বুধবার বিকালে তিনি ফাহাদের জন্মস্থান কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামে যান।
প্রথমে তিনি ফাহাদের কবর জিয়ারত করেন। এরপর অদূরে তাদের বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এলাকাবাসীর ক্ষোভের মুখে পড়ে তিনি বাড়ির সামনে থেকে ফিরে আসেন।
এ সময় সাংবাদিকদের সামনে পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতাকে লাঠিপেটা করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিকাল পৌনে ৫টার দিকে অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ফাহাদের গ্রাম রায়ডাঙ্গার ঈদগাহ মাঠে পৌঁছান। সেখানে ফাহাদের দাদা আব্দুল গফুর, বাবা বরকত উল্লাহ ও ভাই ফায়াজসহ নিহত ফাহাদের কবর জিয়ারত করেন এবং স্বজনদের সান্ত্বনা দেন।
গাড়ি থেকে নামার পর উপাচার্য প্রথমে আবরার ফাহাদের বৃদ্ধ দাদা আব্দুল গফুরকে জড়িয়ে ধরে সমবেদনা জানান। পরে ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ এবং ছোট ভাই ফায়াজের সঙ্গে কথা বলেন।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান এ সময় ফায়াজকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পরে বুয়েট ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে মুখে ভিসি সাইফুল বলেন, “আমার সাথে আবরারের মামার কথা হয়েছিল। আমি তাদের সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমার সাথে প্রভোস্টসহ অনেকেই ছিল তাদের বের করতে পারছিলাম না।
“আমাকে সব ঊর্ধ্বতন মহলকে জানাতে হয়। মুম্বাইতে থাকা শিক্ষা উপমন্ত্রী জানেন, আমি তার সাথে সারাদিন যোগাযোগ করছি। আমি বাইরে যেয়ে তার সাথে যোগাযোগ করি। আমার লাইনটা কাজ করছিল না। পরে এসে দেখি জানাজা নামাজ শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং আমার তরফ থেকে কোনো রকম ত্রুটি ছিল না।”
পদত্যাগ দাবির পরিপেক্ষিতে ভিসি সাইফুল বলেন, “আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমার পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। গত ৩৬ ঘণ্টা আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম। প্রতিমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করার জন্যই আমি জানাজা নামাজে আসতে পারিনি। হল প্রভোস্টরা রাত ৩টা থেকে কাজ করেছেন; আমি রাত ১টার দিকে ওদিক থেকে ঘুরে এসেছি। তখন আমি কিছু তো জানি না, সেখানে কিছু হচ্ছে।”
নির্যাতনের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা তদন্ত করে এর ব্যবস্থা নিয়েছি।”
ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি এর সঙ্গে একমত। ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়েছি। শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি আসলে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপাচার্য ফাহাদের বাড়ি পৌঁছানোর আগে কুষ্টিয়া পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি বুঝে গোটা গ্রামে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করে। বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে বুয়েট উপচার্য স্থান ত্যাগ করার পর পুলিশ জনতার উপর চড়াও হয়। এক নারী বিক্ষোভকারীরকে লাঠিপেটা করে আরেক নারী পুলিশ।
এদিকে, রায়ডাঙ্গা গ্রামে গিয়েও ফাহাদের বাড়ি না ঢুকে উপাচার্যের ফিরে যাওয়ারও সমালোচনা করেন স্বজনরা।
ফাহাদের বাবা বলেন, “কী লাভ হলো? কিছুই তো হল না? ফাহাদ হত্যার সঠিক বিচারসহ আমাদেরও তো কিছু আবেদন নিবেদন ছিল। সেগুলি তো তিনি না শুনেই চলে গেলেন। উনার এমন আগমনে আমরা হতাশ হয়েছি।”
ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন বলেন, “আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। আমার সোনার টুকরো জীবন্ত ছেলেটাকে ওরা এভাবে মেরে ফেলল; তার কী করলেন তিনি? উনি আসলেনই বা কেন আর এভাবে দেখা না করে চলে গেলেন কেন? আমার এই কষ্ট ব্যথা আর কাকেই বা জানাব? আমি কিছু চাই না আমার বুক যারা খালি করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই। বিচার চাই।”
শেষে ফাহাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত হয়।
ফাহাদ হত্যার ঘটনায় এলাকাবসী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ সুপারের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা।
এর জবাবে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এস এম তানভির আরাফাত বলেন, “এটা কী ধরনের কথা? ফাহাদ কুষ্টিয়ার ছেলে; ওর জন্য আমরা নিজেরাও ব্যথিত। ফাহাদ হত্যার বিচার দাবি করবে কুষ্টিয়াবাসী এতে পুলিশের বাধা দেওয়ার কী আছে?”
গত রোববার সন্ধ্যায় বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ডেকে নিয়ে যায় হলের কিছু ছাত্রলীগ নেতা। শিবির সন্দেহে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতনের এক পর্যায়ে গভীর রাতে হলেই তার মৃত্যু হয়।