বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় তার রুমমেট মো. মিজানুর রহমান, আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং এজাহারভুক্ত আসামি হোসেন মোহাম্মদ তোহাকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
Published : 10 Oct 2019, 04:39 PM
এনিয়ে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হল, যাদের মধ্যে চারজনের নাম আবরারের বাবার করা মামলার এজাহারে ছিল না।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত বুয়েট ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সন্দেহভাজন হিসেবে তার নাম আসার পরও মামলায় তার নাম না থাকা নিয়ে গত দুদিন ধরেই নানা আলোচনা চলছিল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে অমিতকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বুয়েটের শেরে বাংলা হলের যে ২০১১ নম্বর কক্ষে গত রোববার রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালিয়ে আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়, সেই কক্ষেরই আবাসিক ছাত্র অমিত।
সেদিন আবরারকে ওই কক্ষে ডেকে নেওয়ার আগে অমিত মেসেঞ্জারে আবরারের খোঁজ করেন তার এক সহপাঠীর কাছে, যার স্ক্রিনশট পরে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার থাকতেন শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে। তার রুমমেট মো. মিজানকেও বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওই কক্ষ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মিজান বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আবরারের বাবার করা হত্যা মামলায় ১৯ জনের মধ্যে মিজানেরও নাম ছিল না।
ওই মামলার এজাহারের ১১ নম্বর আসামি হোসেন মোহাম্মদ তোহাকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে গাজীপুরের মাওনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান।
যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তোহা থাকতেন শেরোংলা হলের ২১১ নম্বর কক্ষে। তিনিও হল শাখা ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য।
আবরারের বাবা কুষ্টিয়াবাসী অবসরপ্রাপ্ত ব্র্যাককর্মী বরকত উল্লাহ বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
>> মামলার আসামিরা- বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশারফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মুজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুল ইসলাম (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), মোয়াজ (সিএসই, ১৭ ব্যাচ), শাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ) ।
>> এদের মধ্যে মেহেদী হাসান রাসেল, মুহতাসিম, মেহেদী হাসান রবিন, অনিক, মেফতাহুল, মনিরুজ্জামান, ইফতি, মুনতাসির, এহতেশামুল ও মুজাহিদুরকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ।
>> ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত ১১ জনের মধ্যে একজনের নাম এজাহারে কিংবা গ্রেপ্তারের তালিকায় নেই। তিনি বুয়েট ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ)।
>> এর বাইরে এজাহারে নাম না থাকা চারজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তারা হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), অমিত সাহা (সিই), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোসের্স, ১৬তম ব্যাচ) ও শামসুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং)।
>> এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে মাজেদুল, জিসান, শামীম, শাদাত, এহতেশামুল, মোর্শেদ ও মোয়াজ এখনও পলাতক।
বুয়েট ছাত্রলীগের কয়েকজন গত রোববার রাতে আবরারকে ডেকে নিয়ে যায় শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে। ফেইসবুকে মন্তব্যের সূত্র ধরে শিবির সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তাকে লাঠি ও ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।
বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই যে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তা উঠে এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনটির নিজস্ব তদন্তেও।
হত্যাকাণ্ডের পর সোমবারই মামলার ১০ আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয় আরও তিনজনকে। ওই ১৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইতোমধ্যে ৫ দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
‘ছাত্রলীগ করলেও ছাড় নেই’
আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে বৃহস্পতিবার ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম বলেন, “এজাহারে নাম না থাকলেও তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। সে কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, প্রথম দফায় গ্রেপ্তার হওয়া ১০ বুয়েট শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং ‘তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে’ ওই হত্যাকাণ্ডে তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। যাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, “কে কোন দলের সাথে জড়িত, পদ-পদবী কী, তা আইনে দেখার সুযোগ নেই, এটি দেখাও হচ্ছে না। পাশাপাশি সামাজিক অবস্থান তদন্তের ক্ষেত্রে যেন প্রভাব বিস্তার না করে, সে ব্যাপারে চৌকস টিমগুলো কাজ করছে।”
আবরার হত্যার প্রতিবাদে বুয়েট শিক্ষার্থীরা গত চার দিন ধরে আন্দোলনে রয়েছে। মামলার অভিযোগপত্র না দেখা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণাও রয়েছে তাদের।
আবরার হত্যার বিষয়ে কোনো তথ্য থাকলেও তা পুলিশকে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মনিরুল বলেন, “আবরার হত্যার চার্জশিট যখন বিচারে উঠবে, তখন সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো আবার নতুনভাবে উপস্থাপিত হবে। বিচারক নিরপেক্ষভাবে সেগুলো বিচার করবেন, তখন এই সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার কাজ সম্পন্ন হবে। কারও কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা আমাদের জানান।”
পলাতক আসাসিদের গ্রেপ্তারেও অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।
“ঘটনার সাথে যারাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকুক, প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে।”
আরও খবর