
প্রস্তাবিত বাজেটের ৮০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা অনুদান হিসেবে মিলবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খাত থেকে আয় ধরা হয়েছে ৯০ কোটি টাকা। তাতে ঘাটতি থাকবে ৫০ কোটি ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, যা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৫.৩৭%।
প্রস্তাবিত বাজেটের ৬৩৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা, অর্থাৎ মোট বাজেটের ৬৭ শতাংশই শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ ব্যয় হবে।
নতুন অর্থবছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যাপ্ত বরাদ্দ পায়নি জানিয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের কাছে চাহিদা ছিল ১১৩১ কোটি ১৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ইউজিসি বরাদ্দ দিয়েছে মাত্র ৮০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় বরাদ্দের পরিমাণ ৩২৬ কোটি ৭৬ লাখ ১৪ হাজার টাকা কম।
“ইউজিসি আমাদেরকে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের তুলনায় কম বরাদ্দ দিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়কে কাল্পনিকভাবে বেশি করে ধরে দিয়েছে।”
আগের অর্থবছরে বাজেট ছিল ৯১৩ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। পরে ৫৯ কোটি ১৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে সংশোধিত বাজেট দাঁড়ায় ৯৭৩ কোটি ৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।
এর মধ্যে ইউজিসির অনুদান হিসাবে ৭৭৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং নিজস্ব আয় হিসাবে ৯০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
অধ্যাপক মমতাজ বলেন, “বর্তমানে বিভিন্ন বিভাগে পূর্বের তুলনায় কম সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। ছাত্রদের টিউশন ফি বৃদ্ধি করা হয়নি। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে নিজস্ব আয় হিসেবে দেখানো হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা।
“বছর শেষে সংশোধিত বাজেটে দেখানো হল ৯০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে তা আরো বৃদ্ধি করে দেখানো হল ৯৪ কোটি টাকা। আয়ের এই প্রবৃদ্ধি ইউজিসি কিভাবে নির্ণয় করলেন তা আমাদের নিকট বোধগম্য নয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, “প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১০০ বছরের বেশি সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানবিক, মৌলিক ও প্রায়োগিক শিক্ষার সমন্বয়ে এ অঞ্চলে উচ্চশিক্ষা বিস্তার করে আসছে। এ পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ৩৩ লাখ শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষা প্রদান করেছে।
“বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক- দেশের সর্বপ্রাচীন এ বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় শতকে পদার্পণ করেছে। নতুন শতকের চাহিদা অনুযায়ী এই বিদ্যাপীঠের রূপান্তর এখন সময়ের দাবি।”